ঘুম না আসার অনেক কারণ আছে। এক এক মানুষের এক বা একাধিক কারণে ঘুম আসেনা। ব্যক্তিগতভাবে আমি বলতে পারি আমার খুব ভাল ঘুম হয়। আমার ভাল ঘুম হবার কারণ হলো আমি সময়ের কাজ সময়ে করি। ভোরে ঘুম থেকে উঠি রাত দশটা এগারোটার ভেতর ঘুমিয়ে যেতে চেষ্টা করি। ব্যস্ততার জন্য হয়তো সেটা সব সময় সম্ভব হয়না । তখন চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে যায়। একবার চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে গেলে সেই ঘুমকে ফিরিয়ে আনতে অনেক সাধ্য সাধনা করা লাগে।
ঘুমানোর জন্য অনেক ধরনের চেস্টা করা যেতে পারে। শরীর যদি সম্পুর্নভাবে সুস্থ থাকে তাহলে ঘুম এসে যাবে। প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে, সাকসব্জী, ফল, সম্ভব হলে দুধ পান করলে পেট পরিস্কার থাকবে। ঘুম ভাল হবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম শুনলে অনেকেই ভাবে ব্যায়ামাগারে যাবার কথা। ঘরে বসেও খুব সহজে ব্যায়াম করা যায়। বেশীরভাগ (ইয়োগা) যোগাসন ঘরে বসেই করা হতো অতীতে। শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকলে ভাল ঘুম হয়। সূর্যের সাথে প্রকৃতি ও প্রানীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সূর্য উঠার সাথে শরীরে শক্তি আসে। সূর্য ডোবার সাথে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। অনেকেই সিফট ডিউটিতে রাতে কাজ করে্ন । সারারাত জেগে কাজ করেন তারপর সকালে আর ঘুমাতে পারেননা। রাতের ঘুম পালিয়ে যায় চোখে থেকে।
হাসিখুশি, সরল, সুন্দর মানুষ খুব তারাতারি ঘুমিয়ে যায়। চিন্তা যারা কম করে তারা ভাল ঘুমাতে পারে। স্বপ্ন যারা কম দ্যাখে তারা স্বপ্ন ভাঙ্গার দুঃখে কাতর থাকেনা তাই ভাল ঘুমাতে পারে। জটিল মানুষে্রা সহজে ঘুমাতে পারেনা। ঘুম একটি অভ্যাসের মত। সময়ের কাজ সময়ে করে ঘরের সব আলো নিভিয়ে দিয়ে ফেসবুক বন্ধ করে, মোবাইল বন্ধ করে, চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে হবে। ঘুম এসে যাবে। ঘুমের জন্য আয়োজন করতে হবে। ঘুমকে গুরুত্ব দিতে হবে। ঘুমানোকে একটি গুরুত্বপূর্ন কাজ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। নামায বা প্রার্থনার মত। যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু খাবার খেতে হবে । অতিরিক্ত খাবার খেলে ঘুম আসেনা আবার খালি পেটে থাকলেও ঘুম আসতে চায়না। বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। নিজেকে জানতে হবে। নিজের ক্ষমতা জানতে হবে। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত আমার নিজের দৌড় যেটুকু আমি ঠিক সেটুকু নিয়েই যদি সন্তুষ্ট থাকি তাহলে আর কোন আফসোস নাই। ইস অমূক হলোনা তমূক হলোনা । আমার কেনো এত কস্ট! আমার পথে কেনো এত বাঁধা !! ইত্যাদি হাবিজাবি চিন্তা করলে এইসব চিন্তারাই ঘুম আসার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে । তখন পথের বাঁধা অতিক্রম করা সম্ভব হবে না নির্ঘুমের ক্লান্তিতে অসময়ে ঘুম আসবে আর বাধাগুলো চিরকাল বাঁধা হয়েই থেকে যাবে।
বাংলাদেশ ফেসবুক অনেকেই সারারাত জেগে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিকেরা যখন কাজ করে তখন হয়তো বাংলাদেশে রাত আর যখন তাদের বিশ্রামের সময় তখন হয়তো বাংলাদেশে দিন তাই পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার জন্য অনেকেই তাদের ঘুমের সময়ের অনেকটা ব্যয় করেন। বাংলাদেশের অনেকেই রাতে ঘুমায় না। ফেসবুকে থাকে। বলে ঘুম আসেনা। অনেক প্রেমিক প্রেমিকা রাতে ফোন কানে দিয়ে বসে থাকে। ঝগড়া করে বা ভালবাসার কথা বলে ফলে আবেগ বা আক্রোশে ঘুমাতে পারেনা। অনেকে ছ্যাকা খাবার জন্য ঘুমাতে পারে। অনেকে জেগে থাকে প্রতারণা করার শিকার খোঁজার জন্য। জেগে থাকার অভ্যাস করে ঘুম আসেনা। ফেসবুক যখন ছিলনা, হাতে হাতে মোবাইল যখন ছিলনা তখন কি মানুষেরা সব নির্ঘুম কাটিয়ে দিতো সারারাত? হ্যাঁ এবং না। আমি যখন কিশোরী ছিলাম তখন রাতে ঘুমাতাম না বললেই চলে। আমি বই পড়তাম। ক্লাসের বই না। স্কুলের টেক্সট বই না। উপন্যাস বা অন্য সব ধরনের বই পড়তাম। অনেক অনেক অনেক বই পড়তাম। খুব ভোরে উঠতাম। সকাল দেখবো বলে। আমার সবচেয়ে প্রিয় সময় সকাল আর সন্ধ্যা। আমি দুপুর পছন্দ করিনা। বেশী রোদ। তপ্ত দুপুর। তবে বৃষ্টি হলে ভাল। বৃষ্টি হলে পাতারা সব সতেজ হয়, প্রকৃতি নেচে উঠে, ঘাস, পাতা, পথ, আকাশ সব ঝকমকে হয়ে উঠে। শুধু কস্ট হয় তাদের যাদের মাথার উপরে ছাদ নেই। যাদের মাথার উপরে টিনের চাল বা পলিথিনের ব্যাগের চাল, সেখান থেকে বৃষ্টির পানি চুইয়ে ঘরের ভেতরে যায়, তাদের জন্য রোদ দরকার, রোদ দরকার রোগ জীবাণু মুক্ত হবার জন্য রোদ দরকার, সূর্য উঠার দরকার আবার সূর্যের ঢুবে যাবার দরকার – আমাদের সকলের ঘুমের জন্য।
ইনসোমনিয়া (Insomnia)
ঘুমের অনিয়মকে ইংরেজীতে ইনসোমনিয়া বা স্লিপিং ডিজঅর্ডার বলে। যখন তখন ঘুমিয়ে পড়া বা একেবারে ঘুম না হওয়া দুইটাই ঘুমের অনিয়ম। ঘুমাতে হবে ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে। যদি তা না করা যায় তাহলে সেটাকে অনিয়ম হিসাবে ধরে নিতে হবে।
ঘুমে অনিয়মগুলো হচ্ছেঃ
— সারারাত জেগে থাকা বা ঘুম না আসা
— রাতে বার বার জেগে উঠা এবং আবার ঘুমাতে না পারা
— খুব ভোরে বা মাঝ রাতে জেগে উঠা
— ঘুম থেকে উঠে ক্লান্তবোধ করা
ইনসোমনিয়া দুই প্রকারেরঃ
প্রাইমারি ইনসমোনিয়া ও সেকেন্ডারী ইনসমোনিয়া
প্রাথমিক ইনসমোনিয়া যাদের আছে তাদের এই নির্ঘুমের কারণ শারীরিক নয় । সেকেন্ডারি ইনসমোনিয়া যাদের আছে তাদের নির্ঘুমের কারণ শারিরিক অর্থাৎ হয়তো কেউ হাফানী রোগে শ্বাস কস্টে ভোগেন বলে ঘুমাতে পারেন না, ডিপ্রেশনে ভোগেন বলে ঘুমাতে পারেনা না, বাতের ব্যাথায় কস্ট পা্ন সারারাত, ক্যানসার আছে, বুক জ্বলে বা ব্যাথা করে অথবা এইসবের যেকোন একটি বা একাধিক অসুখের কারণে তারা ঘুমাতে পারেন না বা তারা যে ওষুধ নিচ্ছেন সেই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারনেও ঘুম না আসার সম্ভাবনা থাকে।
ঘুম না আসার আরো কারনগুলো হলোঃ
বেকারত্বের জন্য, ডিভোর্সের কারণে, প্রেমে ব্যর্থ হবার কারণে, বিয়ে না হলে, বা সাথী খুঁজে পেতে সমস্যা দেখা দিলে, অসুস্থতাঁর কারণে, আবেগের কারণে, বাইরে শব্দের কারণে, গরমের কারণে, অতিরিক্ত আলোর কারণে, শীতের কারণে, গলা ব্যাথার কারণে, জ্বরের কারণে, মাথা ব্যাথার কারণে, কিছু কিছু ওষুধ আছে যা নিলে ঘুম আসেনা। অন্য কোন রোগ নিরাময়ের জন্য নেওয়া ওষুধ ঘুম কেড়ে নিতে পারে।
সেকেন্ডারী নির্ঘুম হবার কারণ হলো – ক্যানসার, বাত, হাফানী জাতীয় অসুখ যা শরীরে ব্যাথা, বেদনা বা শ্বাসকস্টের জন্য ঘুম না আসতে পারে। ঘুম না আসার আরো কারণ হতে পারে সারাদিন ঘুমানো আর সারারাত জাগা। বিরক্ত হওয়া, রাগ হওয়া, স্বরণ শক্তির সমস্যা দেখা দিলেও ঘুমাতে বেগ পেতে হয়।
প্রতিটি মানুষ জানে তার ঘুম না আসার কারণ। সকল সমস্যার সমাধান আছে বা সমাধান ছাড়া কোন সমস্যা নেই। আপনার শরীর আপনার সম্পদ। এই শরীরকে ভাল রাখা আপনার দায়িত্ব। শরীরকে ভাল রাখার জন্য মনকে ভাল রাখতে হবে। মনকে ভাল রাখার জন্য যা যা দরকার সব কিছুই হয়তো হাতের নাগালের ভেতরে থাকবেনা আর যা হাতের নাগালের ভেতরে নাই সেইসব কিছুকে ভুলে যেতে হবে। সেইসব কিছুর চাইতে ঘুম জরুরী। সুন্দর জীবনের জন্য আর স্বপ্নগুলোকে হাতের নাগালের ভেতরে পাওয়ার জন্য ঘুম বা বিশ্রামের দরকার আছে।
কেউ কারু জীবনের মালিক নয়। সৃষ্টিকর্তা আমাদের জীবনের মালিক। জীবনের সময় ক্ষুদ্র। জীবনের স্বপ্ন অনেক। অনেক স্বপ্ন পূরণ করার জন্য অনেক শক্তি দরকার । বিশ্রাম দরকার। তাই ঘুম প্রয়োজন। বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্য প্রয়োজন তেমনি খাদ্য হজম করার জন্য শরিরে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল দরকার আর শরীর যেহেতু একটি মেশিন তাই এই মেশিনের বিশ্রাম দরকার। ঘুমের প্রয়োজন । সুন্দর জীবনের জন্য শিশুর মতো ঘুম প্রয়োজন। প্রতি রাতে পাঁচ ঘন্টা ঘুম। বেশী কিছু নয়। শুধুমাত্র পাঁচ ঘন্টা ঘুমই আপনার সকল অপূর্ন স্বপ্ন পূরণ করার জন্য প্রেরণা যোগাতে পারে।