ধর্মান্ধরা বাংলাদেশে মেয়েদের শিক্ষায় বাধা হবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মৌলবাদী বা ধর্মান্ধরা বাংলাদেশে মেয়েদের শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না। কারণ জনগণ তাদের জন্য কোনটি ভাল এবং কোনটি ভাল নয় সে ব্যাপারে সচেতন।
তিনি বলেন, মৌলবাদি শক্তি একসময় মেয়েদের শিক্ষার বিরোধিতা করতো। তবে সেই সময় গত হওয়ায় আমরা এখন সে চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠেছি। আমরা বিশ্বাস করি যে, শিক্ষা জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। আমরা যদি তাদের শিক্ষা দিতে এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম করে তুলতে পারি, তাহলে তারা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়ার্ল্ড লিডার্স ফোরামে ‘গার্লস লিড দি ওয়ে’ শীর্ষক বক্তৃতায় এ কথা বলেন। খবর বাসসের
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড লিডার্স ফোরামে সারা বছর ধরে সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে উন্মুক্ত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ফেরামের বিগত অধিবেশনগুলোতে অনেক রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নিয়েছেন। সারা বিশ্বের সকল অঞ্চল থেকে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈশ্বিক চিন্তাবিদরা এতে অংশ নিয়ে থাকেন। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি, রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন, চিলির মিশেল বাশেলে, চেক প্রজাতন্ত্রের ভি ক্লাভ ক্লাউস ও দালাই লামা এই ফোরামে অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট লী সি. বোলিঙ্গার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান এবং সূচনা বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেখতে চাই যে আমাদের মেয়েরা সকল বাধা অতিক্রম করে জাতি গঠনমূলক কাজে নেতৃত্ব দিবে। শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে আমার পরিকল্পনায় এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর ক্ষেত্রে ভাল কাজ হচ্ছে, বাংলাদেশের মতোই অনেক স্থানে ছেলেদের চেয়ে বেশি মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে, কিন্তু এই অগ্রগতি এখনো অসম।
তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলো এখনো পিছিয়ে রয়েছে। এখনো প্রায় ৬০ মিলিয়ন শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে এবং তাদের ৭৫ শতাংশ মেয়ে। আমরা তাদের পিছনে ফেলে রাখতে পারি না। তাই, আমাদের উন্নয়ন এজেন্ডায় এসব শিশুদের রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নারীরা প্রমাণ করেছেন যে, সুযোগ দেয়া হলে তারা সকল প্রতিকুলতা অতিক্রম করতে এবং চাইলে উৎকর্ষ অর্জন করতে পারে। সরকারে আমাদের কাজ হচ্ছে সমতা ও মর্যাদার সঙ্গে সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে তাদের জন্য সঠিক সুযোগ সৃষ্টি করা।
তিনি বলেন, শিক্ষার সম্প্রসারণ বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে যে কোনো চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার জন্য তার সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। যে কোনো চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার যথেষ্ট শক্তি আমাদের রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা কারো ওপর নির্ভরশীল নই।
বাংলায় বক্তৃতা দেয়ার জন্য বাঙ্গালি এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরাও প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেশাজীবন গড়ে তোলা এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদেরকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে এবং মাতৃভূমির উন্নয়নের স্বার্থে তাদের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শিক্ষা ও আর্থিক স্বাধীনতা দিয়ে প্রত্যেক নাগরিককে বিশেষ করে মেয়েদের একটি নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাল্য বিবাহ রোধ করার লক্ষ্যে তার সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন মেয়ে শিক্ষিত হলে এবং তার কর্মসংস্থান থাকলে সে তার নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন, তার সরকার এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার বিভিন্ন খাতে নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং সকল জাতীয় কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে।

৩ thoughts on “ধর্মান্ধরা বাংলাদেশে মেয়েদের শিক্ষায় বাধা হবে না: প্রধানমন্ত্রী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.