আসুন রাজনীতির কথা বলি

আসুন রাজনীতির কথা বলি। কোন দেশের রাজনীতি? বাংলাদেশের রাজনীতি। কথা বলার আগে জানতে হবে আপনি কোথায় আছেন? সরকারী প্রতিষ্টানে চাকুরী করেন? তাহলে আপনি যে সরকার আছে তার বিরুদ্ধে কিছু বলবেন না। বলেও কোন লাভ নেই। আপনার প্রশ্ন — বলতে পারেন বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলটি ভাল? কেউ ভাল না। সবাই একই গোয়ালের গরু। তাইলে? একজন সাধারণ সচেতন নাগরিক হিসাবে আপনার কি কি দায়িত্ব আছে? আপনার দায়িত্ব সরকারের চাকুরি করা, বেতন পেয়ে বাজারে যেয়ে ভাল ভাল খাবার কেনা, বাসায় ফিরে আপনার কাজের বেটির রান্না খাওয়া তারপর ভারতের টিভি সিরিয়াল দেখে ফেসবুকে সেলফি পোস্ট করে ঘুমিয়ে যাওয়া। জীবন শেষ।

আপনি নীতি কথাও বলেন। সাড়া দেশে নৈতিকতার চরম অবক্ষয়ের মাঝে আপনি ঠিকই নীতিকথাগুলো খুব যত্ন করে লুকিয়ে রেখেছেন । মাঝে মাঝে সেগুলো বের করে চমক সৃষ্টি করেন আপনার পরিচিত মহলে। কিছু লোকের সমালোচনা আপনি করবেননা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিছু মানুষ আপনার আদর্শ। আপনার আদর্শের মানুষজনের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আপনি তোয়াক্কা করেন না। তারা অতীতে কি করেছে সেটা বড় বিষয় না। তারা এখন আপনাকে কিভাবে প্রভাবিত করছে সেটাই বড় বিষয়। বা তাদের ভাল বললে আপনি কি কি সুযোগ সুবিধা বা আত্মতৃপ্তি বা নিরাপত্তা পেতে পারেন বা মানসিকভাবে নিজে নিরাপদ বোধ করতে পারেন সেটাই বড় বিষয়। আপনি নিজের চারিদিকে এক অদ্ভুত বেষ্টনীর সৃষ্টি করে রেখেছেন। সেটাই আপনার বর্ম। আপনার টিকে থাকার টিকা। এন্টি ভাইরাস। সেদিন আপনার পাশের বাসার ষাট বছরের এক বৃদ্ধ বন্দুক যুদ্ধে মারা গেছে। আপনি এটা নিয়া মাথা ঘামান না। আপনার নৈতিকতা প্রশ্ন করেনা এই ষাট বছরের বৃদ্ধের কাছে কত গুলো বন্দুক ছিল। বা একটাও বন্দুক্ক ছিল কিনা। সে আদৌ বন্দুক কখনো স্পর্শ করেছে কিনা বা যখন সে বন্দুক যুদ্ধে মারা যায় তখন যুদ্ধের অন্যপ্রান্তের সৈনিকদের উর্দিতে গুলি তো দূর বাতাসেও একটু এলোমেলো হয়েছিল কিনা। এই বৃদ্ধ সম্পর্কে চিন্তা করার সময় নেই আপনার। আপনি হাটতে বেড়িয়ে গেলেন। নতুন একটা আমেরিকান ফ্রাঞ্চাইজে যেয়ে বসলেন। বার্গারের অর্ডার দিলেন। এটা দারুন সুস্বাদু। আপনার টেবিলের পাশে একটা জানালা। সেখান থেকে দূরে রাস্তা ওপারে একটা গার্বেজ বিনে গার্বেজ উপচে পড়ছে। সেখানে কতগুলো শিশু ও কুকুরে খাবার খাচ্ছে। আপনি এগুলো দেখে অভ্যস্ত। এটাই নিয়ম। এই শিশুর জন্য আপনার করনীয় কিছু নেই। এটা সরকারের কাজ । সরকার অনেক করেছে। এত জনবহুল দেশে কতজনের জন্য করবে?

