জাতিসংঘের সামনে পতাকা উড়ে আর পতাকার দেশে বোমা পড়ে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ২৪শে অটোবর, ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ গঠন করা হয়েছিল যাতে এই রকম যুদ্ধ আর না হয়। তখন যেসব দেশ জাতিসংঘ গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয় সেইসব দেশ নিজেদের ভেতরে রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে গেলেও কেউ কারু সাথে যুদ্ধ করেনা। কানাডা আমেরিকার উপরে বোমা ফ্যালেনা। গ্রেট বৃটেন ইতালী, বা স্পেন বা পর্তুগালে বা আমেরিকা বা কানাডাতে বোমা ফেলবেনা। এরা এখন বন্ধু। এরা পরস্পরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক লেনদেন করে। ৫১টি রাস্ট্র তখন জাতিসংঘের সদস্য ছিল এখন সদস্য সংখ্যা হলো ১৯৩টি রাস্ট্র। জাতীসংঘের হেড অফিস মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে অবস্থিত। জাতিসংঘের আরো তিনটি অফিস আছে ভিয়েনা (অস্ট্রিয়া), নাইরোবী (কেনিয়া) ও জেনেভাতে (সুইজারল্যান্ড )।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট জাতিসংঘ গঠনের প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহন করেন।

ভূমধ্যসাগরের উত্তর তীরে আর লোহিত সাগরের দক্ষিন তীরে পালেস্টাইনের একটি অংশকে ইহুদীরা দখল করে নেয়। এর আগে এই এলাকাতে যারা বসবাস করতো তারা হলো কানোনিটিস, আমোরিটেস, মিশর, ইসরায়েলটিস, মোবিটেস,আমোনিটেস, ফিলিস্তিন, পারসিয়ান, বাবিলিয়ান, গ্রীক, রোমান, বাইজেন্টাইন্স, ফ্রেঞ্চ, তুরস্কের ওসমান সম্রাটেরা, বৃটিশ জর্ডান (১৯৪৮-১৯৬৭) ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক (পশ্চিম তীর), মিশর (গাঁজা), আধুনিক ইসরায়েলী ও পালেস্টাইনীরা। প্যালেস্টাইনকে অনেক নামে ডাকা হয়েছে, যেমন ঃ ক্যানোন, যিওন, ইসরায়েলীদের ভূমি, উতর সিরিয়া, জান্ড ফিলাস্তিন, পবিত্র ভূমি ইত্যাদি। ইসরায়েলীরা এখন বলতে গেলে পুরা পালেস্টাইন দখল করে ফেলেছে। পালেস্টাইনীরা বহুকাল ধরেই রিফুইজী ক্যাম্পে থাকে। পালেস্টাইন সভত্যার শুরু হয় অনেক আগে। ব্রোঞ্জ যুগে স্বাধীন কানোনিটিস রাস্ট্র গঠন করা হয়। চারিপাশে সাগর থাকার জন্য এই এলাকাটি ছিল মূলত কৃষি নির্ভর ও সবুজ। মিশরীয়রা দখল থেকে ইউরোপীয় দস্যুদের দখলে চলে যায় প্যালেস্টাইন। সব দখলদারেরাই নিজেদের জন্য একটি স্থায়ী ও নিরাপদ আবাসভূমি বানিয়ে নিয়েছে। ওরা অন্য দেশে যেয়ে যেভাবে নিপীড়ন চালায় সেভাবে যেন ওদের নিজেদের দেশের মানুষেরা নিপীড়িত না হয় সে জন্য অনেক আইন কানুন পাইক পেয়াদা তৈরি করে রেখেছে। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে শ্বেতাংগেরাও নিজ দেশে যুদ্ধ করেছে বহুকাল ধরে। ইতিহাস থেকে ওরা শিক্ষা নিয়েছে। আমেরিকা, কানাডা থেকে স্থানীয় জনগনকে উচ্ছেদ করে দখল করে নিয়েছে তাদের আবাসভূমি। নিজেদের বসবাসের জন্য স্বর্গ রচনা করেছে এবং সেই স্বর্গকে রক্ষা করার জন্য জাতিসংঘ গঠন করেছে। নিজেদের স্বর্গ সংরক্ষণ করে অন্য দেশগুলোকে নরক বানিয়ে ফেলছে প্রতিনিয়ত। অন্য দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে নিজেদের দেশের উন্নয়নের কাজ চলছে যুগ যুগ ধরে। ১৯০০ সালের শেষের দিকে ইউরোপের ইহুদীরা আরবের দেশগুলোতে এসে আশ্রয় নেয়। এরা তখন এইসব এলাকাতে রিফুউজী ছিল। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সাড়া ইউরোপ থেকে ইহুদী রিফুউজীরা এসে আরবের দেশগুলো বিশেষ করে প্যালেস্টাইনে এসে আশ্রয় নেয়।

