ঢাকা: বাংলাদেশে পশ্চিমা দূতাবাসগুলো তাদের কূটনীতিকদের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজারকে হত্যার পর আরো বিদেশি টার্গেটে পরিণত হতে পারেন বলে আশঙ্কা বাড়ছে।
এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে আইএস। প্রথমবারের মত বাংলাদেশে কোনো হত্যার দাবি করল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই জঙ্গি সংগঠনটি।
এদিকে বুধবার ঢাকায় একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অঞ্চলে পশ্চিমা স্বার্থ লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হামলার আশঙ্কায় উদ্বেগে প্রহর গুনছে এখানবার পশ্চিমা দূতাবাসগুলো। এরই মধ্যে গত সোমবার ঢাকার গুলশানের কূটনৈতিকপাড়ায় ইতালির একজন ত্রাণকর্মী দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হওয়ায় তাদের উদ্বেগ ও শঙ্কা আরো বেড়েছে। পশ্চিমা দূতাবাসগুলো তাদের কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের চলাফেরা সীমিত করার পাশাপাশি ওই দেশগুলোর নাগরিকদের উচ্চমাত্রার সাবধানতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া বলেছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি আছে এবং এ মাসের শেষ দিকেই এ দেশে পশ্চিমা স্বার্থগুলোর ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে জঙ্গিরা।
সোমবার ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজারকে হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ন্যান্সি ভ্যান হর্ন মঙ্গলবার বিকেলে জানান, বাংলাদেশে অব্যাহত ঝুঁকি ও ইতালির একজন নাগরিক হত্যার বিষয়ে তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে শক্তিশালী আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একজন ইতালীয় নাগরিক হত্যার বিষয়ে অবগত। নিহতের পরিবার, বন্ধু ও ইতালির প্রতি যুক্তরাষ্ট্র গভীর সমবেদনা জানায়।
এর আগে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস গত সোমবার তার নাগরিকদের দুই দফা নিরাপত্তা বার্তা দেয়। প্রথমটিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা স্বার্থগুলোকে লক্ষ্য করে জঙ্গিরা পরিকল্পনা করে থাকতে পারে বলে বিশ্বাসযোগ্য নতুন তথ্য আছে। এ ধরনের হামলা যদি হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকসহ অন্য বিদেশিদের ওপরও হতে পারে।’
ওই বার্তায় আরো বলা হয়, ‘ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির আলোকে আন্তর্জাতিক হোটেলের অনুষ্ঠানসহ বিদেশিদের সমাগম হয় এমন অনুষ্ঠানগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের যোগ দেওয়া সীমিত করার কথা বিবেচনা করা উচিত। রেস্তোরাঁ, হোটেল ও বিদেশিরা প্রায়ই যায় এমন স্থানগুলোসহ জনসমাগমস্থলগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের উচ্চমাত্রায় সতর্কতা, পরিস্থিতি সম্পর্কে সাবধানতা ও সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত।’
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার নাগরিকদের নিরাপত্তা বার্তায় আরো জানায়, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এ অঞ্চলে, সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্থাপনা, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা স্বার্থে হামলার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে- এমন তথ্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার অব্যাহতভাবে পেয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অবস্থান বা পশ্চিমারা সমবেত হয় বা যায় বলে পরিচিত এমন স্থানগুলোতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালানোর আগ্রহ ও সক্ষমতা দেখিয়েছে। তাই আঞ্চলিক নিরাপত্তা দপ্তরের অনুমতি না থাকলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্মকর্তাদের পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক হোটেলের অনুষ্ঠানসহ বড় ধরনের জনসমাগমে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করা হলো।’
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বাংলাদেশে তার নাগরিকদের বা বাংলাদেশ সফরে আগ্রহী আমেরিকানদের স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে উচ্চমাত্রার সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বাংলাদেশে জনসমাগমের স্থানগুলো এড়িয়ে চলা, যে স্থানে যাবে সে সম্পর্কে জানা ও বিক্ষোভ বা সহিংসতা হলে কী করবে সে বিষয়ে পরিকল্পনা করা, নিজ নিজ এলাকায় নিরাপদ স্থান যেমন পুলিশ স্টেশন, হাসপাতাল, সরকারি ভবনগুলো সম্পর্কে জানা এবং প্রয়োজনের সময় সেখানে দ্রুত পৌঁছার উপায় ঠিক করা, কোথায় যাবে ও কখন ফিরবে সে বিষয়ে সহকর্মী বা প্রতিবেশীদের জানানো, জনসমাগমে নিজেকে গুটিয়ে রাখা, জরুরি প্রয়োজনীয় নম্বরগুলো মোবাইল ফোনে রাখা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসূচি স্থগিত বা বাতিলে প্রস্তুত থাকা এবং উদ্বেগ থাকলে নিকটস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বা কনস্যুলেটে তা জানাতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস পরামর্শ দিয়েছে।
সোমবার ইতালির নাগরিক নিহত হওয়ার পর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার নাগরিকদের দ্বিতীয় নিরাপত্তা বার্তায় জানায়, ‘ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের তাদের নিরাপত্তা অভ্যাস পুনর্বিবেচনা এবং অপরিহার্য হলে প্রয়োজনীয় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। সব সময়ের মতো আপনারা নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ এবং স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক থাকুন। আপনাদের নিরাপত্তা ও পরিস্থিতি বিষয়ে উচ্চমাত্রার সজাগ থাকতে সব সময় পরামর্শ দেওয়া হয়।’
ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিক সম্প্রদায় জানায়, ইতালির নাগরিক হত্যাকা-কে তারা প্রথমে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আইএস হত্যার দায় স্বীকারের পর তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। বিষয়টিকে তারা এখন খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন।
এ ছাড়া গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের নির্ধারিত বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে এ সপ্তাহের শুরুতে ওই দেশটির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা জানানোর পরই ঝুঁকির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখতে ওই দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তা শাখার প্রধান শ্যান ক্যারল বাংলাদেশে এসে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করেন।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গত শুক্রবার প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, জঙ্গিরা বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থে আঘাত হানার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে বলে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলেও ওই বার্তা অপরিবর্তিত ছিল। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের উচ্চমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় কর্মকর্তাদের বিদেশিদের সমাগমের স্থান এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আরো বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে সন্ত্রাসের উচ্চমাত্রার ঝুঁকি আছে। বাংলাদেশ অতীতে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠনসংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করা অব্যাহত রেখেছে। ওই গোষ্ঠীগুলোর কারো কারো পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব আছে। পশ্চিমা স্বার্থের বিরুদ্ধে এ দেশে আরো হামলা হতে পারে।’
ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ইতালির ত্রাণকর্মী তাবেলা সিজারকে হত্যার খবর জেনে তিনি হতাশ।
গিবসন বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে অসহায় মানুষকে সহায়তায় কাজ করা একজন ত্রাণকর্মীকে হত্যা ভয়ংকর ও কাপুরুষোচিত অপরাধ। তাবেলার পরিবার ও স্বজনদের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাই।’
কানাডার পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশজুড়ে ভ্রমণের বিষয়ে কোনো বিশেষ পরামর্শ নেই। তবে ভঙ্গুর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে উচ্চমাত্রার সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে কানাডা বলেছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসের ঝুঁকি আছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য সরকার তাদের নাগরিকদের জানিয়েছে যে বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থের বিরুদ্ধে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আছে। হামলার আশঙ্কা এড়িয়ে দেওয়া যায় না এবং এ হামলা হতে পারে বাছবিচারহীন। যেকোনো সময় সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে এবং বিদেশি পর্যটক ও প্রবাসীরা সাধারণত বেশি যায় এমন এলাকা হামলার লক্ষ্য হতে পারে।
জানা গেছে, ঢাকায় ইতালির দূতাবাসও বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাবেলা সিজার হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচারের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে।
ইতালি দূতাবাস আরো জানায়, আইএসের ওই হত্যার দায় স্বীকারের বিষয়টিও এখনো যাচাই করা যায়নি। তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইতালি দূতাবাস তার নাগরিকদের হোটেল, রেস্তোরাঁ, ক্লাব ও আন্তর্জাতিক স্কুল এবং বিদেশিদের সমাগম হয় বা প্রায়ই বিদেশিরা যায় এমন স্থানগুলো এড়িয়ে চলার আহ্বান জানায়।
এদিকে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেন্তিলিয়োনি দেশটির জাতীয় সংবাদ সংস্থা আনসাকে বলেছে, আইএস সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী বাংলাদেশে ইতালির এক নাগরিককে হত্যার যে দাবি করেছে, তার দপ্তর এর সত্যতা যাচাই করার কাজ করছে।
ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাস গতকাল বিকেলে তাবেলার সিজার ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানায়। দূতাবাস একই সঙ্গে বর্বর ওই আগ্রাসনের দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহহ্বান জানায়।
ঢাকায় স্পেন দূতাবাসসহ অন্য পশ্চিমা কূটনৈতিক মিশনগুলোও তাদের নাগরিকদের চলাফেরার বিষয়ে সতর্ক করেছে। নিরাপত্তার শঙ্কার কারণে ঢাকায় বিদেশি কয়েকটি ক্লাব ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গতকাল বন্ধ ছিল।
Shaifuddin Sikder liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.
Moin Ahmed liked this on Facebook.
Md Liton liked this on Facebook.
Jahangir Kabir liked this on Facebook.
Masud Rana Rana liked this on Facebook.
হাজী মাছুম বিল্লাহ্ liked this on Facebook.
Shihab Dipu liked this on Facebook.
Mijanur Rahman liked this on Facebook.