মহান বিজয়ের মাস শুরু

ঢাকা: আজ ১ ডিসেম্বর। শুরু হয়ে গেল মহান বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম, লাখ লাখ প্রাণ ও দু’লাখের মতো মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার সাক্ষর ডিসেম্বর।

যুগ যুগ ধরে নানা কায়দায় শোষণ-বঞ্চনার শিকার বাঙালিরা এ ডিসেম্বর মাসেই বিভীষিকামুক্ত হয়ে নব আনন্দে জেগে ওঠে। ২৪ বছরের ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের এই মাসে বাঙালি চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হয়। সেই থেকে ডিসেম্বর মানেই বাঙালির আনন্দের মাস। ডিসেম্বর মানেই বাঙালির অর্জনের মাস।

মহান এই মাসে বাঙালির ঘরে ঘরে গৌরবের রেশ ছড়িয়ে পড়ে। আর এই রেশ বাঙালিকে নতুন করে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস জোগায়।

বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এবারের বিজয়ের মাস পালিত হবে।

বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ট্রতম ঘটনা হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙ্গালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক রাজনৈতিক স্বপ্ন সাধ পূরণ হয় এ মাসে।

বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত চুড়ান্ত বিজয় এ মাসের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়। স্বাধীন জাতি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালিরা। অর্জন করে নিজস্ব ভূ-খন্ড আর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা।

ভাষার ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল ,এক রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় এ দিনে।

বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নপূরণ হবার পাশাপাশি বহু তরতাজা প্রাণ বিসর্জন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই অর্জন হওয়ায় বেদনাবিঁধূর এক শোকগাঁথার মাসও এই ডিসেম্বর।

এ মাসেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর আল শামসদের সহযোগিতায় দেশের মেধা, শ্রেষ্ঠ সন্তান-বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। সমগ্র জাতিকে মেধাহীন করে দেয়ার এধরনের ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের দ্বিতীয় কোন নজির বিশ্বে নেই।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর জল,স্থল আর আকাশপথে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে বর্বর পাক-হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর চারদিক থেকে ভেসে আসতে থাকে।

এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। যেখান থেকে ৭ মার্চ মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,’ বলে স্বাধীনতার ডাক দেন, সেখানেই পরাজয়ের দলিলে স্বাক্ষর করেন পাক জেনারেল নিয়াজী। এর মধ্যদিয়ে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। আর জাতি অর্জন করে হাজার বছরের স্বপ্নের স্বাধীনতা।

মহান এ বিজয়ের মাস উদযাপনে জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। বিজয়ের মাসের প্রথম দিনেই বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে।

এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিজয়ের মাসকে স্বাগত জানিয়ে সমাবেশ, মানববন্ধন, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, বিজয় শোভাযাত্রা, মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন ইত্যাদি।

মুক্তিযোদ্ধা দিবস বাস্তবায়ন পরিষদ আজ সকাল ১০টায় বিজয়ের মাসের প্রথম প্রহরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনীতে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করবে।

‘যুদ্ধাপরাধী মুক্ত বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার-সদস্যবৃন্দের অংশগ্রহণে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে অপরাজেয় বাংলা থেকে বিজয় শোভাযাত্রা বের হবে। শোভাযাত্রাটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা চত্বরে গিয়ে শেষ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.