ভারতের কেরালার ছোট্ট শহর কোডিনি। শহরে আনুমানিক দুই হাজার পরিবারের বাস। একটি পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে শহরটি সম্পর্কে মজার তথ্য পেলেন দিল্লির আলোকচিত্রী জোরডি পিজারো। দুই হাজার পরিবারের এই শহরে যমজের সংখ্যা ২৫০ জোড়া, অর্থাৎ শহরটির ৫০০ জন মানুষই যমজ। তবে একটি শহরে এত সংখ্যক যমজের কারণ স্থানীয়দের কেউই ব্যাখ্যা করতে পারেননি। এমনকি এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও মেলেনি। ডেইলি টেলিগ্রাফের হিসাব অনুযায়ী, এই হার বিশ্বের অন্যান্য স্থানের ছয় গুণ, অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যমজ জন্ম নেয় এই শহরে।
শহরটির যমজদের সম্পর্কে জানতে ও তাঁদের ছবি দেখতে অনলাইনে ঢুঁ মারেন পিজারো। অবাক করার মতো বিষয় হলো, খুব কম সংখ্যকেরই ছবি তিনি অনলাইনে খুঁজে পান। সে জন্য নিজেই এই যমজদের ছবি তুলে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
একজন বন্ধু ও অনুবাদককে সঙ্গে নিয়ে ছবি তোলার এই যাত্রা শুরু করলেন পিজারো। শুরুতেই কেরালার রাজধানীতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, জেলার দক্ষিণ দিকের একটি গির্জায় কিছুদিনের মধ্যেই চারশ জোড়া যমজ জমায়েত হবেন। প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট দিনে আশপাশের এলাকায় বাস করা একই রকম দেখতে যমজরা এই গির্জায় এসে মিলিত হন। যমজদের সেই মিলনমেলার দিন গির্জা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছবি তোলার পূর্ণ স্বাধীনতাও পেলেন পিজারো।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে পিজারো বলেন, ‘সকালের নাশতা করে আমরা বসেছিলাম। দেখলাম, গির্জার সামনের সড়ক দিয়ে একই রকমে পোশাকে সজ্জিত হয়ে দলে দলে যমজরা আসতে শুরু করেছেন। আমি লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। এর পর যমজদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলাম।’ গির্জার ভেতরে আলো কম থাকায় যমজদের ছবি তোলার জন্য গির্জার বাইরের পরিবেশকেই বেছে নিলেন পিজারো। তার পর পেছনে প্রকৃতিকে রেখে উৎসবে আসা যমজদের ছবি তোলেন তিনি। এর পরদিন পিজারো বেরিয়ে পড়েন তাঁর মূল গন্তব্য, আড়াইশ জোড়া যমজের শহর কোডিনির পথে।
গির্জায় ছবি তোলার জন্য দারুণ পরিবেশ পাওয়ার পর পিজারোর ধারণা ছিল, কোডিনিতেও ছবি তুলতে কোনো সমস্যা হবে না তারা। কিন্তু তাঁর জন্য সেখানে বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। কারণ, স্থানীয় ‘যমজ সমিতি’র প্রধানের অনুমতি ছাড়া কোনো যমজ ব্যক্তিই তাঁকে ছবি তোলার অনুমতি দিচ্ছিলেন না। আরো অবাক করার বিষয় হলো, ছবি তোলার অনুমতির বিনিময়ে যমজ সমিতির প্রধান পিজারোর কাছে হাজার ডলার অর্থ দাবি করলেন। তবে আলোকচিত্রী হিসেবে নিজের নৈতিকতার কারণে পিজারো অর্থের বিনিময়ে ছবি তোলার অনুমতি নিতে অস্বীকৃতি জানান। এ ঘটনার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন পিজারো। সে সময়ই হঠাৎ করে তাঁর পরিচয় হয় একজন ব্যক্তির সঙ্গে, যিনি পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক। পিজারোর এই শহরে আসার কারণ জানতে পেরে তাঁকে নতুন একটি প্রস্তাব দেন ওই শিক্ষক। আর সেটি হলো, ওই ব্যক্তি পিজারোকে শহরের এমন কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন, যাঁদের বাড়িতে যমজ সন্তান আছে। বিনিময়ে ওই শিক্ষককে পিজারোর সঙ্গে ইংরেজি ভাষা অনুশীলনের সুযোগ দিতে হবে।
ছবিগুলোর চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার জন্য পিজারো ফটোশপের ভিনটেজ ফিল্টার ব্যবহার করেন এবং ছবিগুলোর পাশে বর্ডার যুক্ত করেন। ছবিগুলোর মধ্যে একটি জাদুকরি আবেশ দিতেই তাঁর এই প্রচেষ্টা। সে সঙ্গে ছবিগুলো দেখে যেন পারিবারিক অ্যালবামে দেখা ছবি মনে হয়, সে বিষয়টিও মাথায় ছিল তাঁর। প্রস্তাবটি এককথায় লুফে নেন পিজারো। পুরো তিন দিন ওই স্থানীয় শিক্ষকের সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে বেড়ান পিজারো। সেখানে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। শহরের প্রতিটি মানুষ পিজারোকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং একজন পেশাদার আলোকচিত্রীর হাতে ছবি তুলতে পেরে তাঁরা ভীষণ আনন্দিত হন।
গির্জার বাইরে যেভাবে ছবি তুলেছিলেন, এখানেও সেই একই ধরনের গাছপালা পেছনে রেখে একই ধরনের পোশাক পরিয়ে যমজদের ছবি তোলার সিদ্ধান্ত নিলেন পিজারো। নিজের ওয়েবসাইটে এই যমজদের তোলা ছবির যে অ্যালবামটি করেছেন, পিজারো তার নাম দিয়েছেন ‘গুড থিংস কাম টুগেদার’।
Moin Ahmed liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.
Shahieen Miah liked this on Facebook.
মোঃ নয়ন আহমেদ liked this on Facebook.