ভার্টিগো হলো মাথার ভেতরে ভূমিকম্প । আমি যখন ভার্টিগোতে আক্রান্ত হই তখন মনে হয় আমি মহাশূন্যে গোল গোল স্রোতে আকর্ষিত হচ্ছি। ভার্টিগো স্থায়ী হয় এক বা আধা সেকেন্ড। আবার কিছুক্ষণ পরে শুরু হয়। মাথার এক পাশে এই অনুভূতি শুরু হয়। আমার ডান কান থেকে এই ভূমিকম্প শুরু হয়। মনে হয় সাড়া সিলিং ঘুরছে অথচ কিছুই ঘুরছেনা।
[Vertigo is a sensation of spinning. If you have these dizzy spells, you might feel like you are spinning or that the world around you is spinning]
মাইগ্রেইন বা দীর্ঘমেয়াদী মাথা ব্যাথা বা মাথা ধরা ভার্টিগো নয়। কানের ভেতরের সমস্যার জন্যই ভার্টিগো হয়। আমি প্রথম ভার্টিগো অনুভব করি যখন আমার গলা আর জিহ্বার মাঝখানে একটা গ্রোথ বা আঙ্গুলের সমান বর্ধিত মাংস পিন্ড কেটে ফেলা হয়। এই অপারেশন হবার তিন দিন পরে সকালে ঘুম থেকে উঠতে যেয়েই আমি মাথার ভেতরে ভূমিকম্প অনুভব করি। প্রথম বুঝিনি। দ্বিতিয়বার উঠার চেস্টা করে যখন আবার অনুভব করি তখন জোর করেই আবার উঠার চেস্টা করি কিন্তু আবার অনুভব করি। আবার চেস্টা করি। তারপর ভাবতে থাকি চারিপাশে সব কিছুই ঠিক আছে তাহলে ঘুরছে কি? তখন আমি এম্বুলেন্সকে ফোন করি। এম্বুলেন্স আসে। সাথে প্যারামেডিক। তারা আমাকে অনেক প্রশ্ন করে যা খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন। যেমন আমি কেমন অনুভব করছি ? এটা একটা সাধারণ প্যারামেডিক প্রশ্ন। তারপর তারা সাধারণ কিছু পরীক্ষা করে। যেমন শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া ঠিক আছে কিনা, পালস ঠীকভাবে চলছে কিনা। সবই ঠিক আছে কিন্তু আমার মাথার ভেতরে ভূমিকম্প।
সেদিন এমবুলেন্সের প্যারামেডিকদের আমি বুঝাতে পারিনি আমি কেমন অনুভব করছি। ওরা আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকেছে । ভোর চারটায় আমি এম্বুলেন্স ডেকেছি প্যারামেডিকদের সাথে ফাইজলামি করার জন্য এটাই হয়তো ভাবছিল দুইজন প্যারামেডিক। হৃদয় চিঁড়ে যেমন দেখানো যায়না তেমনি মাথা চিঁড়ে দেখানো যায়না যে আমার মাথার মধ্য ভূমিকম্প হচ্ছে। পারামেডিকরা বলে, আমরা তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো কিন্তু যেহেতু তুমি মরে যাচ্ছোনা তাই তোমাকে পয়তাল্লিশ ডলার দিতে হবে। আমি বললাম – দিবো। মনে মনে বললাম – যদি মরার আগে একটা ইমেইল পাইতাম আজরাইলের কাছ থেকে তাইলে কি আর এম্বুলেন্স ডাকবো নাকি!! যাই হোক হাসপাতালে গেলাম কিন্তু হাসপাতাল কিছুই ধরতে পারলোনা। তারপর স্থানীয় একটা ক্লিনিকে গেলাম তখন সেখানকার এক ডাক্তার বললো – তোমার ভার্টিগো হয়েছিল।
ভার্টিগো চার থেকে সাত দিন অনুভূত হয়। এই সময়ে কোন কিছু ধরে ধরে দরকারী কাজ করতে হয়। সাথে কেউ থাকলে ভাল নাহলে মাথা ঘুরে পড়ে গেলে ভার্টিগো নয়, হয়তো মাথায় আঘাত পেয়ে মৃত্যু হতে পারে।
বিপিপিভি – বিগিন পারোক্সিস্মাল পজিশনাল ভার্টিগো
এটা হয় তখন যখন খুব সামান্য ক্যালসিয়াম কনা যেয়ে জমা হয় কানের ভাঁজের ভেতরে। ভেতরের কান তখন ব্রেইনে “মাথা ও শরীরের নড়াচড়ার মাধ্যাকার্ষন সম্পর্ক্তিত” সংকেত পাঠায় । যখন মনে হয় মাথার ভেতরে ভূমিকম্প হচ্ছে তখন আসলে এই সংকেত পাঠিয়ে ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে। বিপিপিভি সম্পর্কে এখনও গবেষনা চলছে। কোন কারণ ছাড়া কিছুই হয়না। যেহেতু এখনও এর কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি তাই বলা হয় যে বয়সের সাথে এই রোগ দেখা দেয়। আমি ইতিমধ্য অনেক ভার্টিগো রোগীর সাথে কথা বলেছি তাদের বয়স ২২ থেকে ২৪ বছর। আমরা আশা করি বিজ্ঞান যুক্তিসংগত কথা বলবে কিন্তু মেডিকেল সায়েন্স গুগল করে নীচের এই তথ্য পেলাম।একজন ভার্টিগো রোগী হবার কারণে শেষের দুই লাইনের সাথে আমি একমত নই।
[BPPV. These initials stand for benign paroxysmal positional vertigo. BPPV occurs when tiny calcium particles (canaliths) clump up in canals of the inner ear. The inner ear sends signals to the brain about head and body movements relative to gravity. It helps you keep your balance. BPPV can occur for no known reason and may be associated with age. ]
শিক্ষা দুই রকমের ।
এক – মুখস্ত করে তা ঢেলে দেওয়া।
দুই – বই পড়ে, চিন্তা করা আসলে বইয়ে এইসব কিছু কেনো লেখা আছে? কি দরকার?
অনেক গবেষনার পরে, অনেক অভিজ্ঞতার আলোকে, ল্যাবে এক একটি ওষুধ তৈরি হয় রোগীর আরোগ্যলাভের জন্য। এখানে বই পড়ে আমরা জানতে পারি যে প্রতিটি মানুষ ও তার শারীরিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। এত ভিন্নতার ভেতরে কমন বা সাধারণ অভিজ্ঞতা খুঁজে পাওয়া যায় এই কারণে যেহেতু অনেক ভিন্ন ভিন্ন শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে মানুষ বসবাস করে একটিমাত্র পৃথিবীতে। সেই পৃথিবীর চারিপাশে আছে আকাশ, পানি, মাটি, বৃক্ষ, বাতাস যা এরা সবাই ব্যবহার করে। সেকারনেই সম্ভব হয় একটা ওষুধ দিয়ে সব ধরনের মানুষের জ্বর ভাল করা। বা কিছু কমন ওষুধ দিয়ে কিছু কমন রোগ ভাল করা। কিন্তু যখনই নতুন রোগের আবির্ভাব ঘটে তখনই ডাক্তাররা তাদের ব্যবসাকে ধরে রাখার জন্য দ্রুত একটা ঢালাও মতামত দিয়ে দেয়।
অনেক মানুষ ডাক্তারদের পীর ভাবে। অসুখ হলেই ডাক্তারের কাছে দৌড়ায়। ডাক্তার ঢালাও ওষুধ দিয়া দিলে তা কিছুদিনের জন্য রোগ ভাল করে আবার অশুখ হয় তখন আবার দৌড়েই ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার এবং ওষুধ উৎপাদকেরা চায় রোগী এইভাবেই দৌড়ের উপরে থাক। প্রতিটি রোগীর মনে রাখা দরকার রোগ যেহেতু তার নিজের শরীরে হয়েছে কোন এক পরিবেশের কারণে বা খাদ্যের কারণে বা কোন এক দুর্ঘটনার কারণে বা কোন এক অস্বাভাবিক অবস্থার কারণে তাই এই রোগের আরোগ্যলাভের উপায় তার শরীরের আশে পাশে সেই পরিবেশেই রয়ে গেছে বা সেই খাদ্যেই রয়ে গেছে বা সেই অস্বাভাবিক অবস্থা কেনো হয়েছিল সেই কারনের ভেতরেই রয়ে গেছে।
আমার শরীরকে আমার চাইতে বেশী কেউ জানেনা। আমি কি খেয়েছি, কোথায় গিয়েছি, কি করেছি, কোন পরিবেশ বসবাস করি, সেটা ডাক্তার বা ওষুধ কোম্পানী জানেনা। আমি জানি। সেজন্য ডাক্তারের কাছে গেলে রোগীকে ডাক্তার অনেক প্রশ্ন করে। রোগীই ডাক্তারকে তার রোগের কারণ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। রোগী যদি ডাক্তারের কাছে তার অবস্থার কথা বিস্তারিতভাবে জানাতে ব্যর্থ হয় তাহলে ডাক্তার নিজের অভিজ্ঞতা ও ধারনার উপরে চিকিৎসা করে ফলে চিকিৎসাতে অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।
এখন আমাকে ভার্টিগো আক্রমণ করলে আমি আর এম্বুলেন্স ডাকিনা। চুপচাপ ঘরে শুয়ে থাকি। সাবধানে দরকারী কাজগুলো করি। অপেক্ষা করি এই সময় পেড়িয়ে যাবার।
এটা আমার শরীর আমাকেই আমার শরীরের দেখাশোনা করতে হবে। কোন ওষুধ কোন ডাক্তার কোন মেডিক্যাল সায়েন্স আমার শরীরের যত্ন নিবেনা। ভার্টিগো সাধারন রোগ না তাই এর কোন সাধারন ঢালাও ওষুধ নাই। ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার তার পান্ডিত্য দেখাবার জন্য উল্টাসিধা কিছু দিয়ে দিলে সেটার সাইড এফেক্ট বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে আর তার জন্য ভার্টিগো থেকে শরীরে অন্য এক সমস্যা দেখা দিতে পারে যা আমি নিজে হয়তো বুঝবোনা কারণ আমি ডাক্তারের অভিজ্ঞতার উপরে নিজের শরীর সপে দিয়েছি, তখন আমি মনে করবো বুঝি আমাকে নতুন এক রোগে ধরেছে। তারপর সব শালারে ছেড়ে দিয়ে বেড়ে শালারে ধর – সবাই বলবে ও বুড়া হবার জন্য এইসব রোগে ধরছে।
ভেতরের কানের সমস্যা
থেকে ভার্টিগো হতে পারে। কানে পানি যেয়ে কানের ভাঁজে জমে কানের ভেতরে চাপ সৃষ্টি করে ভার্টিগো হতে পারে। এটা হলে একের পর এক বিভিন্ন সময়ে ভার্টিগো হতে পারে, সাথে সাথে ঝি ঝি ডাকা ও কানে কালা হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
[Meniere’s disease. This is an inner ear disorder thought to be caused by a buildup of fluid and changing pressure in the ear. It can cause episodes of vertigo along with ringing in the ears (tinnitus) and hearing loss.]
ভেতরের কানে যদি ইনফেকশন হয় তাহলে ভার্টিগো হতে পারে।
[Vestibular neuritis or labyrinthitis. This is an inner ear problem usually related to infection (usually viral). The infection causes inflammation in the inner ear around nerves that are important for helping the body sense balance]
কানের ভেতরের ভাঁজের বা ভেতরের কানের ছবি দেওয়া হলো।
যা থেকে ভার্টিগো হবার সম্ভাবনা কম, সেগুলো হলোঃ —
ঘাড়ে ব্যাথা বা জখম হলে
ব্রেইন টিউমার বা স্ট্রোক হলে
কোন ওষুধের দ্বারা যদি কানের ক্ষতি হয়
মাইগ্রেইন বা মাথা ধরলে
ভার্টিগো হলে কেমন লাগেঃ
মনে হয় চারিপাশের সব কিছু ঘুরছে খুব অস্বাভাবিকভাবে অথচ কিছুই ঘুরছেনা।
ভারসাম্য রাখা যায়না
দোল খাবার মত মনে হতে পারে
এক দিন থেকে অন্যদিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এমন মনে হতে পারে
অন্যান্য প্রতিক্রিয়া এমন হতে পারে
বমি আসা
অস্বাভাবিক চোখ নড়া
মাথা ব্যাথা
ঘামা
কানের ভেতরে ঝি ঝি ডাকা
বা কানে না শোনা
সব চিকিৎসার মতই ভার্টিগোর চিকিৎসা করার জন্য খুজতে হবে ভার্টিগোর হবার কারণ। সব সমস্যার সমাধান সেই সমস্যার আশেপাশেই থাকে। খুঁজে দেখতে হবে কি কারণে ভার্টিগো হয়েছে- কানের ভেতরের ভাঁজে পানি জমে, বা ইনফেকশন হয়ে, বা কানের জন্য কোন ওষুধ যা নাকি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে, আর এই কারণ খুঁজে বের করার পরেই চিকিৎসা করা সম্ভব । তবে বিপিপিভি হবার কারণ অনুসন্ধানের কাজ এখনও অব্যহত রয়েছে।
তবে কিছুদিন পরে ভার্টিগো আপনা আপনি ভাল হয়ে যায় (ভার্টিগো চলার সময়ে সাবধান থাকতে হবে)। কারণ ব্রেইন কানের এই অবস্থাকে শরিরের সাথে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। কানের ভাঁজের ভেতরের অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে কান মগজে সংকেত পাঠায় এবং একটা অংশ সাথে সাথে ভারসাম্য রাখার জন্য অবিরত প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। সময় লাগে তবে বেশিদিন স্থায়ী হয়না। আবার আগের মত সব কিছু ঠিক হয়ে যায়।
উপসংহারে বলবো — শরীরের রোগ ব্যাধির জন্য হাতের কাছের উপশমের উপায়গুলোকে আগে ব্যবহার করে দেখে নেওয়া ভাল। ল্যাবের অশুধ শরীরে ঢুকলে সাময়িকভাবে শরীর সুস্থ হলেও এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এই একই অসুখ আবার ফিরে আসতে পারে বা নতুন অসুখ দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশ ভারতের বাজার হবার পর থেকে ভারতের অশুধে বাংলাদেশের বাজার ছেয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন ভারতের সায়েন্স ল্যাবের গিনিপিগ। সবাই ভারতে যেয়ে চিকিৎসা করে ভাল হয়ে এসে বাংলাদেশে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এক অশুধে যদি আপনার রোগ ভাল হয়ে যায় তাহলে এই গবেষকরা কি খাবে ? রোগের জন্য এক রোগী যদি বারে বারে ওষুধ কিনতে না আসে বা নতুন নতুন ওষুধ কিনতে না আসে তাহলে এতগুলা বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানী মুনাফা করবে কিভাবে?
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের মানসিকতার উন্নয়ন হয় নাই।
আগেকার যুগে গ্রামে কেউ এম কম পাশ করলে সাড়া গ্রামের মানুষ তাকে দেখতে আসতো। এখন জেল থেকে খুনী সাধারণ ক্ষমাতে ছাড়া পেলে সবাই আসে ফুলের মালা নিয়ে। তবু কেউ রক্ষা পায়না। বাসার পাশে খুনী বাস করে। বাজারে খুনী বাস করে। বহুজাতিক অষুধ কোম্পানী চিকিৎসার নামে নতুন নতুন ওষুধ বাজারে ছাড়ে নতুন করে খুন করবে বলে।
জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে, কোথা, কবে ?
Md Salahuddin liked this on Facebook.
ধন্যবাদ,ভাল খবর পেলাম
Kala Pola liked this on Facebook.