আমিরাতের আজমান ভিসা জটিলতায় হতাশ ব্যবসায়ীরা

কামরুল হাসান জনি, ইউএই:

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবী ও দুবাই শহরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম নয়। কিন্তু এ দুটি শহরে বর্তমানে নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেন সোনার হরিণ! অথচ আমিরাতের অন্যতম বিভাগ আজমানকে প্রবাসী ব্যবসায়ীরা বলছেন ‘ব্যবসা বান্ধব শহর’। এখানে অন্য শহরগুলোর তুলনায় সহজে লাইসেন্স পাওয়া ও কম মূলধনে নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করা সুযোগ থাকায় নিত্যনতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন প্রবাসীরা। এমনকি আজমানেই রয়েছে আল-হারামাইন গ্রুপ, প্রাণ ও বনফুলের মতো বেশ কয়েকটি নামকরা দেশীয় প্রতিষ্ঠানের শাখা। আজমান ইন্ড্রাস্টিয়াল এলাকাটি আবার গ্যারেজ, স্পেয়ার পার্টস ও গার্মেন্টস শিল্পের দিক থেকেও এগিয়ে। এসব সেক্টরেও বাংলাদেশিরা ব্যবসা করেছেন সুনামের সাথে। তবে ভিসা জটিলতায় হতাশ এখানকার ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী প্রবাসীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আবুধাবী ও দুবাই থেকে ভিন্ন এই আমিরাত। ধূলো মাখা পথ-ঘাট। তুলনামূলকভাবে সাধারণ জীবনমান এখানকার শ্রমিকদের। এখানে শ্রমজীবী প্রবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান সংখ্যা গরিষ্ঠ। সস্তায় ভাড়া বাসা ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়ায় অনেক বাংলাদেশি পরিবারও বসবাস করছেন এখানে। শুধু তাই নয় আজমানে নিজস্ব জায়গার মালিকও আছেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি। সবকিছু হাতের নাগালে থাকায় ব্যবসায়ীরাও এ অঞ্চলে ব্যবসা করছেন সানন্দে।

আজমান ইন্ড্রাস্টিয়াল এলাকায় দেখা যায় রাস্তার দুপাশে অসংখ্য বিকল গাড়ি আর গ্যারেজ। অনেক গ্যারেজের সাইটবোর্ডে দূর থেকে চোখে পড়লে দেখা যায় লাল-সবুজ রংয়ের ডিজাইন। কাছে গিয়ে জানা যায়, ওগুলো সবই বাংলাদেশিদের প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশিদের সাফল্য আর গৌরব গাথাঁর অনেক গল্প রচিত হয়েছে সেখানে। এ অঞ্চলে গ্যারেজ ব্যবসায় চট্টগ্রাম প্রবাসীদের আধিপত্যসহ গ্যারেজ ও স্পেয়ার পার্টসের শতকরা ৬০ ভাগ ব্যবসায়ী বাংলাদেশি। একই হিসাবের কম নয় গার্মেন্টস শিল্পেও। বলা যায়, গ্যারেজ ছাড়াও আজমান শহরটি গার্মেন্টস শিল্পের জন্যেও বেশ খ্যাত। দুটি সেক্টরেই সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশি লাখ শ্রমিক।

তবে এখানকার ব্যবসায়ী মালিক পক্ষ হতাশার সাথে বলছেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানের মালিক বাংলাদেশি সেখানে কর্মী নিজ দেশী হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভিসা জটিলতায় বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন যোগদান করছে ভিনদেশি শ্রমিক। যা একদিকে মালিকদের জন্য হতাশার গল্প রচনা করছে, অন্যদিকে রেমিটেন্স প্রবাহে বাংলাদেশের গতি করছে মন্থর।’

৮০০ দিরহাম মজুরীপ্রাপ্ত একজন গ্যারেজ শ্রমিক জানান, ‘কাজ ভাল জানা থাকলেও ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় অন্য কোথায় চেষ্টা করতে পারছিনা। অথচ ভিসা খোলা থাকলে বর্তমানে দুই থেকে আড়াই হাজার দিরহাম বেতনেও কাজ করতে পারতাম।’

স্পেয়ার পার্টস ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম প্রবাসী ইসমাঈল গনি চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘আজমানে ব্যবসা করার যে সুযোগ আছে, তা অন্য বিভাগগুলোতে নেই। এখানে লাইনেন্স নেয়া ও ব্যবসা করার যায় সহজে। এটি ব্যবসা বন্ধব শহর। ভিসা বন্ধ থাকলেও অনেকে বিনিয়োগকারীর ভিসা নিয়ে আজমানে এসে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করছেন। তবে বাংলাদেশি শ্রমিক ভিসা বন্ধ ও নতুন কর্মী নিয়োগের সুযোগ না থাকায় কিছুটা পিছিয়ে পড়ছেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তরা। দ্রুত ভিসা জটিলতার অবসান হলে আরো অসংখ্য প্রবাসী এ শহরে সুনামের সাথে ব্যবসা করতে পারবেন বলে তিনি জানান।’




১৭ thoughts on “আমিরাতের আজমান ভিসা জটিলতায় হতাশ ব্যবসায়ীরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *