নির্যাতন ও হত্যা – বাংলাদেশের দুইটি জাতীয় স্পোর্টস দেখে বিশ্বের “জঙ্গি” রা সবাই লজ্বা পেয়ে এখন অবসর নেবার চিন্তাভাবনা করছে। বাংলাদেশের ঘরে, স্কুলে, সড়কে শিশু, কিশোর নির্যাতন ও হত্যা যেন প্রতিদিনের বিনোদন।
“যেমন খুশী মানুষ মারো” উৎসবে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের এলিট এলাকা ধানমন্ডীর ২৭ নম্বরের ফরিদ হোসেন বা তার পরিবারের সদস্যদের কেউ একজন হত্যা করলো গৃহকর্মী রুকসানা আক্তারকে। রুখসানা আক্তারের বয়স ১৫। এই বাসাতে সে প্রায় সাত-আট বছর কাজ করেছে। অমানবিক নির্যাতনের ফলে হাসপাতালে রুখসানার মৃত্যু ঘটে। হত্যাকারী ফরিদ হোসেন স্মার্ট মানুষ। রুখসানার মায়ের কাছ থেকে তিনি শূন্য স্টাম্প পেপারে স্বাক্ষর করে নিয়ে বাসা থেকে ভাগিয়ে দিয়েছে। আদালতের মুখে টাকা ছুঁড়ে দিলেই টাকা গিলে আদালতের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।
এমাসেই গাইবান্ধাতে সৌরভ নামের একটি শিশুকে আওয়ামীলীগের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন গুলি করে। গুলিতে শিশু সৌরভ আহত হয়। তখন আওয়ামীলীগের এমপি লিটন দরিদ্র মানুষকে মাথাপিছু ৩০০ টাকা দিয়ে রাস্তায় মিছিল নামিয়ে দেয়। মা, মাটি, মানুষের পিতা লিটন দরিদ্রের পিতা এবং নির্দোষ বলে এরা শ্লোগান দেয়। ক্রসফায়ারে বা বন্দুক যুদ্ধে (সম্ভবতঃ) সৌরভের পায়ে গুলি লেগেছিল। পায়ে গুলি নিয়ে সৌরভকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সে বেঁচে যায়। নির্যাতন করে রুখসানা আক্তারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, কিন্তু সে মারা যায়। রুখসানা আক্তার এক্ষেত্রে সৌভাগ্যবতী। সৌরভের কপালে “যেমন খুশী মারো” প্রকল্পের আওতায় মরার জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
দুর্বল ও অসহায় শ্রমিকদের জন্য বাংলাদেশ এখন মৃত্যুকূপ।
ঘরে ঘরে গৃহকর্তা বা গৃহকর্তীরা বসে আছেন শ্রমের বিনিময়ে শ্রমিক নির্যাতন করে হাসপাতালে বা কবরে পাঠানোর জন্য।
সরকার মারছে বিরোধীদলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের।
গৃহকর্তা বা গৃহকর্তীরা মারছে দুর্বল ও অসহায় গৃহকর্মীদের।
শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আইন আছে। কিন্তু সে আইন প্রভাবশালী কোন অপরাধীদের উপরে প্রয়োগ করা হবেনা। যেমন খুশী মানুষ মারো — এই উৎসবে কোন বিচার হবেনা। তবে পুলিশ ও আদালতের বিভিন্ন স্তরে টাকা দিয়ে এই অপরাধী তার খুনী নাম মুছে ফেলতে পারবে। খুন করার পাচদিনের ভেতরে টাকার বিনিময়ে অপরাধীর নাম ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
যেমন খুশী মানুষ মারো — এই উৎসবে অংশ নিয়েছে দেশের স্বনামধন্য ক্রিকেটার সাহাদাত হোসেন ও তার স্ত্রী জেসমিন জাহান নিত্য । বাংলাদেশের ক্রিকেট ফ্যানেরা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। সাহাদত ও নিত্য শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন করার সময়ে ভুল করে কোন ভিডিও করেনি। আগ্রহী মহল এ ব্যাপারে হৈ চৈ করলে কিছু ক্রিকেট ফ্যান ভ্রুকুটি করেছে। নির্যাতন করে একটি অসহায় দরিদ্র শিশুর মুখের চেহারা বদল করে দেওয়াটা তেমন কোন ব্যাপার না বলে মনে করা হলেও পুলিশ ও আদালতের জন্য এই ঘটনা টাকা উপার্জেনের একটি সুন্দর সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
শিশু কিশোরদেরকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়ে তাদের উপরে নির্যাতন করে “যেমন খুশী তেমনভাবে হত্যা” বা “জখম” করলে সব চাইতে বেশী আনন্দিত হয় পুলিশ ও আদালত কর্তৃপক্ষ। সংবাদপত্রগুলো জনপ্রিয় হচ্ছে, বেশী বেশী বিজ্ঞাপন পাচ্ছে, হাসপাতালের ডাক্তারেরা টাকা আয় করছে, পুলিশ, উকিল, ম্যাজিস্ট্রেট সবাই মোটামুটি টাকার ভাগ পাচ্ছে। বাংলাদেশের দরিদ্র শিশু কিশোর শ্রমিক নির্যাতন ও হত্যা এভাবেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে।
সেদিন মধ্যপ্রাচ্যের একজন শ্রমিক শিশু রাজনকে নির্যাতন করে হত্যা করে। এই নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। ছেলেটিকে হত্যা করে শ্রমিকটি বাংলাদেশ ত্যাগ করতে সমর্থ হয়। পরে পুলিশ তাকে আবার বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে। এই খুনী যেহেতু কোন সেলিব্রিটি না বা ধানমন্ডি বা বনানীতে তার বাসা নাই তাই “যেমন খুশী মানুষ মারো” উৎসবে তাকে সাদর আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে এই খুনীও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছে। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাবার সময় প্রচুর পরিমানে টাকা দিতে হয়েছে তাকে।
সাড়া বাংলাদেশে চলছে “যেমন খুশী মানুষ মারো” উৎসব।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ছয়টি জাতীয় পত্রিকার সংবাদ থেকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। তাতে বলা হয়, ২০১৩ সালেঃ
২৬৭ জন শিশু ধর্ষনের শিকার হয়; ২০১২ সালে ধর্ষনের শিকার হয়েছিল ১৫৫ জন শিশু। ২০১৩ সালে ধর্ষিতা শিশুর মধ্য ১২ জন মারা যায়। ২৩৯ জন শিশু গুরুতরভাবে আহত হয়। অন্যান্য যৌন নিপীড়নের শিকার হয় ১৫০ জন শিশু। ৯০ জন শিশু অপহরণের শিকার হয় এর ভেতরে মারা যায় দুইজন।
অন্যদিকে আড়াইশোর বেশি মানবাধিকার সংগঠনের জোট শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালের জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৮০ টি।
বাংলাদেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা “যেমন খুশী মানুষ মারো” উৎসবের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে সমাজে বসবাস করতে পারে বলেই “নির্যাতন”, “ধর্ষন” ও “হত্যা” বাংলাদেশের একটি জাতীয় ক্রীড়া হিসাবে প্রতিষ্টিত হয়ে গেছে। যেহেতু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের খুনী হিসাবে বিচারের কোন দুরাশা নেই সেহেতু এই ক্রিড়াকে বিনোদন হিসাবে মেনে নিতে হবে।
Zahidul Islam Shahin liked this on Facebook.
Azim Uddin Arafat liked this on Facebook.
Mahbub Ishtiak Bhuiyan liked this on Facebook.
Sumon Sahin liked this on Facebook.
Ismail Mohammad liked this on Facebook.