বদলে দিন

ভোট আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার হবে তখন যখন এই ভোট দিয়ে আপনি যাকে নির্বাচিত করবেন সেই জনপ্রতিনিধি আসলেই আপনার বা জনগনের প্রতিনিধি হবে। জনপ্রতিনিধি যদি ক্ষমতায় যেয়ে পুলিশ দিয়ে জনগনের উপরে গুলি চালায় তাহলে ধরে নিতে হবে সে আপনার প্রতিনিধি নয়। যে জনপ্রতিনিধি ক্ষমতায় যেয়ে গুলি চালায় আর সেই জনপ্রতিনিধির সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা জনপ্রতিনিধিরা যখন নিজেদের স্বার্থে আঁতাত করে তখন ধরে নিতে হবে এরা কেউই জনপ্রতিনিধি নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের সবাই সবার সাথে জোট বেঁধেছে ক্ষমতায় যেয়ে যার যার ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি করার জন্য। যে রাজনৈতিক দলই হোক না কেনো, নেতাদের জীবন কাহিনী যদি লেখা হয় তাহলে দেখা যাবে এরা যা কিছু বলেছে বা যত সংগ্রাম করেছে তার কিছুই জনগনের জন্য করেনি বরং নিজেরা ক্ষমতায় যাবার জন্য করেছে এবং ক্ষমতায় যেয়ে নিজের আখের গোছগাছ করেছে। সেজন্য দেখা যাবে বড় বড় নেতা যারা তারা সবাই বড় বড় ব্যবসায়ের মালিক।

police1শুধু তাই না, বড় বড় ব্যবসায়ের মালিক হবার সাথে সাথে নিজেদের সম্পদ ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিবারগুলো বিয়ার মাধ্যমে একে অন্যের আত্মীয়। বাইরে বিরোধিতা করে ভেতরে বিয়া, সাদী, পার্টি, ক্লাবে, ডিংকস, জুয়া, সব চলে।

বড় বড় নেতারা তো বড় বড় ব্যবসায়ের মালিক হবেই – এটাও অনেক তৃণমূল রাজনৈতিক কর্মীরা বিশ্বাস করেন। আশা করেন ঐসব নেতাদের মত ওরাও একদিন ক্ষমতায় যেয়ে নিজেদের আখের গোছগাছ করে বিশাল সম্পদের মালিক হবেন। দেশের জন্য বা জনগনের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্টার জন্য এখন আর কেউ হয়তো রাজনীতি করেনা। যদি করতো তাহলে বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা নিজেদের যুক্ত করে সময় নস্ট করতোনা।

পুলিশের গুলি থেকে সবাই বাঁচতে চায়।
জেল, জুলুম, ভুয়া মামলা, রিমান্ড থেকে সবাই বাঁচতে চায়।
সেজন্য সবাই আপোষ করে।
কেউ কি বাঁচতে পেরেছে?

সবাই দুর্নীতি করে বা করতে সাহায্য করে শুধুমাত্র নিজেকে ভাল রাখার জন্য। দুর্নীতির লেনদেন করে যারা সম্পদ বানিয়েছে বা নিজেদের ভাল রাখতে পেরেছে তারাও কি ভাল আছে ? যারা দুর্নীতি করে তাদেরও ক্যানসার হয়, দুরারোগ্য ব্যাধি হয়, তারাও এই দুর্নীতি করা টাকা খরচা করে সিঙ্গাপুর বা ভারতে চিকিৎসার জন্য জনগণের কাছ থেকে চুরি করা টাকা ভারত বা সিঙ্গাপুরে রেখে আসে অথবা ইংল্যান্ডের বা আমেরিকার মদের দোকানে বা জুয়ার আড্ডাতে উড়িয়ে দেয়।

মুখে এরা অনেক কিছু বলে। police2
কিছু একটা বলতে হবে তাই।
কেউ শেখ মুজিবের আদর্শ অনুসরণ করে
কেউ জিয়ার আদর্শ অনুসরণ করে
কেউ মাওলানা মওদুদীর আদর্শ অনুসরণ করে
দরকার হলে এই সব আদর্শ এক টেবিলে বসে। সবাই সবার সাথে আপোষ করে তাই সব আদর্শ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। আবার দেখা যায় নিজেদের স্বার্থে এক আদর্শ অন্য আদর্শকে গুলি করে মারে, পচিশটা করে ভুয়া মামলা দিয়া চালান দেয় কাশিমপুর জেলে।