১৯২২ সালে তুরস্কের ওসমান সম্রাজ্যকে পরাজিত করার পরে জাতীসংঘ পুরস্কৃত করে বৃটিশদের। এই পুরস্কার ছিল বৃটিশ ম্যান্ডেট ফর প্যালেস্টাইন – প্যালেস্টাইন শাসনের দায়িত্ব ভার বৃটিশদের উপরে বর্তায় (British Mandate for Palestine )। অন্যদিকে জার্মান নাজিদের নির্যাতনের শিকার ইহুদী রিফুইজীদের জন্য একটি নিরাপদ আবাসভূমির জন্য চাপ আসতে থাকে সাড়া বিশ্ব থেকে। ইউরোপের সকল দেশেই ইহুদীরা নির্যাতিত হয়ে পালাতে থাকে। আশ্রয় নেয় আরব দেশগুলোতে। তখন জাতিসংঘ সিদ্ধান্ত নেয় তিনটি দেশের – আরব, পালেস্টাইন, ও ইসরায়েল। ১৯৪৭ সালে পালেস্টাইনের একটি অংশকে ইহুদীদের স্থায়ী আবাসভূমি হিসাবে জাতীসংঘ স্বীকৃতি দেয়। তখন থেকেই শুরু হয় প্যালেস্টাইনীদের তাদের নিজেদের আবাসভূমি থেকে বিতারিত করার পালা। ইসরায়েলীরা নানাভাবে পালেস্টাইনীদের নির্যাতন করে। জার্মানে যেভাবে ইহুদীরা নির্যাতিত হয়ে নিজ আবাসভূমি থেকে বিতারিত হয়ে প্যালেস্টাইনে আসে ঠিক একইভাবে প্যালেস্টানীদের উপরে নির্যাতন করে যাতে ওরা ওদের ঘরবাড়ি ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যেয়ে অন্যদেশে আশ্রয় খুঁজে নেয়।

১৯৪৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল পালেস্টাইনীদের উপরে প্রতি বছর প্রায় তিন থেকে চার বার আক্রমণ করেছে কিন্তু জাতিসংঘ কিছু বলেনি। জাতীসংঘের উপরে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে আর মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের অর্থনীতিতে ইহুদী পুঁজিপতিদের বিনিয়োগ প্রায় ৭০%। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের অর্থনীতি বলতে গেলে ইহুদী পুঁজিপতিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সেকারনেই মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য নিয়মিত আর্থিক ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা প্রদান করে থাকে। অন্যভাবে দেখতে গেলে দেখা যাবে সাড়া বিশ্বের অর্থনীতিকে যে দেশের পুঁজিপতিরা নিয়ন্ত্রন করে তার ভেতরে ইহুদী, চীন, জাপান অন্যতম। প্যালেস্টনীদের জন্য জাতিসংঘ প্যালেস্টাইনেই রিফুউজী ক্যাম্প বানিয়েছে। বিদেশের রিফুউজীদের জন্য স্থায়ী আবাসভূমি প্রতিষ্টিত করে প্যালেস্টাইনীদের জন্য রিফুইজী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। জাতীসংঘ এইসব রিফুজী ক্যাম্পে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করে। প্যালেস্টাইনী শিশুরা জাতিসংঘের স্কুলে পড়ালেখা করে, জাতীসংঘের কৃপাতে প্যালেস্টাইনীরা নিজ বাসভূমে রিফুউজী হিসাবে বসবাস করে। আর কিছুদিন পর পর ইসরায়েলী রকেট হামলায় প্রানত্যাগ করে।

আমি এখানে কোন রক্তাক্ত ছবি পোস্ট করছিনা। রক্ত দেখতে আর ভাল লাগেনা। জাতিসংঘের অফিসের সামনে প্যালেস্টাইনী পতাকা উড়ছে সে ছবিও আমি এখানে পোস্ট করবোনা। জাতীসংঘের রসবোধ ব্যাপক। মার্কিন যুক্তরাস্ট্র জাতিসংঘকে প্রচুর চান্দা দেয় । মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ও বিশ্বের বহুজাতিক পুঁজিপতিরা সাড়া বিশ্বের সম্পদশালী দেশেগুলোতে লুন্ঠন চালায় ফলে নানা রকমের রাজনীতির আশ্রয় নেয়। সোজা আঙ্গুলে ঘি না ঊঠলে এরা বোমা ফেলে এইসব দেশের মানুষকে বসতহারা করে, হত্যা করে তারপর লুটপাট করে নিজেদের দেশের উন্নয়ন সাধন ও পুজিবৃদ্ধি করে। একদিকে রিফুউজি সৃষ্টি করে অন্যদিকে জাতিসংঘকে চান্দা দেয় এইসব রিফুউইজীদের মুখে রুটি ছুঁড়ে মারার জন্য। এখন সিরিয়াতে বোমা বর্ষন করছে, সিরিয়ার মানুষেরা পালাচ্ছে ঠিক জার্মান ইহুদীদের মত বা অস্ট্রিয়ার ইহুদীদের মত বা ইউরোপের অন্যান্য দেশের ইহুদীদের মত আর সিরিয়া ফাঁকা করা হচ্ছে সিরিয়াতে পাওয়া খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রন হাতে নেবার জন্য। পাকিস্তানেও চলছে বোমাবাজী। প্যালসেটাইনের ভূমি, ইরাকের তেল, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক, সব দেশ এখন বিধ্বস্ত । মাঠ ফাঁকা। রাজনীতি চলছে। জাতিসংঘ সার্কাস দেখাচ্ছে। সাধারণ মানুষ আবেগে আপ্লুত হচ্ছে। প্যালেস্টাইন লিবারেশন ওরগানাইজেশন এর চেয়ারম্যান আব্বাস মাহমুদ প্যালেস্টাইনী পতাকাতে চোখ মোছার কিছুক্ষণ আগে প্রভুদের চরণে মাথা ঠেকিয়েছিল। আব্বাস মাহমুদ হলেন বহুজাতিক পুঁজিপতিদের পালা ফালতু কুত্তা। বিভিন্ন দেশের নানাবিধ সম্পদ লুট করার জন্য কিছু কুকুর প্রজনণ করা হয়েছে । বিশ্বের সব দেশেই আব্বাস মাহমুদের মত কুকুর আছে। এদের কারনেই লুটপাটে এত আনন্দ। জাতিসংঘ সার্কাস আর শান্তি পুরস্কারের তামাশা চলে সাড়া বিশ্বের লাখো কোটি মানুষকে নিপীড়নের মধ্য দিয়ে।

চলতি বছরে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র দুই বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে ইসরায়েলের কাছে। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও রাজনীতিবিদেরা একটা কথা প্রায়ই বলে থাকে তা হলো Israel “has the right to defend itself” — প্রতিরক্ষা করার অধিকার ইসরায়েলের আছে। জাতিসংঘের সব সদস্য দেশ বিশ্বাস করে প্রতিরক্ষা করার অধিকার এইসব সদস্য দেশগুলোর আছে। প্রতিরক্ষা করার অধিকার তাদের নেই যারা এইসব সম্পদশালী দেশে জন্ম নিয়েছে। তাই তারা সাগরের মত ভেসে যায় এক কূল থেকে অন্য কূলে ।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *