ঢাকা: চিকিৎসার নামে আবারো বারডেম হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছেন মাদক সম্রাট আমিন হুদা; মাদকের দুই মামলায় যার রয়েছে ৭৯ বছরের কারাদণ্ডাদেশ। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো তিনি এই হাসপাতালে ভর্তি হলেন। প্রতিবারই তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই হাসপাতালে ভর্তির জন্য অনুমতি নিয়ে আসেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত জুলাই মাস থেকে তিনি এই হাসপাতাল চিকিৎসাধীন। বারডেম হাসপাতালের ১৫ তলায় ১৫০১ নম্বর কেবিনে ভর্তি আছেন তিনি। বিলাসবহুল এই কেবিনের দৈনিক ভাড়া ৮ হাজার টাকা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনটিতে আছে ফ্রিজ, সোফাসেটসহ আরো অনেক কিছু।
সরেজমিনে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের একজন পুলিশ ওই কেবিনের বারান্দায় অলস পাঁয়চারি করছেন। আমিন হুদা এখানে ভর্তি আছেন কি না- এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে চাননি তিনি। তবে হাসপাতালটির একাধিক কর্মচারী এই প্রতিবেদককে গোপনে জানান, তিনি (আমিন হুদা) গত জুলাই মাস থেকে ভর্তি আছেন।
বারডেম হাসপাতালে বন্দীদের রাখার জন্য কোনো প্রিজন সেল নেই। কারাবিধি অনুযায়ী এখানে বন্দীদের চিকিৎসারও কোনো নিয়ম নেই। বারডেম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কারাবন্দীদের এখানে চিকিৎসা দিতে নিরুৎসাহিত করেন। তারপরও কারা কর্তৃপক্ষ, কারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে আমিন হুদা ক্ষমতার জোরে প্রতিবারই রহস্যজনক কারণে বারডেম হাসপাতালে চলে আসেন।
সূত্র জানায়, আমিন হুদা যে ভিআইপি কেবিনটিতে থাকেন তার দৈনিক ভাড়া ৮ হাজার টাকা। প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট সময়ে এই ভাড়া পরিশোধ করা হয়। এখানে তার নিরাপত্তার জন্য আছে নিজস্ব লোকজনও।
এর আগে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখে তিনি চিকিৎসার কথা বলে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই সময় এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। নানা মহল থেকে হযরানি করা হয় পত্রিকাটিকেও। এরপর গত বছরের শুরুর দিকে তিনি আবারো বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে অসেন। তখন প্রায় এক বছর তিনি হাসপাতালে কাটান। সেই সময় তিনি কার্ডিওলোজি (হৃদরোগ) বিভাগের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে আবারো লেখালেখি হলে তাকে জেলে ফিরিয়ে নেয়া হয়। অবস্থা ‘শিথিল’ হয়ে আসার পর চলতি বছরের ২৪ জুলাই তিনি আবারো বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এবার তিনি মেডিসিন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আছেন। ৭৯ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ার পরও গত প্রায় তিন মাস ধরে তিনি হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে জীবনযাপন করছেন।
এ বিষয়ে সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির শুক্রবার বলেন, আমাকে খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে বলতে হবে। তবে একজন বন্দীর উন্নত চিকিৎসা নেয়ার প্রভিশন আছে। নিজ খরচে যেকোন বন্দীই যেকোন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেন। বিএসএমএমইউতেও তো ওইসব রোগের উন্নত চিকিৎসা আছে। সেখানেতো প্রিজন সেল আছে। তবে আমিন হুদাকে কেন বিএসএমএমইউতে রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের সুস্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি সিনিয়র জেল সুপার।
বারডেম হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার এ প্রসঙ্গে জানান, আমিন হুদাকে এর আগে দুইবার আমরা ডিসচার্জ করেছি। কিন্তু উনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে লিখিত নিয়ে আসেন। তখন আমাদের কিছু করার থাকে না। আমাদের এখানে এভাবে বন্দীদের চিকিৎসার কোনো প্রভিশন নেই। তবে জেলখানার ডাক্তার যদি বলে দেন তখন আমরা নিতে বাধ্য হই। যদি কিছু হয়ে যায়, তখন তো আমাদের ওপর দোষ চাপবে। ওনার মাল্টিপল সমস্যা আছে।
নাজমুন নাহার আরো বলেন, আমরা সবসময়ই এখানে বন্দীদের চিকিৎসার বিষয়টি নিরুৎসাহিত করি। কারণ, ওইসব রোগীর সঙ্গে অনেক লোকজন আসে। এটা আমাদের জন্য সমস্যা। কারাবন্দী রোগীদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) আছে। এখানে বন্দীদের চিকিৎসা করতে না পাঠাতে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। কিছুদিন আগেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের হাসপাতালে আসলে আমিন হুদার বিষয়ে তাকে জানিয়েছি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বারবার লিখিত নিয়ে আসার কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এ ধরনের রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় বলেও জানান নাজমুন নাহার।
তিনি বলেন, শুধু আমিন হুদাই নয়। এ রকম আরো ২/৩ জন রোগী আছে এখানে। তারা চিকিৎসাও নিতে চান না। আবার হাসপাতালের টাকাও পরিশোধ করেন না।
আমিন হুদা বাংলাদেশের বিতর্কিত ব্যবসায়ী এবং ধনকুবের হিসেবে পরিচিত আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাগ্নে। তিনি নিজে একজন বড়মাপের মাদক ব্যবসায়ী। ২০০৭ সালে ২৬ অক্টোবর আমিন হুদার গুলশানের বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। এসময় দেড় লাখ পিস ইয়াবা এবং বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্যসহ তার সহযোগী আহসানুল হক হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় ২০১২ সালে ১৫ জুলাই তাদের দুজনের ৭৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। একইসঙ্গে ৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা আনাদায়ে আরো ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।
সুত্র- বাংলামেইল
Nurun Nabi Prince liked this on Facebook.
গাজী মোতালেব liked this on Facebook.
Rezina Akhter liked this on Facebook.
Moin Ahmed liked this on Facebook.
Jahangir Alom liked this on Facebook.
Mdshahjalal Shahjalal liked this on Facebook.