তবু মানুষ রাজনীতি করে কারণ রাজনীতিও এক ধরনের ব্যবসা। এই ব্যবসার বিনিয়োগ হলো “জীবন”। যারা ধূর্ত তারা এই “জীবন” বাঁচায়ে রাজনীতি করে। যারা নির্বোধ তারা এই “জীবন” হারায়। যারা নির্বোধ তাদের উচিৎ রাজনৈতিক ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসাতে মনোনিবেশ করা।

সরকার বদল হয় কিন্তু আদালত, আইন, বিচারপতি, উকিল, আমলা, সরকারী কর্মচারী, পুলিশ এরা সবাই যার যার কর্মে বহাল থাকে। সেদিন কালিহাতিতে যে পুলিশ গুলি করে কালিহাতির জনগনকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছে সেই একই পুলিশ বিএনপি্র সাথে ছিল বা বিএনপীর সাথে থাকবে যদি বিএনপি আদৌ ক্ষমতা ফিরে পায়। যে বিচারপতি ভুয়া মামলাতে ফেঁসে থাকা মানুষকে জেনেশুনে জেলে পাঠায় সেই একই বিচারপতি রায় লিখবে তাদের স্বার্থে যখন জেলে থাকা মানুষের কেউ কেউ সরকারীদলের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা হবে। যারা গুলি করে, পিটিয়ে, জবাই করে মানুষ হত্যা করে তারা কেউ চাঁদের দেশে থাকেনা তারা সবাই বাংলাদেশেই থাকে।

police3গুলি, জবাই, পিটাই, ব্ল্যাকমেইল, ভুয়া মামলা, ধর্ষকদের পক্ষ নিয়ে জনগনের বুকে গুলি চালানো – সবকিছুই চলে টাকার জন্য, ক্ষমতায় থাকার জন্য, সম্পদের জন্য, টিকে থাকার জন্য।

police4রাজনীতি একঘেয়ে হয়ে গেছে। সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, মহল্লার বেকার পোলাপাইন, সব দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা যদি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয় ওরা আর রাজনীতি করবেনা। তাহলে কেমন হবে??

প্রজন্মের কুলাঙ্গারেরা যদি বদলে যায়, যদি সিদ্ধান্ত নেয় ওরা আর এইসব বুড়া বুড়া নেতানেত্রীদের মিছা কথায় কান দেবেনা। ঈদের পরে নতুন কর্মসূচী দিয়ে চমক সৃষ্টিতে ওরা আর চমকাবেনা, গুলি চালাবার কোন অজুহাত খুঁজে পাবেনা পুলিশ তখন কি হবে??

প্রজন্মের কুলাঙ্গারেরা কেনো রাজনীতি করেনা সে অপরাধে কি পুলিশ গুলি চালাবে? জনগনের খাজনার টাকা দিয়ে এত বুলেট কেনা হয়েছে সেইসব বুলেটের কি হবে? জনগনের টাকা দিয়ে বেতন দিয়ে এত পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে তারা কি না খেয়ে থাকবে? গুলি না চালালে বোনাস নাই। গুলি চালাইবার কোন অজুহাত নাই। তখন কি হবে??

ভেবে দেখা দরকার। একঘেয়ে রাজনীতি থেকে সরে থাকা দরকার। নতুন কিছু ভাবা দরকার। বাংলাদেশের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত যদি বিদেশীরা নেয় তাহলে স্বদেশীদের গুলি খাইবার কি দরকার? শান্তিপূর্ণভাবে অহিংস দাসত্ব করা যেতে পারে।

ভেবে দেখা দরকার। বদলে যান। বদলে দিন। গুলি চালাইবার নতুন অজুহাত খুঁজতে জনগনের বেতনভুক পুলিশকে সহায়তা করুন।

১০ thoughts on “বদলে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *