মরুভূমিতে চট্টগ্রাম প্রবাসীর মাছ চাষ

যত্ন আর ভালবাসায় মরুভূমিতে ফুল ফোটানোও সম্ভব, কথাটি আরেকবার প্রমাণ করলেন আরব আমিরাত প্রবাসী নূর হোসেন। আমিরাতের রাজধানী থেকে প্রায় দুইশ’ কিলোমিটার পশ্চিমে লেওয়া এলাকা। মরুভূমি বলতে যা বোঝায়, লেওয়া তারই একটি উদাহরণ। মরুময় সেই লেওয়া এলাকায় অসাধ্যকে সাধন করে চলেছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার প্রবাসী নূর হোসেন। লেওয়া মরু অঞ্চলে ৫০ ডিগ্রির অধিক তাপমাত্রা। যেখানে প্রাণীকূলের বসবাস নিয়ে ভাবতে হয় যে কাউকে, সেখানে তিনি করছেন মাছ চাষ! নিজের প্রচেষ্টায় উত্তপ্ত বালিতে মাছ চাষের উপযোগী করে তৈরি করেছেন কৃত্রিম পুকুর। ২০১০ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে নূর হোসেনের মৎস্য খামার চালু হয়েছে যা বর্তমানে বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। আল-শামখা ফিশ ফার্ম নামে তার মৎস খামারে বর্তমানে চারটি বড় কৃত্রিম পুকুরসহ রয়েছে তিন-তিন মিটার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সম্পন্ন আরো ৪০টি ফাইভার ট্যাঙ্ক। ছোট পোনা পুকুরে ছাড়ার উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত ট্যাঙ্কগুলোতে রাখেন নিবিড় পর্যাবেক্ষণে। লোনা পানিতে সয়লাব আরব সাগর, যেখানে মিষ্টি পানি পাওয়া দুষ্কর সেখানে এমন সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বিগত পাঁচ বছর ধরেই নূর হোসেন চাষ করছেন নানা প্রজাতির মাছের পোনা। দিন দিন বাড়ছে আয়, বাড়ছে বেচা বিক্রি। পাশাপাশি দূর দূরান্তের পর্যটকদেরও ভিড় বাড়ছে নূর হোসেনের মৎস্য খামারে। এ প্রসঙ্গে নূর হোসেন জানান, ‘মাছের ওজন পাঁচশ’ গ্রাম হলেই বিক্রি শুরু করি। বড় মাছ তিন কেজি পর্যন্ত হয়। পোনা বিক্রিতে লাভ বেশি। কিছুদিন আগেও দুই আঙ্গুল পরিমাণ ২৫০টি পোনা মাছ বিক্রি করেছি ১৮ হাজার দিরহাম। তাছাড়া ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির পোনার চাহিদা আছে। আমাদের দেখাদেখি অনেক বাংলাদেশিও এখানে মাছের চাষ শুরু করেছে। আল আইন, সুইহান ও আবুধাবী থেকে পোনা নিয়ে যেতে আসেন অনেকেই। কথায় আছে, বাঙ্গালীরা মাছ চাষে চ্যাম্পিয়ান। একজন শিক্ষিত ও দক্ষ মানুষের অধিনে কয়েকজন কর্মী খাটানো গেলে এ ব্যবসা থেকেও অনেক বেশি আয় করা সম্ভব।’ দেশি মাছের চাহিদা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে দেশীয় কিছু কিছু মাছের চাহিদা আছে, সেসব মাছের পোনা আনতে পারলে আমরা আরো বেশি লাভবান হতাম। কিন্তু দেশ থেকে পোনা আনার কোনো ব্যবস্থাই নেই। আনতে চাইলেও এয়ারপোর্টে আটকে দেয়, হয়রানী করে। কিছু দিন আগে দেশ থেকে চিংড়ি পোনা আনতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি। বর্তমানে এশিয়া ও আমেরিকার কিছু দেশসহ পোনা আসে থাইল্যান্ড ও হংকং থেকে। অথচ দেশীয় পোনা আনতে পারলে লাভের পাশাপাশি এখানে (আমিরাত) মাছ উৎপাদন করতে আরো বেশি উৎসাহ পেতাম। তাছাড়া দেশ থেকে সহজ পদ্ধতিতে মাছের পোনা রপ্তানি করা গেলে প্রতি বছর আয় করা যাবে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।’ উল্লেখ্য, নূর হোসেন কাজের খোঁজে ১৯৯১ সালে ওমানে পাড়ি দেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে ১৯৯৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান। প্রথম দিকে একজন খামারি হিসেবে কাজ করলেও বর্তমানে তিনি একটি মৎস্য প্রকল্পের মালিক। আল-শামখা ফিশ ফার্ম নামে তার মাছের খামারে কাজ করছে ভারত-পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ২০ জন কর্মী। ফার্মে বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মস্থানের সুযোগ থাকলেও ভিসা বন্ধ থাকায় বাংলাদেশি কর্মী আনতে ব্যর্থ হচ্ছে তিনি। যার ফলে ভিনদেশিরা সে সুযোগ নিচ্ছে অনায়াসে।

৭ thoughts on “মরুভূমিতে চট্টগ্রাম প্রবাসীর মাছ চাষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *