টোল দুর্নীতি এবং আমাদের সরকার ব্যবস্থা

মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদেরের বরাবর খোলাচিঠি

মাননীয় মন্ত্রী,
বর্তমান সরকারে কিছু সফল মন্ত্রীদের মধ্যে আপনি একজন হিসাবেই জানি। ভাবতে ভালো লাগে যে আপনি অন্তত সাধারণ জনগনের যাতায়াতের কথা চিন্তা করেন এবং কিছু করার জন্য সবসময়ই চেষ্টা করেন। আর সেজন্যই আমার এই লিখাটা।

কিছু দিন আগে আপনার একটা বক্তব্য খবরের কাগজে পড়লাম। আপনি অত্যন্ত দুঃখ করে বলেছেন যে, বাংলাদেশের সবগুলু সেতুর টোল আদায় থেকে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু দুশ্চরিত্ত্র মানুষ। আসলে আপনি একা কিইবা করবেন। দুর্নীতিই যাদের একমাত্র ধর্ম, যাদের শরীরের প্রতিটি শিরা এবং উপশিরায় প্রবাহিত হচ্ছে দুর্নীতির দুষিত রক্ত তাদের থেকে তো আর বেশি কিছু আশা করতে পারবেন না.

কিন্তু এখন কথা হলো, এই টোল দুর্নীতি বন্ধে কি আপনার সরকারের কিছুই করার নেই ? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের কথা চিন্তা করলে দেখবেন যেখানেই টাকা লেনদেনের বেপার আছে সেখানেই দুর্নীতি আছে. টাকা এবং দুর্নীতি যেন একই সুতায় গাঁথা। কোনো উপায়ে যদি টোল আদায়ের এই কাজটা ক্যাশলেস করা যায় তাহলে দেখেবন অটোমেটিক্যালি দুর্নীতি কমে আসবে।

না, আমি বলছিনা যে টোল ফ্রি করে দিতে। শুধু বলছি যে, এই টোল আদায়ের কাজটা যদি ইলেকট্রনিক উপায়ে করা যায় তাহলে দেখবেন একদিকে যেমন দুর্নীতি কমে আসবে অন্যদিকে এথেকে সরকারের কোটি কোটি টাকা আয় বাড়বে।

বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই অনেক উন্নতি করছে। বিগত কয়েক বছরে ডিজিটালের ক্ষেত্রে বেশ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে যা প্রসংশার দাবি রাখে। এখন এই ডিজিটালের ছোয়া যদি টোল আদায়ের ক্ষেত্রে ইমপ্লেমেন্ট করা যায় তাহলেই দেখবেন আপনার আর হতাশ হতে হবে না.

বিশ্বের উন্নত দেশগুলুতে আজ বিভিন্ন উপায়ে এই টোল আদায় করা হয়ে থাকে। আপনি হয়ত দুইটা অপসন নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। একটি হলো “ই.আর.পি. সিস্টেম” এবং অন্যটি হলো “টেপ এন্ড গো সিস্টেম”. প্রথমটি কস্টলি হলেও অনেক বেশি কার্যকর। ই.আর.পি. সিস্টেমের বেলায় গাড়ির মালিক বা ড্রাইভারকে একটি ক্যাশকার্ড এবং একটি আই.ইউ. ডিভাইস সঙ্গে রাখতে হবে. আর টেপ এন্ড গো সিস্টেমের বেলায় শুধু ক্যাশকার্ড রাখলেই চলবে। সরকারকে শুধু যেকোনো একটি সিস্টেমকে টোল সেতু বা টোল রাস্তার প্রবেশ পথে ইনস্টল করতে হবে. পুরো সিস্টেমকে একটি কন্ট্রোল রুম থেকে মনিটরিং করার সুযোগ থাকবে।

এই ইলেকট্রনিক সিস্টেমকে যদি সফলভাবে ইমপ্লেমেন্ট করা যায় তাহলে দুর্নীতি কমার সাথে সাথে আরো কিছু সুফল পাওয়া যাবে। উল্লেখযোগ্য কিছু সুফল হলো:

১. ইলেকট্রনিক উপায়ে টোল পেমেন্ট করার কারনে টাকা আদান প্রদানের কোনো প্রয়োজন পরেনা। গভর্নমেন্টের একটু নির্দিষ্ঠ একাউন্টে টোল ফী সরসরি জমা হয়. সুতরাং টাকা হাতিয়ে নেয়ার উপায় নেই.

২. ইলেকট্রনিক পেমেন্ট পদ্ধতি অনেক দ্রুত হওয়াতে টোল সেতুর প্রবেশ পথে গাড়ি বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে হয় না. তাই যানজট অনেকাংশে কমে যায়।

৩. ইলেকট্রনিক পেমেন্ট পদ্ধতিতে প্রতিটি গাড়ির মালিক বা ড্রাইভারকে ক্যাশকার্ড রাখতে হয় এবং ক্যাশকার্ডে সাধারনত সমসময়ই একটি নির্দিষ্ঠ পরিমান টাকা জমা থাকে। তাই গভর্নমেন্ট সেই টাকা থেকেও সুবিধা নিতে পারে।

৪. এই সিস্টেমে প্রতিটি যানবাহনকে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করার ব্যবস্থা থাকায় যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো যানবাহনকে ট্র্যাক করা যায়. তাই এতে অন্যান্য অপরাধ প্রবণতাও কমে আসে.
ইন্টারনেট সার্চ করে দেখলাম বাংলাদেশে সর্বমোট ৫টি টোল সেতু এবং ৩টি টোল রাস্তা আছে (সোর্স: উইকিপেডিয়া). তাই আমার মনে হয় না এই ইলেকট্রনিক পেমেন্ট পদ্ধতি ইমপ্লেমেন্ট করতে খুব বেশি সময়ের প্রযোজন হবে. এক্ষেত্রে সরকার এবং জনগনের সদিচ্ছা আর আন্তরিকতাই যথেষ্ঠ। আর দায়িত্বটা তো সরকারকেই নিতে হবে তাই না ?!
সিঙ্গাপুরের মত রাষ্ট অটোমেটিক্যালি জন্ম নেয় না, বানাতে হয়. সপ্ন দেখি একটি দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশের।

– মো: তাজুল ইসলাম

প্রবাসনিউজ২৪.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *