কমিটি নেই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির। দু’বছর আগে এ কমিটি ভেঙে দেয়ার পর লন্ডনে চিকিৎসারত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান চার নেতাকে তলব করেছিলেন। তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, শীঘ্রই নতুন কমিটির অনুমোদন দেয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিটির দেখা মেলেনি। এরফলে ৫ খণ্ডে বিভক্ত হয়ে কাজ চলছে বিএনপির। যদিও গত দু’বছরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দু’বার যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন।
বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাদেক হোসেন খোকা বেশ ক’মাস ধরে নিউইয়র্কে। বছরখানেক অবস্থান শেষে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপির আরেক সহ-সভাপতি ড. ওসমান ফারুক। আন্তর্জাতিক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন এবং নাজিমউদ্দিন আলম অবস্থান করছেন নিউইয়র্কেই। রয়েছেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম এ সালামও। তবু কেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি হচ্ছে না-এ প্রশ্ন নেতা-কর্মীদের। শুধু তাই নয়, নতুন কমিটির প্রত্যাশায় সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন লন্ডনে গিয়েছিলেন তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যে। কিন্তু কমিটির ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেননি কেউই।
গতকাল সোমবার লন্ডন থেকে ফিরেছেন বিএনপির আরেক নেতা মোহাম্মদউল্লাহ মামুন। নতুন কমিটির কোন তথ্য নিয়ে আসতে পারেননি। তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিএনপির কর্মকাণ্ডে মার্কিন রাজনীতিকদের সমর্থন জোরালো করার কর্মকাণ্ড চালাতে। বিশেষ করে হিলারি ক্লনিটনের সমর্থনে জোরালো ভূমিকায় অবতীর্ণ হবার আহ্বান জানানো হয়েছে সকলকে। প্রয়োজনে হিলারির নির্বাচনী তহবিলে অর্থ প্রদানের ওপরও জোর দেয়া হয়েছে বলে মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন উল্লেখ করেন।
এদিকে, সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা সম্প্রতি লন্ডন হয়ে নিউইয়র্কে এসেই নতুন কমিটি গঠনের তৎপরতা শুরু করেছেন। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটির চেয়ে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য বিএনপির কমিটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারেক রহমান তাকে কমিটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন-এমন কথাও তিনি নেতা-কর্মীদের বলছেন। ফ্লোরিডা, মিশিগান, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ম্যাসেচুসেটস, টেক্সাস, ম্যারিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, জর্জিয়া, কানেকটিকাট প্রভৃতি অঙ্গরাজ্য থেকে অনেক নেতাকর্মীরা ওই নেতার বাসায় গিয়ে দেখা করছেন। তবে নিউইয়র্কে বসবাসরতদের কেউই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতৃত্ব পেতে আগ্রহ দেখায়নি। তারা মনে করছেন, ‘অঙ্গরাজ্য কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি বানানোর টোপ দিয়ে কিছু হাতিয়ে নেয়ার মতলবে এমন পদক্ষেপ অবলম্বন করা হয়েছে যা মেনে নেয়া যায় ন। এছাড়া অঙ্গরাজ্য কমিটি করার দায়িত্ব হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি হলেই অঙ্গরাজ্য কমিটির পথ সুগম হবে।’
কেন্দ্রীয় কমিটির ওই নেতা অঙ্গরাজ্য বিএনপির কমিটির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সভাপতি ও সেক্রেটারি হতে আগ্রহীদেরকে নাকি এটাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, লাখ ডলার লাগবে সভাপতি পদের জন্যে। আর ৫০ হাজার ডলার লাগবে সেক্রেটারি হতে চাইলে। এ অর্থ ব্যয় করা হবে মার্কিন ধারায় বিএনপির পক্ষে লবিংয়ের জন্যে। তারেক রহমানের নির্দেশেই নাকি এমন প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
‘হাওয়া ভবনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেক নজরে নেই ওই নেতা’ এমন মন্তব্য করছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কেউ কেউ। এখন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির পদ-পদবি নিলামে ওঠার তথ্য সর্বত্র প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। এমনকি সোমবার প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকায় তা লিড নিউজ হিসেবে স্থান পেয়েছে। এরপরই সমগ্র কম্যুনিটিতে নানা গুঞ্জন উঠেছে বিএনপির নেতৃত্ব সম্পর্কে। ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্যে নিঃস্বার্থভাবে কর্মরতরা।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমানের রোগ মুক্তির জন্যে জ্যাকসন হাইটসে অনুষ্ঠিত দোয়া-মাহফিলে অংশ নেন বিএনপি ও যুবদলের নেতৃবৃন্দ। সেখান থেকে তারা খাবার বাড়ি রেস্টুরেন্টের মিলনায়তনে তাৎক্ষণিক বৈঠকে মিলিত হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির ওই নেতার এহেন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। সেখান থেকে কমিটি গঠনের নামে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনের আয়োজকদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ সম্রাট, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি গিয়াস আহমেদ,আলহাজ সোলায়মান ভূইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম এবং বাকির আযাদ, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক এম এ বাতিন প্রমুখ। তারা এনআরবি নিউজের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘১/১১ পরবর্তী পরিস্থিতির সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমরা নানা কর্মসূচিতে নিয়োজিত রয়েছি। দু’বছর ধরে কমিটি না থাকলেও আমরা পদ-পদবির তোয়াক্কা না করে দলের স্বার্থে মাঠে রয়েছি। অথচ আমাদের নিঃস্বার্থ ত্যাগের কোনো মূল্যায়ন না করে নগদ অর্থের বিনিময়ে নতুন কমিটির প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে। এমন কর্মকাণ্ডে বিএনপির সাংগঠনিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পদ-পদবি বিক্রির এহেন তৎপরতা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তারা