পৌরসভা নির্বাচন আধো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা সংশয় প্রকাশ,
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিএনপিসহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। তাদের মতে, সরকার যেভাবে দেশব্যাপী গণগ্রেফতার, মামলা-হামলা অব্যাহত রেখেছে তাতে নির্বাচন যে সুষ্ঠু হবে না তা আগে থেকেই অনুমান করা যায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে গত এক মাসে দশ হাজারেরও বেশি বিরোধী জোটের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে গণগ্রেফতার বন্ধের আহ্বান জানানো সত্ত্বেও সেটি আমলে নিচ্ছে না সরকার। সর্বশেষ নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেও এর কোনো সুফল আসছে না। গতকাল শনিবারওও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, সরকার তাড়াহুড়া করে পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। এতে অতীতের ন্যায় তারা (সরকার) এ নির্বাচনেও প্রভাব বিস্তারের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, আগে তো তারা (সরকার দল) প্রার্থীদের সমর্থন দিতো, তাতেই প্রশাসনের কিছু অংশ সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিরোধী দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেন। এবার তো সরকারের তরফ থেকেই সরাসরি মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। বিএনপির এ নেতা আশংকা প্রকাশ করে বলেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। একইসাথে তিনি বলেন, যেভাবে সরকার গ্রেফতার ও দমনপীড়ন অব্যাহত রেখেছে তাতে প্রার্থীরাই প্রচারণায় অংশ নিতে পারবে না। সবার মধ্যে গ্রেফতার আতংক বিরাজ করছে। সূত্র মতে, এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পৌরসভার নির্বাচন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না জেনেও গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে এতে অংশ নেয়ার কথা জানায় বিএনপি। পৌর নির্বাচনে অংশ নেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে দলটির মুখপাত্র রিপন বলেন, বিএনপি বিদ্যমান প্রেক্ষাপটকে আমলে নিয়ে শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবং জনগণের ভোটাধিকারের আকাক্সক্ষাকে পূরণ করার জন্য পৌর নির্বাচনে আমাদের দল শর্তসাপেক্ষ অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপির শর্তগুলো হল, নির্বাচন ১৫ দিন পিছিয়ে পুনঃতফসিল ঘোষণা, অবিলম্বে ‘গণগ্রেফতার’ বন্ধ করা, মিথ্যা মামলায় আটক নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মুক্তি দেয়া, পৌর এলাকায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ওসিদের বদলি করা, ৫০ লাখ নতুন ভোটারকে এ নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ দেওয়া এবং কেবল নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকেই পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজের অনুমতি দেয়া। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার সম্পূর্ণ দুরভিসন্ধিমূলকভাবে তড়িঘড়ি করে পৌরসভা আইন সংশোধন করে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার এ নির্বাচনকে অনুকূলে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গত কয়েক মাসে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের গণগ্রেফতারে সারা দেশ কারাগারে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নেই। নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকাও বিএনপি দেখতে পাচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকার যৌথ বাহিনী অভিযানের নামে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই সারা দেশে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের গণগ্রেফতার চালাচ্ছে। এ ধরনের কর্মকান্ড বন্ধ না করা হলে এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তিদান করা না হলে সকল দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিতব্য পৌর নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের পৌরসভা নির্বাচনে সরকারের জন্য দুটি চ্যালেঞ্জ আছে। যার একটি হল নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠ করা। অন্যদিকে দলীয় প্রার্থীর জয়। গেল বার প্রথম দুই দফার পর উপজেলা নির্বাচন এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ সরকারকে সমালোচনায় ফেলেছে। পৌরসভা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার কোন চেষ্টা হলে সেটা ক্ষমতাসীন দলের জন্য সুখকর হবে না-বলছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ টানা দুই দফায় ক্ষমতায়। তাই এ নির্বাচনে কারচুপি করা হলে তাদের এজন্য বড় মাশুল দিতে হবে। জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিঊল আলম মজুমদার বলেন, এই সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনগুলো মোটেও সুখকর ছিল না। উপজেলা ও সম্প্রতি শেষ হওয়া তিন সিটি নির্বাচনের দিকে তাকালে সেটি আরও বেশি পরিষ্কার হয়ে যাবে। তিনি বলেন, তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন যে হবে সেটির দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচনে সরকারি দলকে দলের মধ্যেই সমস্যা মোকাবিলা করতে হতে পারে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্য হয়ে যাবে। প্রার্থীতা নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা সহিংসতায় লিপ্ত হতে পারে। এদিকে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা এবার তুলনামূলকভাবে বেশি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় অবস্থান করলেও বিরোধী প্রার্থীদের সবাই ঘরছাড়া। ‘নৌকা প্রতীকের’ প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে কর্মী-সমর্থকরা এরই মধ্যে আগাম প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের কেউ কারাগারে। অন্যরা পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শংকায় রয়েছে সবাই। সূত্র মতে, এই নির্বাচনের জয়-পরাজয়ে দেশ পরিচালনায় শাসনক্ষমতায় কোন প্রকাশ্য পরিবর্তন আনবে না। তবে যেহেতু প্রায় সব জেলাতেই ভোট হবে, সেহেতু দলের জনপ্রিয়তা যাচাই এবং বিরোধী দলের প্রতি মানুষের মনোভাব জানার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়া সরকার যে বিরোধীদের প্রতি কতটা অসহিষ্ণু সেটাও প্রমাণ করার সুযোগ থাকবে। ২৯শে নভেম্বর ২০১৫ সংবাদ সংগ্রহ
রাশেদুল
Moin Ahmed liked this on Facebook.