আজ শুক্রবার। আপনি জুম্মা পড়তে যাবেন। আপনি কখনও জুম্মা মিস করেন না। হাজার হলেও আপনি মুসলমান। জুম্মার ফজিলতই আলাদা। আপনি ইহকালেও ভাল আছেন পরকালেও ভাল থাকবেন। আপনি কোরআন পাঠ করেছেন আরবীতে তাই তার অর্থ জানেননা । জানার দরকারও মনে করেন না। তবে মসজিদে হুজুরের নিজের খেয়াল খুশীমত খুদবা শুনেছেন। হুজুরের সাথে আপনার মনের একটা মিল আছে। তাই সব কিছুই ঠিকঠাক চলছে। আপনি বিশ্বাস করেন আপনার এই শর্টকাট ধর্মপালন আপনার পরকাল ঝরঝরে করবে। আর আপনার এই লং কাট জীবন পরিক্রমা যুগ যুগ ধরে আপনাকে সব ধরনের বিপদ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বা রাখছে বা রাখবে।

আপনার জন্মের আগে বাংলাদেশে নাকি একবার যুদ্ধ হয় আপনি শুনেছেন। আপনার পাশের বাসার বৃদ্ধ যিনি সেদিন বন্দুক যুদ্ধে মারা গেছেন সেই রকম যুদ্ধ আরকি। শুনেছেন আপনার বাবাও নাকি মুক্তিযুদ্ধে গেছিলেন। যুদ্ধ করেননি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সনদ আছে। ওটা রাখতে হয়। ওটা দেখিয়েই আপনার বাবা সরকারী চাকুরী হাতান এখন আপনি সেই চাকুরীর সুবাদেই সরকারী চাকুরী করছেন। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা বড় কথা নয় । যখন দরকার যুদ্ধ সম্পর্কে অগুনঝরা ভাষন দেওয়াই বড় কথা। আপনি যাদের আদর্শ মনে করেন তাদেরকে এই যুদ্ধের সেনাপতি হিসাবে বসিয়ে ভাবতে ভাল লাগে যে এরাই আসলে যুদ্ধ করে এই দেশকে স্বাধীন করেছিল। আপনার আদর্শের ব্যক্তিরা যুদ্ধের সময় কে কোথায় ছিল বা কি করেছিল সেটা আপনার জানার দরকার নেই। যুদ্ধ তো শেষ। যুদ্ধ তো অনেক কম সময়ে টিকে ছিল। খুব শর্টকাট যুদ্ধ । আপনার ইহকাল আর পরকালের মত। শর্টকাটে সব সারা। সুপরিকল্পিতভাবে যুদ্ধ হয়েছে। রক্তপাতহীনভাবে নেতারা সবাই যার যার অবস্থানে অক্ষত অবস্থায় সুস্থ সবল ছিল। মাসাল্লাহ। আল্লাহ্‌র অশেষ রহমত। সব নেতারাই সুরক্ষিত ছিল। যদি না থাকতো তাহলে আপনার বাবাকে মুক্তিযুদ্ধের সনদ কে দিতো ? বাবার কাছে আপনি শুনেছেন প্রতিবেশী রাস্ট্র নাকি এই যুদ্ধে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছে ওরাই আসলে একটা বড় প্লেটে করে স্বাধীনতা সাজিয়ে গুছিয়ে এনে বাংলাদেশের জনগনের হাতে তুলে দিয়েছে। ওরা অতুলনীয়। বিনিময়ে প্রতিবেশী রাস্ট্র কিছুই নেয়নি। ওরা আপনার মতই নিস্বার্থ, উদার, ও দাতা হরিশচন্দ্র। তবে এটা ঠিক আপনার গাড়িটা প্রতিবেশী রাস্ট্রের বানানো। আপনার টয়লেটের বদনা, টূথপেস্ট, টুথব্রাস, হাগা পরিস্কারের সাবান, আপনার জামা, জুতা, বিছানার চাঁদর, আপনার বউয়ের আপাদমস্তকে মোড়ানো সব কিছুই ভারতের তৈরি। আপনি ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ। ওরা এইসব জিনিষপত্র তৈরি না করলে আপনারা কি ব্যবহার করতেন? গুহাতে বাস করতে হতো। ভারতই আপনাদের স্বাধীনতা দিয়েছে, কাপড় দিয়েছে, মুভি দিয়েছে, গহনা দিয়েছে, বদনা দিয়েছে, সব দিয়েছে আর দিয়েছে আপনার আদর্শ আপনার পিতা। জাতির পিতা। ভারত যদি স্বাধীনতা দিলো তাহলে জাতীর পিতা কি দিলো? এইগুলা নিয়া আপনে মাথা ঘামান না। এগুলা চিন্তা করার বিষয় না। আপনি একটা আর্টিকেল পড়েছেন সেখানে লেখা আছে অযথা চিন্তাভাবনা করলে দ্রুত বয়স বৃদ্ধি পায় আর চেহারাতে বয়সের ছাপ ধরে। সেজন্য আপনি এগুলা নিয়া চিন্তাভাবনা করেন না।

সমস্যা হয়েছে অন্যদিকে । আপনার ছেলেকে ভুল করে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। ছেলেটা আপনার মতই অলস। ঠিকমত সেভ করেনা। খোচা খোচা দাঁড়ি গজিয়েছে । ঠিকমত গোসল করেনা। ইয়াবার নেশাও করে আজকাল। রাস্তা দিয়া হেটে যাচ্ছিল পুলিশে জঙ্গি বলে ধরে চালান দিয়েছে। আপনি স্থানীয় এমপীর সাথে কথা বলেছেন । ওরা বলেছে দশ লাখ টাকা দিলেই ছেড়ে দেবে। দশ লাখ টাকা দেওয়া আপনার জন্য কোন ব্যাপার না। পুলিশেরা আর কত টাকাই বা বেতন পায়। বাজারের সব কিছুর আগুন দাম। এই দুর্মূল্যের বাজারে এত কম বেতনে পুলিশেরা কি টিকে থাকতে পারে ? মানুষ মানুষের জন্য । আপনি একজনের মাথায় ডান্ডা মেরে টাকা এনে ছেলে মানুষ করেছেন এখন পুলিশে সেই ছেলের মাথায় ডান্ডা মেরে আপনার কাছ থেকে টাকা আদায় করে নিচ্ছে। এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এই নিয়ে আপনি মোটেই চিন্তিত নন। তবে সমস্যা হয়েছে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে। ছেলের জন্য সে বেজায় চিন্তিত। এই মহিলা খায় দায় আর বিশাল শরীর সোফার কাছে সমর্পিত করে ভারতের টিভি সিরিয়ালে মগজ ডুবিয়ে থাকে দিন রাত। ছেলে কোথায় গেল কি করলো তা দেখার সময় নাই। কিন্তু এখন যখন ছেলেকে পুলিশে পিটাচ্ছে তখন তার দরদ উথলে উঠছে। ছেলেকে ক্রসফায়ারে দিয়ে দেবে যদি সময় মত টাকা না পায়। দেখা যাক জুম্মার নামায পড়ে টাকার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।

বার্গারটা খুব সুস্বাদু। রাস্তায় হাটু পানি জমেছে। একটা গাড়ী এসে নতুন পাজামাতে কাদাপানি ছিটিয়ে চলে গেল । গাড়িওয়ালার কি দোষ। রাস্তাগুলো তো মেরামত করতে না করতেই বড় বড় গর্ত হয়ে যায়। কন্ট্রাক্টরদেরও দোষ দেওয়া যায়না। ওরাও তো সেই একই দুর্মূল্যের বাজারে বাজার করে যেখানে পুলিশে বাজার করে বা দুর্নীতিবাজ আপনি বাজার করেন।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *