ব্যাংককে হামলার পর সতর্ক করা হয়েছিল বাংলাদেশকে

ব্যাংকক হামলায় জড়িত ব্যক্তির ঢাকায় প্রায় দুই সপ্তাহ অবস্থান নেওয়া এবং তার গ্রহণ করা পরিকল্পনা-সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দাতথ্য থেকেই বাংলাদেশে সতর্কতা জারি করেছিল বিদেশি রাষ্ট্রগুলো। স্থগিত করা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সফর। দূতাবাসগুলো থেকে সরকারকে দেওয়া আগাম তথ্যে বলা হয়েছিল, বিদেশি কূটনীতিকদের একটি বৈঠকে এ হামলা হতে পারে। অবশ্য দুই দিন পর এ শঙ্কার তথ্য প্রত্যাহারও করে নেওয়া হয়। কিন্তু এরই মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টে দেয় বাংলাদেশে দুই বিদেশি নাগরিকের খুন। মাত্রাতিরিক্ত সতর্ক হয়ে পড়েন বাংলাদেশে থাকা বিদেশিরা। অন্যদিকে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর ভ্রমণ সতর্কতা একবার জারি করা হলে প্রায় দুই সপ্তাহ তা বলবৎ থাকে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ হালনাগাদ করা ব্রিটিশ হাইকমিশনের সতর্কতা আরও এক সপ্তাহ থাকতে পারে। একইভাবে অন্য রাষ্ট্রগুলোর সতর্কতাও এক সপ্তাহের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের পক্ষ থেকে ঢাকার পররাষ্ট্র দফতরকে গোয়েন্দাতথ্যের ভিত্তিতে হামলার আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছিল। সেই তথ্যে ব্যাংককের মন্দিরে হামলার সঙ্গে সম্পৃক্তদেরই পরিকল্পনা অনুসারে বাংলাদেশে বিদেশিদের ওপর হামলা হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। সূত্রমতে, ১৭ আগস্ট সন্ধ্যায় ব্যাংককের ইরাওয়ান শ্রাইন নামের একটি মন্দিরে বোমা হামলায় বিদেশি পর্যটকসহ অন্তত ২১ জন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হন। এ ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন আবদুর রহমান আবদুস সাত্তার ওরফে এ কে আইজান চীনা পাসপোর্ট নিয়ে ১৬ আগস্ট বাংলাদেশ বিমানে ব্যাংকক থেকে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় প্রায় ১৫ দিন অবস্থান করে ৩০ আগস্ট জেট এয়ারওয়েজে ভারত হয়ে চীন চলে যান তিনি। এ কে আইজান ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার দুই দিন পর থাইল্যান্ড পুলিশ বাংলাদেশকে তার ঢাকা আসার খবর দেয়। পরে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তার ঢাকা আসার তথ্যের সত্যতা পায়। কিন্তু ইতিমধ্যে ঢাকা ত্যাগ করায় তাকে আর গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ঢাকায় তিনি কোথায় ছিলেন, কার কার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এসব বিষয়ে গোয়েন্দারা তথ্যানুসন্ধান শুরু করে এবং তা চলছে। জানা যায়, চীনের জিনজিয়ানকে পাসপোর্টে জন্মস্থান হিসেবে উল্লেখ করা আইজান ব্যাংকক হামলার আগের দিনই থাইল্যান্ড ত্যাগ করেন। কিন্তু সেদিনই তিনি এক ব্যক্তিকে একটি ব্যাকপ্যাক হস্তান্তর করেন। ওই ব্যক্তিকেই পরে মন্দিরে ব্যাকপ্যাকটি রাখতে দেখা যায় সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরায়। এদিকে সেপ্টেম্বরে মাঝামাঝি অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে ঢাকাকে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের তথ্য থেকে শঙ্কা প্রকাশ করে জানানো হয়, আইজান ঢাকায় অবস্থানকালে তার নেওয়া পরিকল্পনায় এখানে বিদেশিদের সমাগম হয় এমন একটি স্থানে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ জঙ্গি হামলা হতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সফর স্থগিত করে সফরে আসেন তাদের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। যদিও পরে সে আশঙ্কা আর নেই বলে জানিয়েছিলেন বিদেশি গোয়েন্দরা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা দল ঢাকায় থাকাকালেই ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে গুলিতে নিহত হন ইতালীয় নাগরিক তাভেলা সিজার এবং পরে ৩ অক্টোবর রংপুরে একই কায়দায় নিহত হন জাপানের নাগরিক হোশি কোনিও। এর আগে-পরে একে একে বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে ইতালি আগেই সতর্কতা প্রত্যাহার করে। যুক্তরাষ্ট্র ১ অক্টোবরের পর আর সেই সতর্কবার্তা আপডেট করেনি। সর্বশেষ শুধু ৯ অক্টোবর যুক্তরাজ্য আবারও হামলার শঙ্কা প্রকাশ করে সতর্কবার্তা হালনাগাদ করে। এই ভ্রমণ সতর্কবার্তাগুলোতে বাংলাদেশ সফরকালীন সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সতর্কতা নেওয়ার জন্য বলা হয়।

নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক :
ঢাকায় কর্মরত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য-রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা গতকাল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। প্রতি মাসেই একবার তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে থাকেন। তবে এবারের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে জোর আলোচনায়।ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বাসার সামনে ব্যারিকেড : ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসনের বাসার সামনে একটি নিরাপত্তা ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে হাইকমিশনার নিজেই এ ধরনের নিরাপত্তা চেয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

১৫ thoughts on “ব্যাংককে হামলার পর সতর্ক করা হয়েছিল বাংলাদেশকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *