মার্কিন ও চীনা যুদ্ধজাহাজের ক্রু’দের যে কথা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

মার্কিন যুদ্ধজাহাজ (গাইডেড মিশাইল ডেস্ট্রয়ার) ইউএসএস লাসেন যখন দক্ষিণ চীন সমুদ্রে চীনের মনুষ্যনির্মিত দ্বীপের ১২ ন্যটিক্যাল মাইল ভেতরে প্রবেশ করে, তখনই আরেকটি চীনা যুদ্ধজাহাজ থেকে জবাব চাওয়া হয়। ইউএসএস লাসেনকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে আসছিল চীনা যুদ্ধজাহাজটি। সাংবাদিকদের সামনে প্রশ্নোত্তরে ইউএসএস লাসেনের কমান্ডিং অফিসার কমান্ডার রবার্ট ফ্রান্সিস বৃহ¯পতিবার চীনা ও মার্কিন যুদ্ধজাহাজের ক্রুদের মধ্যে বিভিন্ন কথোপকথন তুলে ধরেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্স তুলে ধরেছে তার চুম্বক অংশ। রবার্ট ফ্রান্সিস সাংবাদিকদের বলেন, আমাদেরকে চীনা যুদ্ধজাহাজ থেকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এই যে, তোমরা চীনের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করেছো। তোমাদের উদ্দেশ্য কি? ইউএসএস লাসেনের ক্রু জবাব দেয়, আমরা আন্তর্জাতিক আইনানুসারে এখানে কার্যক্রম চালাচ্ছি। ইউএসএস লাসেন কৃত্তিম দ্বীপ পেরিয়ে সামনে যাবে। জবাবে কী প্রশ্ন করে চীনা ডেস্ট্রয়ার? ফ্রান্সিস জানান, বারবার তারা একই প্রশ্ন করে।
মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস থিওডোর রুজভেল্ট চীনের সাতটি কৃত্তিম দ্বীপ নিয়ে গঠিত দ্বীপপুঞ্জ থেকে ১৫০-২০০ ন্যটিক্যাল মাইল দূরে। এর সঙ্গে গত রাতে যুক্ত হয়েছে ইউএসএস লাসেন। ফলশ্রুতিতে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ চীন সাগরের বেশিরভাগ অঞ্চল নিজেদের দাবি করে চীন। এ সমুদ্র পথে প্রতিবছর প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক বাণিজ্য হয়। কিন্তু ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, ফিলিপাইন ও তাইওয়ানও এ সমুদ্র অঞ্চলের দাবি করে। এ নিয়ে সম্প্রতি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছে।
ফ্রান্সিস বলেন, প্রতিদিন মার্কিন জাহাজ এ এলাকায় থাকে। আর আমাদের সঙ্গে কথা হয় চীনাদের। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ এলাকায় চীনের ডজন ডজন নৌ ও কোস্টগার্ড জাহাজ আছে। সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, চীনের কৃত্তিম দ্বীপের ১২ ন্যটিক্যাল মাইলের মধ্যে আমেরিকান জাহাজ টহল দেবে। ফলে চীনা ও মার্কিন যুদ্ধজাহাজের মধ্যে এ ধরণের যোগাযোগ বা কথোপকথন আরও বাড়তে পারে।
ফ্রান্সিস জানান, সর্বশেষ যে চীনা যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস লাসেনকে অনুসরণ করছিল, তারা প্রায় ১০ দিন ধরে এ কাজ করছিল। এ রকমটি প্রায়ই হয়। কিন্তু সব সময়ই চীনা ও মার্কিন নৌ কর্মকর্তাদের মধ্যে কথোপকথন উত্তেজনাপূর্ণ হয় না। বিশেষ করে যখন দুই দেশের মধ্যে স¤পর্ক স্বাভাবিক থাকে, তখন গভীর সমুদ্র এলাকায় এ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেক ব্যক্তিগত কথাও আদানপ্রদান হয়। ফ্রান্সিস জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে আমাদেরকে অনুসরণ করে আসা একটি জাহাজের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছিল। তারা আমাদের ফোন দেয়, আমরা ফোন ধরি। এরপর আমাদের কথোপকথন অনেকটা এরকম: ‘হ্যালো, এ শনিবারে তোমরা কি করবে? ও, আমরা পিৎজা ও উইংস খাবো আজ। তোমরা কি খাবে? ও আমরা আজকে ওটা করবো। এই, আমরাও তোমাদের মতো হ্যালোইন উদযাপন করার পরিকল্পনা এঁটেছি।’ ফ্রান্সিস বলেন, এ ধরণের কথোপকথনের উদ্দেশ্য হলো একে অপরকে দেখানো যে, আমরা সবাই সাধারণ নাবিক, নৌসেনা। আমাদেরও পরিবার আছে, তাদের মতো। ইংরেজিতে কথা বলে চীনারা। তারাও জানায়, তারা চীনের কোথায় থাকে। তাদের পরিবার স¤পর্কে বলে। তারা কোথায় কোথায় ভ্রমণ করেছে, সেসব ভাগাভাগি করে। ফ্রান্সিস জানান, চীনা যুদ্ধজাহাজের কর্তারা আমাদের প্রতি ভীষণ আন্তরিক ছিলেন সব সময়। এমনকি কৃত্তিম দ্বীপমালা নিয়ে উত্তেজনা হবার আগে এবং পরেও। ফ্রান্সিস বলেন, যখন তারা আমাদের ছেড়ে চলে যায়, তখনও জানায়। ‘এই, আমরা আর তোমাদের সঙ্গে থাকছি না। তোমাদের অভিযান সুখকর হোক। আবার দেখা হবে!’
ইউএসএস লাসেনের কমান্ডার আরও বলেন, সম্প্রতি দক্ষিণ চীন সাগরের চলমান উত্তেজনা নিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হবার সুবাধে তার সেনাদের পরিবার ও পরিচিতরাও উদ্বিগ্ন কিংবা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফ্রান্সিস নিজের কথাই জানালেন। বললেন, আমার মা আমাকে ফোন করেছে টেলিভিশনে খবর দেখে। তিনি জানতে চাইলেন আমরা কি আসলেই চীনে প্রবেশ করেছি কিনা! সত্যি বলতে কি, এসব উত্তেজনা আমাদের ছোঁয় না। এটা আর দশটা দিনের মতোই। সব কিছু এখানে পেশাদার।

৬ thoughts on “মার্কিন ও চীনা যুদ্ধজাহাজের ক্রু’দের যে কথা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *