স্বাধীন হিসাবে আমাদের কি কি আছে? একটি রবীন্দ্র সংগীত আর একটি পতাকা। এছাড়া আর কিছু নাই। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। মৌলিক অধিকার দাবী করার স্বাধীনতা নাই। এমনকি প্রশ্ন পত্র ফাঁস হয়ে গেলে সেই পরীক্ষা বাতিলের দাবী করার অধিকারও নাই। সরকারের সমালোচনা করার স্বাধীনতা নাই। সরকার নিজে নিজেকে নির্বাচিত করেছে। নিজেরা নিজেরা সংসদ সদস্য হয়েছে। নিজেরা নিজেরা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট বানিয়ে নিজেদের বাসার দেওয়ালে সাজিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মীই বসে থাকে এই আশায় যে বিদেশীরা এসে তাদের উদ্ধার করবে। সেই একই নেতাকর্মীরা মাঝে মাঝে “মিরজাফরের” উদাহরণ ব্যবহার করে। মিরজাফর বিদেশীদের কাছে আত্মসমর্পন করেছিল এখন যেমন রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা বিদেশে যায় তাদের পঞ্চায়েতের কাছে অভিযোগ করে। সালিসি কমিটি নিয়া আসে বিদেশ থেকে তাদের নিজেদের দেশের সমস্যা সমাধান করার জন্য। তখন বিদেশীরা এসেছিল মিরজাফর তাদেরকে ভাল প্রশাসক হিসাবে মেনে নিয়েছিল। সমস্যা কোথায় ? মীরজাফরের বাড়ী গোপালগঞ্জে বা চট্রগ্রামে ছিলনা আবার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাড়িও বগুরাতে বা নোয়াখালীতে ছিলনা। ওরা সবাই বিদেশী তাই সবাই মিলেমিশে লুটপাট করেছে। এখন যেমন দেশীরা দেশীদের থেকে লুটপাট করছে আর বিদেশীদের ডাকছে তাদের নিজদের মাঝে ঝগড়া মিটিয়ে দেবার জন্য।
বিএনপীর অনেকেই আশা করে বসে আছে আমেরিকা এসে সালাউদ্দীন কাদের চৌধূরীর ফাঁসি রোধ করে দেবে।
বিএনপীর অনেকেই আশা করে বসে আছে এইবারে আমেরিকা খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানাবে।
মীরজাফর আলী খানও আশা করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী পূর্ব বাংলার উন্নয়ন করবে।
বিএনপীর নেতাকে ফাঁসি দিলে উন্নয়নে বিঘ্ন ঘটবে বলে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ইঙ্গিত দিয়েছে।
সাড়া বিশ্বের সমস্যা সমাধানে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের বোমার তুলনা নেই। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের আর্মী ও বোমা এক নিমেষে এক মিলিয়ন সমস্যা সমাধান করে ফ্যালে। মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, লেবানন, লিবিয়া, সিরিয়া, পালেস্টাইন – সব দেশে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলেছে এমন প্রমানও আছে । সেটা দেখেই বিএনপীর নেতাকর্মীরা আশা করে যে তাদের ক্ষমতা পাইয়ে দিতে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র সাহায্য করবে।
যারা এই আশা করে তারা আর যাই হোক — স্বাধীন নয়।
স্বাধীনতা কেউ হাতে তুলে দেয়না। স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়।
অধিকার কেউ হাতে তুলে দেয়না। অধিকার আদায় করতে হয়।
অধিকার আদায় করতে গেলে অনেকের জন্য একজনকে বা মুষ্টিমেয় ব্যক্তিবর্গকে তাদের মুষ্টিতে জমিয়ে রাখা অনেকের সম্পদ হারাবার ভয় হয়, অনেকের সম্পদ অনেকের মাঝে ফিরিয়ে দেবার আতংকে তারা হাতিয়ার তুলে নেয় তখন অধিকার আদায়ের সংগ্রাম রক্তাক্ত হয়ে উঠে।
অবশ্য বিএনপি আর আওয়ামীলীগের মধ্য লড়াই হলো দুইদল মানুষ যারা সাড়া বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সম্পদ নিজেদের মুঠোতে ভরে রেখেছে সেই দুইদলের ভেতরে লড়াই। এই লড়াই চলছে বহুদিন ধরে। এখানে সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করা হয় উলোখাগরার মত। সাধারন মানুষকে ব্যবহার করা হয় তাদের জৌলুস দেখার জন্য। তাদেরকে বাহবা দেবার জন্য। কেউ ডাকে জাতির পিতা কেউ ডাকে বাঘ কেউ ডাকে গনতন্ত্রের মা আরো কত কি । নেতৃত্ববিহীন নেত্রী। চরিত্রবিহিন রাজনীতি। জনগনের কোন ভূমিকা নেই। জনগন মুখ হা করলেই মুখে বুলেট চলে যায়। মিছিলে হাটা শুরু করে মর্গে যেয়ে হাটা স্তব্ধ হয়।
সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের জন্য লড়াই বলে কিছু নেই।
সাধারণ মানুষেরা এখন ভাড়া খাটে। টাকার জন্য রাজনীতি করে।
টাকার জন্য মিছিলে যোগ দেয়। টাকার জন্য কয়েদ খাটে অন্যের সাজা কাধে নিয়ে।
ধনী আর দরিদ্রের পার্থক্য যত বৃদ্ধি পাবে ততই দেশপ্রেম হারিয়ে যাবে।
বাংলাদেশে এখন আছে শুধু এজেন্সি বা দালালী । বিদেশীদের দালাল, দেশ বিক্রির দালাল, গাড়ী বিক্রির দালাল, জমি বিক্রির দালাল, দেহ বিক্রির দালাল, বউ বিক্রির দালাল, প্রশ্নপত্র বিক্রির দালাল, রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রী হিসাবে বহুজাতিক পুঁজিপতিদের দালাল। দালালীর ভেতরেই স্বাধীনতাকে খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশের দাস ও দালালেরা।