সারাদিনের রোজগার বিছানার তোষকের নীচে জমিয়ে রাখতেন সোনাগাছির যৌনকর্মী মালা দাস। সে কথা বিশ্বাস করে বলেছিলেন এক ‘বাবু’কে। সব টাকা হাতিয়ে এক দিন চম্পট দিল সেই বাবু।
মেয়ের বিয়ে দেবেন বলে কিস্তিওয়ালার কাছ থেকে দশ হাজার টাকা ধার করেছিলেন যৌনকর্মী খাদেজা বিবি। চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকা সেই ধারের বোঝা বইতে না পেরে অবশেষে বেছে নিয়েছিলেন আত্মহত্যার পথ।
শুধু মালা দেবী বা খাদেজা দেবী নন এ রকমই অবস্থা ছিল অসংখ্য যৌনকর্মীর। তাঁরা কোনও সরকারি ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে ভবিষ্যত সুরক্ষার জন্য টাকা জমাতে পারতেন না। কারণ তাঁদের না ছিল কোনও পরিচয়পত্র, না ছিল নাগরিক স্বীকৃতি। বাধ্য হয়েই তাঁরা টাকা রাখতেন কখনও তোষকের নীচে কখনও বা বাবুর হেফাজতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই টাকা মেরে পালিয়ে যেত বাবুরা। তা ছাড়া যৌনকর্মীদের প্রয়োজনে চড়া সুদে টাকা ধার দিত কিস্তিওয়ালা-চটাওয়ালারা। আর এক বার ধার করলে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকা সুদের কবল থেকে বেরোনোর কোনও উপায় থাকত না। ধারের বোঝা বইতে হত আমৃত্যু।
কিন্তু, এখন সেই অবস্থা পাল্টেছে। কী ভাবে?
যৌনকর্মী শেফালী রায় জানান, কয়েক জন যৌনকর্মী মিলে একটা সমবায় গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। যেখানে তাঁরা তাঁদের ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমাতে পারবেন, প্রয়োজনে ধার নিতেও পারবেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে পুলিশ থেকে শুরু করে বাড়ির মালিক এবং মহাজনরা আমাদের উপর অত্যাচার করত। যে কোনও ভাবে হোক আমরা এর থেকে মুক্তি পেতে চাইছিলাম। চাইছিলাম স্বাবলম্বী হতে।’’ স্বপ্ন দেখার সেই শুরু। কিন্তু, সেই স্বপ্ন যে এ রকম মহীরূহ হয়ে উঠবে তা তখন বুঝতে পারেননি শেফালীরা।
সময়টা ১৯৯৩-৯৪। সোনাগাছির গুটিকয়েক যৌনকর্মীর পাশে এসে দাঁড়ায় দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি। তৈরি হয় ‘ঊষা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’। শুরু মাত্র ১৩ জন যৌনকর্মীকে নিয়ে। আজ বছর কুড়ি পর ঊষার সদস্যসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজারেরও বেশি। সারা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার যৌনকর্মীরা ঊষার সদস্য। বছরে লেনদেন প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
Md Azizul liked this on Facebook.