আমার যা খুশি আমি তাই করবো। অনেক সময় নিজের বাসাতে বসেও যা খুশী তা করা যায়না। যেমন একজন মায়ের যদি রাগ হয় তাহলে সে যা খুশী তাই করতে পারেনা। করতে পারেনা এই ভেবে যে যদি সে যা খুশী তা করে তাহলে তাকে দেখে তার সন্তানেরাও যা খুশী তাই করতে শিখবে। মা চান তার সন্তানেরা আদর্শ হোক। নিয়ম মেনে চলুক। মায়ের নিয়ম। বাবার নিয়ম। স্কুলের নিয়ম। অফিসের নিয়ম। সমাজের নিয়ম । দেশের নিয়ম । সব নিয়ম মেনে চলুক। যে নিয়ম তৈরি করা হয়েছে সবার ভালর জন্য সে নিয়ম মেনে চলা উচিৎ। যে নিয়ম তৈরি করা হয়েছে মুষ্টিমেয় মানুষের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য সে নিয়ম ভেঙ্গে ফেলা উচিৎ। ঘরে মাবাবা নিজেদের স্বার্থে নিয়ম তৈরি করেননা। নিয়ম তৈরি করেন পরিবারের স্বার্থে। মাবাবাভাইবোন সন্তানদের স্বার্থে। যাতে কারু প্রতি অবিচার না হয় যাতে একটি ছাদের নিচে যা কিছু আছে তা সবাই মিলে উপভোগ করতে পারে। দরকার মত নাও এবং যার যেমন ক্ষমতা আছে সেভাবে দাও। এইভাবেই ভারসাম্য রক্ষা করা হয় সংসারে। একজন মা কর্মজীবি হোন আর গৃহজীবি – সন্তান ও সংসারের উপরে মায়ের প্রভাব ততটুকুই থাকে যতটুকু বাবার। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় বাবার চাইতে মায়ের প্রভাব অনেক বেশী থাকে। এর কারণ দুইটা একটা ভালবাসা অন্যটা সুযোগ সুবিধা। বাবার চাইতে সন্তানের সুযোগসুবিধাগুলো মা ভাল বোঝেন (অনেক ক্ষেত্রেই)। বাবার চাইতে সন্তানদের মা বেশী ভালবাসেন (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে) , বাবার হাতে যেহেতু ক্রয় ক্ষমতা থাকে তাই সন্তানেরা বাবার প্রতি আকৃষ্ট হয়। বাবা যদি দরিদ্র হতেন তাহলে হয়তো সন্তান তার প্রতি আকৃষ্ট হতো যার টাকা আছে। অনেক দরিদ্র ঘরের ছেলেদের দেখা গেছে ঘরজামাই থাকতে। শশূরের টাকাতে পড়ালেখা শেষ করে শশূরের খেদমতে যারা করে তারা মাবাবার খেদমত হয়তো একইভাবে করেনা।
সমাজেও এই একই চর্চা সেটা দেখা যায়। একজন ধনী পরিবারের কারুকে যখন গ্রেফতার করা হয়, অন্যায়ভাবে মামলাতে জড়িয়ে ফাঁসি দেওয়া হয় তখন সমাজের সবাই চেঁচামেচি শুরু করে। ঠিক একইভাবে চেঁচামেচি করেনা যখন একজন গারমেন্টস শ্রমিককে ধর্ষন করে হত্যা করা হয় বা আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় বা বিল্ডিং চাপা ফেলে মারা হয়। একজন দরিদ্র রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা করা হলে অনেকেই তার নামও শুনতে পায়না। ১৯৭২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট কতজন রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে সেটা অনেকেই জানেনা। যারা দরিদ্র তাদেরকে কেউ চিনেনা, জানেনা, অথচ এই দরিদ্র মানুষগুলোকেই গুলির সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। নিয়ম হলো — ধনী পরিবারের ক্রয় ক্ষমতা আছে। এরা আইন, আদালত, পুলিশ সবাইকে কিনে ফেলতে পারে। ধনীদের জন্য এক আইন আর দরিদ্রের জন্য অন্য আইন। সেজন্য ধনী পরিবারের কেউ গ্রেফতার হলে সবাই অবাক হয়ে যায়।
ধনী পরিবারের বা প্রভাবশালী পরিবারের কেউ যদি গৃহকর্মীকে হত্যা করে বা গুলি করে আহত করে তাহলে তার কোন বিচার হবেনা সেটাই সমাজের বিধান। এটাই চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। রবীন্দ্রনাথ যদি ইংরেজদের সাথে বসে ক্লাবে হুইস্কি পান করেন তাহলে সেটা স্বদেশী আন্দোলনের রচনাতে স্থান পায়না। ইংরেজের অভিষেক অনুষ্টানের জন্য রবীন্দ্রনাথ গান রচনা করেছেন “জনগন মন অধিনায়ক জয়ো হে ভারত ভাগ্য বিধাতা” — স্বাধীনতা আন্দলোনের কোন রচনাতে এই কথা লেখা থাকেনা। নিয়ম তৈরি করার হয় যে নিয়ম তৈরি করে তার ব্যক্তিগত স্বার্থে ।
বাংলাদেশে সরকার মনোনিত হয় বিদেশীদের বিনিয়োগ ও মুনাফার স্বার্থে। এইখানে কোন আপোষ নেই। বাংলাদেশের জনগন মেনে নিয়েছে যে তারা দেশ বিক্রির বিনিময়ে বিক্রয়মূল্য হিসাবে দুইটা জিনিষ অর্জন করেছে – একটি পতাকা ও একটি রবীন্দ্রসংগীত।
সেজন্য সবাই এলিট পূজা করে। দরিদ্র ঘরের ঘরজামাইয়ের মতো। এলিটেরা হয় রাজনৈতিক নেতা। একজন পুরানা সামন্তের ছেলে আধুনিক যুগে সর্বহারাদের অধিকারের জন্য সংসদে চিৎকার করেনা নিজেদের এলিট সমাজের জন্য চিৎকার করে। পুরানা এলিট ও নব্য এলিটে লড়াই চলে। দরিদ্র জনগনের কোন খবর থাকেনা কারণ তাদের পেটে ভাত নাই, পড়নে কাপড় নাই, মাথার উপরে ছাদ নাই, এইগুলা যোগার করার জন্য তারা ব্যস্ত থাকে। মধ্যবিত্তেরা ব্যস্ত থাকে টাকা যোগারের জন্য। টাকা যোগার হলে ঘুষ দিয়ে চাকুরী হবে তারপর তারা ফেসবুকে তাদের দৈন্যদশা ঢেকে ঢুকে সেলফি দিতে পারবে । সবাই সব কিছু ঢেকে রাখে। বাইরে শুধু এলিট পূজা চলে ধুমধাম করে। এলিটদের কোন মাথাব্যাথা নাই সাধারন মানুষের জন্য। মাঝে মাঝে এখানে ওখানে দান খয়রাত করে মধ্যস্বত্বভোগীরা সেটা ফলাও করে প্রচার করে যাতে দরিদ্ররা উপরের দিকে তাকিয়ে ভুলে যায় উপরে এলিট আছে না আল্লাহ্ । এলিটদের দামী গাড়ীর কাঁচের জানালা দিয়ে পুত্রকন্যাস্ত্রীর কান্নাভেজা চোখ। এলিটদের শহরে এই রকম অনেক মায়েরা কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন কেউ স্বামী হারিয়ে কেউ পুত্র হারিয়ে কেউ কন্যা হারিয়ে। সেইসব ছবি আমরা দেখিনি। সবাই একই দেশে বাস করে। ওরা যখন মরেছে তখন কেউ ভাবেনি যে এই অশ্রু এসে এলিটের বউমেয়েছেলের চোখে ঠায় নেবে।