একনজরে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ

আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি তার পিতা মাওলানা আব্দুল আলীর কাছে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তার পিতা জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৬২-১৯৬৪ সাল পর্যন্ত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যও (এমপিএ) নির্বাচিত হয়েছিলেন।

পরে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ফরিদপুর ময়জুদ্দিন স্কুলে ভর্তি হন এবং তারও পরে ফরিদপুর জেলা স্কুলে অধ্যায়ন করেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনা সম্পন্ন করার পর তিনি ফরিদপুরে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক ডিগ্রী শেষ করার পর তিনি ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় আসেন।

ছাত্র জীবন থেকেই মুজাহিদ রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। শুরুতে রাজেন্দ্র কলেজে কিছুদিন এনএসএফ এ কাজ করার পর তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের সাথে যুক্ত হন।

১৯৭০ সালে ফরিদপুর ছাড়েন তখন তিনি ফরিদপুর জেলায় ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন।

ঢাকায় এসে তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের ঢাকা জেলার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৭১ সালের জুলাইতে ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক সেক্রেটারি (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) মনোনীত হন এবং এর মাত্র দুই মাস পর অক্টোবরে তিনি ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক সভাপতি নির্বাচিত হন।

আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ তার পেশাগত জীবন শুরু করেন নারায়নগঞ্জ আদর্শ স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি নারায়নগুঞ্জের আদর্শ স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে সাংঘঠনিক প্রয়োজনে তিনি ঢাকায় স্থানান্তরিত হন।

২০১০ সালে ২৯ জুন গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি দৈনিক সংগ্রামের চেয়ারম্যান এবং সাপ্তাহিক সোনার বাংলার পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ছাত্রজীবন শেষ করার পরপরই আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন।

তিনি ১৯৮২-১৯৮৯ পর্যন্ত ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও লিয়াজো কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০০ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হন এবং সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ পদে ছিলেন।

আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র আন্দোলনে, ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে, ১৯৯৪-১৯৯৬ কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ভুমিকা পালন করেন।

আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং মন্ত্রী হিসেবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করাকালীন তিনি

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক), জাতীয় নারী উন্নয়ন কাউন্সিল, অর্থনীতি সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি, নারী উন্নয়ন এবং নারী অধিকার বিষয়ক জাতীয় কমিটি, কারা সংস্কার কমিটি, এসিড ও মাদ্রক নিয়ন্ত্রন জাতীয় কমিটি, ক্ষুদ্র ঋন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি, বয়স্ক ভাতা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এবং কিশোর অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগের একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেপ্তার করার পর ২ অগাস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

মামলার শুনানি শেষে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ২১ জুন ট্রাইব্যুনালে মুজাহিদের বিচার শুরু হয়।

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ট্রাইব্যুনালে এই জামায়াত নেতার ফাঁসির রায় আসে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১১ অগাস্ট আপিল করেন মুজাহিদ।

আপিলে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকার পর খালাস চেয়ে আবার রিভিউ করেন মুজাহিদ। সর্বশেষ রিভিউতেও বহাল থাকে তার মৃত্যুদণ্ড।

২১ নভেম্বর ২০১৫ শনিবার দিবাগত রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

আলী আহসান মো: মুজাহিদ ১৯৭৩ সালের ১৮ অক্টোবর বেগম তামান্না-ই-জাহানের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তামান্না-ই-জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর মহিলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এবং কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তামান্না-ই-জাহান একজন গৃহিনী এবং পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করেন।

আলী আহসান মো: মুজাহিদ এবং তামান্না-ই-জাহানের ৩ পুত্র এবং এক মেয়ে।

৭ thoughts on “একনজরে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *