শেষ সাক্ষাতে যা বলেছেন সালাউদ্দিন-মুজাহিদ

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকরের আগে স্বজনদের নানা কথা বলেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধূরী এবং জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ। দুজনই প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার বিষয়টি এক বাক্যে নাকচ করেছেন। বলেছেন, এটা সম্পূর্নই ষড়যন্ত্র এবং মিথ্যাচার। বিএনপি- জামায়াতের পক্ষ থেকেও একই ধরনের কথা বলা হয়েছে। প্রাণ ভিক্ষার আবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন কেউ কেউ।
‘প্রাণভিক্ষা কোন মানুষের কাছে নয়’
গতকাল সকালে চট্টগ্রামের রাউজানে দাফনের পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধূরীর নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন তার বড় ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, আব্বা বলেছেন, প্রাণভিক্ষা বা ক্ষমা চাইলে আল্লাহর কাছে চাইব, কোন মানুষের কাছে নয়। ফাঁসি কার্যকরের আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় তিনি আরও বলেন ৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা তোমার বাবা, কারও কাছে মাথা নত করে না। প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে হুম্মাম বলেন, বলা হচ্ছে- বাবা প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন। তাকে মানুষ বাংলার বাঘ হিসেবে চিনে। তিনি কখনো প্রাণভিক্ষা চাইবেন না। ১০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অবৈধ রায়ে বাবাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তবু আমরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছি। দেশের এখন এমন এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যেখানে অনেক খুন-গুম হচ্ছে। অনেকে আপনজনের মরদেহ খুঁজে পাচ্ছে না। আমরা ভাগ্যবান যে সম্মানের সঙ্গে বাবাকে দাফন করতে পেরেছি। তিনি বলেন,একজন বেকসুর মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের মানুষ অবশ্যই একদিন ন্যায়বিচারের ডাক দিবে। হুম্মাম বলেন, তিনি চট্টগ্রামের সিংহপুরুষ। ইংরেজিতে লিগেসি বলে যা আছে তা টিকে থাকবে। এ হত্যার বিচার একদিন না একদিন হবে। চট্টগ্রামের মানুষ এ রায় কোনদিন মেনে নেবে না। সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ভাই জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, প্রাণভিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেছেন- আমি যদি মার্সি (ক্ষমা) চাই, তবে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে চাইবো, কোন বান্দার কাছে নয়। সংবাদ সম্মেলনে আবদুর রহমান চৌধুরীসহ তাদের আত্মীয়স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
ওদিকে,জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ শেষ দেখায় স্ত্রী তামান্না-ই জাহানকে ধৈর্য ধরতে এবং শান্ত থাকতে বলেছেন। শনিবার মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে স্বজনদের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাতে স্ত্রীকে এমন পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তার পুত্র আলী আহমেদ মাবরুর। গতকাল মানবজমিনকে মাবরুর বলেন, বিদায় বেলায় আব্বাকে একেবারেই শান্ত স্বাভাবিক দেখা গেছে। তবে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে তিনি বেশ রিঅ্যাক্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, জীবনের শেষ দিনও সরকার আমাকে নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচার করেছে। এর চেয়ে বড় জুলুম আর কি হতে পারে। মুজাহিদ স্বজনদের বলেছেন, আমি কোন অপরাধ করিনি। সরকার আমার কোন অপরাধ প্রমান করতে পারেনি। তবু বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছি সাক্ষ্যপ্রমান বিহীন এমন ঢালাও অভিযোগ দিয়ে মৃত্যুদ- দিয়েছে। যে রকম অপরাধের কোন প্রমান নেই সে অপরাধের(?)জন্য ক্ষমা চাইবো কেন। মুজাহিদ বলেছেন, প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণ ভিক্ষার বিষয়টি প্রচার করে সরকার আমাকে কাপুরুষ হিসেবে দেশ জাতি এমনকি বিশ্ববাসীর কাছে প্রমান করতে চেয়েছিল। কিন্তু যারা আমাকে চিনে আমার নীতি আদর্শ সম্পর্কে অবগত তারা কখনো এসব বিশ্বাস করবেনা। মাবরুর বলেন, আব্বা বলেছেন, ক্ষমাপ্রার্থনার নাটক করে সরকার দেশবাসী বিশেষ করে আমার দলের লোকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। হাসরের ময়দানে দেখা হবে স্ত্রীকে এমন শান্তনা দিয়ে বিদায়ের শেষ মুহুর্তে মুজাহিদ বলেছেন, সংসার জীবনে তোমার মত ভাল স্ত্রী পেয়ে স্রষ্টার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। প্রতি উত্তরে মুজাহিদ স্ত্রী তামান্না-ই জাহান স্বামীকে একজন ভাল এবং নির্দোষ মানুষ হিসেবে প্রশংসা করেন।

৬ thoughts on “শেষ সাক্ষাতে যা বলেছেন সালাউদ্দিন-মুজাহিদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *