সিঙ্গাপুরে আমার আসা হয় ০২/০২/২০০৬ তে. প্রায় ১০ বছর হতে চলল. সিঙ্গাপুরে আসার পর এক অজানা কারনেই আমার দেশাত্মবোধ বেড়ে যায় (আমি মনে করি).
২০০৬ তে ইন্টারনেট বা স্মার্টফোন আজকের মত এত সহজ লভ্য ছিল না. আমার এখনও মনে পরে প্রতি রবিবার আমি বা অন্য কারও সাহায্যে হলেও অনেক দূর থেকে বাংলাদেশী পত্রিকা আনিয়ে বসে বসে পড়তাম (রবিবার ছুটির দিন থাকায়). ভালো কোনো খবরে এক অন্য রকম আনন্দ পেতাম, আর খারাপ খবরে মন খারাপ হত.
এখন পর্যন্ত সেই দেশাত্মবোধ একটুও কমেনি. স্মার্টফোন বা কম্পিউটার অন করেই আগে দেশের কিছু খবর পড়ে নেই. সেটা সরকারের দেশ পরিচালনা থেকে শুরু করে এমনকি খেলাধুলা, কোনো কিছুই বাদ যায়না.
বাংলাদেশে থাকতে অনেক হিন্দি মুভি দেখা হলেও এখন বাংলাদেশী নাটক ছাড়া অন্য কিছু দেখার আর আগ্রহ থাকে না.
সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন উপায়ে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা থাকলেও সবসময়ই চেষ্ঠা করেছি প্রপার ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে টাকা পাঠানোর. সেটা অল্প এমাউন্টই হউক কিংবা বেশি এমাউন্ট. চেয়েছি যেন সরকার অন্তত আমার কষ্টার্জিত টাকা থেকে সামান্য পরিমান রেমিটান্স পায় আর সেটা দেশের উন্নয়নে ব্যবরিত হয়. সেটা নিজের নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকেই করে থাকি.
শুধু তাইনা, এখানে এসে বিভিন্ন বাংলাদেশী সোসাইটির সাথে অনেকদিন থেকেই নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি. সম্পৃক্ত রেখেছি বাংলাদেশী বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনেও. আমার ক্ষুদ্র পরিসরে চেষ্ঠা করেছি সবসময়ই অন্যের কোন সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার.
আমি এটাও বিশ্বাস করি, এই দেশাত্ববোধটা অধিকাংশ প্রবাসীর মধ্যেই কাজ করে (কিছু কিছু ব্যতিক্রম থাকতেও পারে).
এখন কথা হলো এই প্রবাসীদের জন্য কি আদৌ বাংলাদেশের কোনো সরকার কিছু করেছে ? যারা এত কষ্ট করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে, যাদের জন্য আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হতে যাচ্ছে, যাদের কষ্টার্জিত টাকার জন্য বাংলাদেশ আজ তাদের বৈদেশিক রিসার্ভ নিয়ে গর্ব করতে পারে সেই প্রবাসীদের জন্য কি সরকারের কিছুই করার নেই ?
সরকার প্রবাসীদের জন্য তো কিছু করছেই না বরং সেই প্রবাসীরাই দেশে আজ সবচেয়ে বেশি প্রতারণার শিকার হচ্ছে. সিঙ্গাপুরের সৎ আর পরিস্শ্রমী মানুষগুলু দেখে দেখে তারা ভুলেই যায় বাংলাদেশের সেই সব দুশ্চরিত্র মানুষগুলুর কথা যাদের কাছে প্রতারণাই একমাত্র ধর্ম.
শুধু আফসোস প্রবাসীদের সেই দেশাত্মবোধের জন্য, যারা দেশের কথা চিন্তা করলেও দেশ তাদের কথা আদৌ চিন্তা করে না. আমার মত অনেকেই নিজের অক্লান্ত চেষ্টায় কিছু করেও আজ তা হারানোর পথে…..
নিজের এই ত্রিশউর্ধ বয়সে এসে আজ আমি নির্বাক, খুব কষ্ট হয় এই ভেবে যে আমার সেই দেশাত্ববোধটা আগামী দিনগুলুতে থাকবে তো???
লেখক- মো: তাজুল ইসলাম, সিঙ্গাপুর প্রবাসী
প্রবাসনিউজ২৪.কম —-রিয়াজ
Alamin Subo liked this on Facebook.
Moin Ahmed liked this on Facebook.
Ruhul Amin Robel liked this on Facebook.
Md Rustum liked this on Facebook.