রাজনের বাবা খুশি, তবে কার্যকরে সবার সহযোগিতা কামনা

শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। এতে সন্তোষ প্রকাশ করে সরকার, আইনজীবী, সাংবাদিক ও দেশবাসীকে সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাজনের বাবা আজিজুর রহমান। তবে রায় কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সবার সহযোগিতাও কামনা করেছেন। আসামিদের পরিবারের হুমকি-ধামকিতে বেশ অনিরাপদ বোধ করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

রোববার দুপুরে ছেলের হত্যা মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।

এছাড়া রায় পূর্ববর্তী প্রতিক্রিয়ায় রাজনের বাবা আজিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেছেন, ‘হত্যা মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামের স্বজনরা বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দিচ্ছে। এতে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে আছেন।’

রাজন হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে শুকরিয়া আদায় করেন রাজনের বাবার আইনজীবী শওকত চৌধুরী।

প্রধান আসামি প্রবাসী কামরুল ইসলামসহ চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। ১ জনকে যাবজ্জীবন, কামরুলের ৩ ভাইকে সাত বছরের এবং দুজনকে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দাণ্ডিত করা হয়েছে। এছাড়া অপর ৩ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

রোববার ১১টা ২৯ মিনিট বহুল আলোচিত এ মামলার রায় পড়া শুরু হয় করেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা।

পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের ছেলে ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নূর মিয়ার (২০) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি কামরুলের মেজো ভাই মুহিদ আলমের (৩২), বড়ভাই আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও ছোটভাই পলাতক শামীম আহমদের (২০) ৭ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

এছাড়া শেখপাড়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন আহমদের ছেলে দুলাল আহমদ (৩০) ও সুনামগঞ্জের দোয়ারা উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরগাঁওয়ের মোস্তফা আলীর ছেলে আয়াজ আলীকে (৪৫) ১ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

মামলার অপর তিন আসামি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কুর্শি ইসলামপুর গ্রামের মৃত মজিদ উল্লাহর ছেলে মো. ফিরোজ আলী (৫০), কুমারগাঁওয়ের (মোল্লাবাড়ী) মৃত সেলিম উল্লাহর ছেলে মো. আজমত উল্লাহ (৪২) ও হায়দরপুর গ্রামের মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন রুহেলকে (২৫) বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।

হত্যাকাণ্ডের ৪ মাসের মাথায় সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করা হল। আদালত সূত্র জানিয়েছে, রাজন হত্যা মামলার রায়ের রায়ের মোট ৭৬ পৃষ্ঠা রয়েছে। তন্মধ্যে ৫৪নং পৃষ্ঠা থেকে পড়া শুরু করে পরবর্তী ২২ পৃষ্ঠা পড়ে শুনানো হয়েছে। রায়ের মোট ২ হাজার ৮১০ লাইন ছিল।

এর আগে বেলা ১১টা ১৮ মিনিটে আদালতে হাজির করা হয় মামলার আসামি কামরুলসহ অন্যদের। ১১টা ২৪ মিনিটে তাদেরকে কাঠগড়ায় হাজির করা হয়।

সকাল ৯টা থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এসে ভিড় করতে দেখা গেছে। মানুষের চাপ সামলাতে জজকোর্টের মূলফটক বাদে সব গেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নেয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। সকাল ৯টা ২৮ মিনিটে রাজনের শওকত চৌধুরী আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছেন।

সকাল ১০টা ২২মিনিটে রাজনের মা, বাবা ও তার ছোট ভাই আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছেন। এসময় তাদের সঙ্গে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই উপস্থিত হয়েছেন। রাজনের মা বাংলামেইলকে এক কথাতেই তার প্রত্যাশা জানালেন। বললেন, ‘ছেলে হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমি।’ এসময় উপস্থিত সবাই ফাঁসি ফাঁসি বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন।

গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সামিউল আলম রাজনকে চোর সাজিয়ে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। এরপর ১৬ আগস্ট রাজন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালত ২৪ আগস্ট, সোমবার চার্জশিট আমলে নেন। পরে ২২ সেপ্টেম্বর ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে রাজন হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

৯ thoughts on “রাজনের বাবা খুশি, তবে কার্যকরে সবার সহযোগিতা কামনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *