ধর্ষিতা রক্ষা করল ধর্ষকের প্রাণ

ঢাকা: সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসিতে এক ব্রিটিশ নারীর জীবনের বাস্তব তিক্ত অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা কোনো সাধারন অভিজ্ঞতা নয়। কারণ এখানে যে ঘটনার বর্ণনা রয়েছে তা সত্যিই বিরল। সুসান কোপস্টিক (৫৬) নামের একজন নারী এমন একজনের প্রান বাঁচিয়েছেন যে তাকে ধর্ষণ করেছিল। কিন্তু সুসানের বিবৃতিতে এটাই প্রকাশ পায় যে তিনি দয়া করে তার প্রাণ বাঁচাননি বরং ধর্ষককে দীর্ঘসময় ধরে তার শাস্তি ভোগ করার একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছেন মাত্র।

গণমাধ্যমে সুসান যখন গত বছর নভেম্বরের সেই ঘটনা বর্ণনা করছিলেন তখন তিনি নিজেকে বারবার শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন। ঐদিন তিনি তার সাবেক সহযোগী পিটার ড্রুমান্ড (৬২) এর প্রাণ রক্ষা করেছিলেন যে তাকে ছুড়ির সামনে ধর্ষণ করেছিল।

সুসান জানায় ড্রুমান্ডের সাথে তার দশ বছরের বেশি সময়ের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। তাদের বিচ্ছেদের দুই সপ্তাহের মাথায় ড্রুমান্ড এই ঘটনা ঘটায়। সম্পর্কের ইতি টানার কারণ হিসেবে সুসান উল্লেখ করেন ড্রুমান্ডের কোনো ভালো কাজ না পাওয়াকে। তিনি আরও বলেন ড্রুমান্ড তার সাথে রোচড্যাল এ তার মায়ের বাড়িতে থাকতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে।

ড্রুমান্ড তাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই সুসানকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। সে ভেবেছিল সুসান তার সাথে প্রতারণা করেছে নিজের ইচ্ছাতে। তাই সুসানকে সে নিজ হাতে শাস্তি দিতে চাইছিল। সুসান জানায় ড্রুমান্ড তার গতিবিধি লক্ষ্য রাখতো। সুসান কোথায় যেত বা কি করত সবই সে জানতো। সুসান প্রায় সকালেই ঘুম ভেঙ্গে দেখতো ড্রুমান্ড তার বাড়ির সামনের বেঞ্চিতে একা বসে আছে। সুসান বাইরে কোথাও গেলে সে একটু দূর থেকে তাকে অনুসরণ করতো। সুসান এটা বেশ বুঝতে পারতো।

2015_09_29_23_38_06_yj17Mrlao8QbOmZwcGBaf0byvNpybx_original

একসময় ড্রুমান্ড যখন বুঝতে পারলো কিছুতেই কিছু হবে না তখন সে সুসানকে সরাসরি হত্যার হুমকি দেওয়া শুরু করলো। এমনকি সে একবার সুসানকে এটাও বলেছিল যে সুসানকে তাকে ছুড়িকাঘাতে হত্যা করবে এবং তাকে মেঝেতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে দেখবে এবং সেও অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ সেবন করে আত্মহত্যা করবে। সুসান এতে এতটাই ভয় পেয়েছিল যে সেই কথাগুলো স্মরণ করতেই ভয়ে শিঁউরে উঠতো।

একদিন ড্রুমান্ড সুসানের মায়ের বাড়িতে আসলো। সুসান সেদিন ঘরে কাজ করছিল। মিথ্যা অজুহাতে সে ভিতরে ঢুকলো। সুসান আসন্ন বিপদের কথা কিছুটা আঁচ করতে পারলেও সুসানের মা একদমই জানতেন না কি হতে চলছে। সুযোগ বুঝে ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে ছুড়ির ভয় দেখিয়ে ড্রমান্ড সুসানকে ধর্ষণ করে। ড্রুমান্ড আসার সময় তার সাথে করে প্যারাসিটামল ও ভায়াগ্রা ট্যাবলেট এনেছিল। সে সুসানের সামনেই সেগুলো সেবন করলো আর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছিল। সুসান শুধু মেঝেতে কাতরাতে থাকা ড্রুমান্ডকে দেখছিলেন আর তার জীবনের শেষ দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। সুসান ভাবছিলেন আর অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই হয়তো ড্রুমান্ড মারা যাবে। সুসান চাইছিল না ড্রুমান্ড এভেবে তার প্রাপ্য শাস্তি ভোগ না করেই মারা যাক। তাই সে এম্বুলেন্স ডেকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।

সুসান জানায় ড্রুমান্ড এর চোখে মুখে তিনি যে বন্যতা সেদিন দেখেছিলেন তা তাকে আজও দুঃস্বপ্নের মত তাড়িয়ে বেড়ায়। সেই দিনের পর থেকে সুসান পরবর্তি দুই সপ্তাহ ধরে ঘরে বাতি জ্বালিয়ে ঘুমাতেন। অন্ধকারে তিনি শিঁউরে উঠতেন। ভাবতেন ড্রুমান্ড ছুড়ি হাতে তার পাশে শুয়ে আছে। ঘটনার কয়েকদিনপর পর্যন্তও সুসান পুলিশকে তা জানায়নি। ঠিক ছয়দিন পর সে ড্রুমান্ডের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে। বিচার প্রক্রিয়া শেষে আদালত ড্রুমান্ডকে দশ বছরের কারাদন্ড দেন। সুসান জানায় সে রোচড্যাল এর মানুষজন আর পুলিশের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ কারণ তাদের জন্যই অপরাধী তার প্রাপ্য শাস্তি পাচ্ছে। এমনকি সে তার জীবনে নতুন উদ্যমে পথাচলার প্রেরণা পাচ্ছেন। সুসান বলেন, ‘আমার এই কাজকে কেউ কেউ সমর্থন নাও করতে পারে। কিন্তু আমি এই ভেবে আনন্দিত যে অপরাধী মরে গিয়ে বেঁচে যাওয়ার বদলে তার প্রাপ্য শাস্তি পাচ্ছে।’

২ thoughts on “ধর্ষিতা রক্ষা করল ধর্ষকের প্রাণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *