খোঁজ মিলেছে ৩ জনের, এখনও নিখোঁজ ১৫

ঢাকা: মিনায় পদদলিত হয়ে ৭১৯ জন হাজি নিহতের ঘটনায় সিরাজগঞ্জের দম্পতি আব্দুল মজিদ প্রামাণিক ও তার স্ত্রী নাসিমা বেগম  এবং বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের নূর জাহানের  খোঁজ পেয়েছেন স্বজনরা।

শনিবার সকাল পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮তে। তবে বেলা পৌনে ১১টার দিকে নিখোঁজ তালিকায় থাকা এক দম্পত্তির ও অপর হাজি নূর জাহানের খোঁজ পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। তারা হলেন- সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানাধীন তামাই গ্রামের আব্দুল মজিদ প্রামাণিক (পাসপোর্ট নং- বিই ০৫৬২১১০) ও তার স্ত্রী নাসিমা বেগম (পাসপোর্ট নং- বিই ০৫৬২১১০)।

হাজি নূর জাহান বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ চর হোগলা এলাকার শফিক আলমের স্ত্রী। তার পাসপোর্ট নম্বর এজি ২০৫৬০৫২ এবং হাজি নম্বর০৩৬৩২৫৩।

শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার দিকে ওই দম্পতি ও শনিবার সকালে নূর জাহান বাংলাদেশে থাকা আত্মীয়দের কাছে ফোন করেন।

আব্দুল মজিদ প্রামাণিকের শ্যালক ইসমাইল মুসল্লি শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল পৌনে ১১টার দিকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার বিষয়টি   নিশ্চিত করেন। আর নূরজাহানকে খুঁজে পাওয়া কথা নিশ্চিত করেন ঢাকায় তার মেয়ে জামাই রিপন।  তিনি জানান আহত অবস্থায় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিলো তার শাশুড়িকে। সেখানে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দিলে চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া আরেক হাজি তাকে প্রাথমিক আশ্রয় দেন। শনিবার সকালেই তিনি নূর জাহানের ছেলের কাছে ফোন করে তার অবস্থান সম্পর্কে জানান।

এখনো নিখোঁজ ১৫ জন নাম- শাহেদা কাওসার (৪৮), বেহতারিন ইশরাত (৪৪), তামান্না বিনতে খালেদ (৩৬), সামসুন্নাহার মজুমদার (৭০), জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া (৪০), আব্দুল মজিদ (৭০), হাবিবুর রহমান ও তার স্ত্রী হাজেরা খাতুন, হেলাল উদ্দীন (৪০), সাভারের পৌর কাউন্সিলর আমিনুর রহমান ও তার স্ত্রী, সেলিনা বেগম (৪০), মো. মুজিবুর রহমান (৬০), খালেদা আক্তার (৩৫) এবং মো. মোস্তফা কামাল (৪৩)।

** নিখোঁজ হাজিদের তথ্য জানান

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিনার বড় জামারাতে পদদলিত হয়ে ৭১৯ জন হাজির মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশির পরিচয় শনাক্ত হয়। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন বাংলাদেশি নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

মামুন উর রাশেদ নামে একজন জানান, মিনায় শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর নিক্ষেপকালে ঘটা দুর্ঘটনার সময় থেকেই নিখোঁজ আছেন সাভারের পৌর কাউন্সিলর আমিনুর রহমান (পাসপোর্ট নং BE0612950) ও তার স্ত্রী (আলেমা বেগম পার্সপোর্ট নং – AF3541875)।

এর আগে শেষ রাতে ফোন করে নাজসুল হুদা নামে একজন জানান, তার সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার তামাই গ্রামে। মিনায় দুর্ঘটনার সময় থেকেই তার চাচা আব্দুল মজিদ প্রামাণিক ও তার স্ত্রী নাসিমা বেগম নিখোঁজ আছেন। মজিদের পাসপোর্ট নং বিই ০৫৬২১১০। নাসিমার পাসপোর্ট নং বিই ০৫৮১৪৪৬।

নোয়াখালীর মাইজদীর খলিফার হাট থেকে এমদাদ উল্লাহ জানান, তার ভায়রা হাজি হেলাল উদ্দীন (৪০) সোমবার সন্ধ্যায় হাসান ট্রাভেলসের মাধ্যমে বিমানের ফ্লাইটে সৌদি যান। বর্তমানে তার ফোন বন্ধ। হাসান ট্রাভেলসের মওলানা মাহবুব উদ্দীনের মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি ধরছেন না।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড থেকে মো. আশরাফুল করিম রোকন  জানান, তার বাবা মো. জহির উদ্দীন (৬০) ও মা সেলিনা বেগম (৫০) হজে যান। তাদের মধ্যে বাবার খোঁজ পাওয়া গেলেও, মা এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে মো. মোবিনুর রহমান জানান, সৌদির মিনায় তার বাবা-মা ক্যাম্পে ছিলেন। বাবা মো. মুজিবুর রহমান (৬০) ও এলাকার প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া (৪০) এক সঙ্গে পাথর নিক্ষেপে বের হন। এরপর থেকে তাদের আর পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে তার মা তহুরা রহমান (৫৬) মিনার ৫২০ নং ক্যাম্পে আছেন।

খালেদা আক্তার (৩৫) নামে এক নারীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বাড়ি ফেনীর পরশুরামের রাজেশপুর এলাকায়। খালেদার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি সৌদি আরব থেকে মোবাইল ফোনে পরিবারকে নিশ্চিত করেছেন তার স্বামী জয়নাল আবদীন৷ তারা স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে হজে যান। স্বামীর ভাই (দেবর) জসিম উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দুইজন মিলে এবার পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি গিয়েছিলেন। মিনার ঘটনায় স্বামী জয়নাল আবদীন সামান্য আহত হন।

মনজুরুল মোরশেদ অভি জানান, তার মামাকে খুঁজে পাচ্ছেন না। মামার নাম মো. মোস্তফা কামাল (৪৩)। ঢাকায় তাদের বাড়ি উত্তরায় আর গ্রামের বাড়ি চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লায়।

রাজধানীর গুলশান থেকে ভাবী শাহেদা কাওসার, তার ভাবীর দুই বোন বেহতারিন ইশরাত ও তামান্না বিনতে খালেদ এবং শাহেদা কাওসারের মা সামসুন্নাহার মজুমদারের নিখোঁজের বিয়ষটি ফোনে জানান- আব্দুস সাত্তার।

নিখোঁজ শাহেদা কাওসারের পাসপোর্ট নম্বর- বিই ০৬৪৯৫৬৪। তিনি রাজধানীর গুলশান-২’র অফিসার্স কোয়ার্টারের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশারের স্ত্রী। বাকি তিনজনের বাড়ি কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার চকইয়া গ্রামে। এদের মধ্যে বেহতারিন ইশরাতের পাসপোর্ট নম্বর- এই ০২৮৯৩৮৮, তামান্না বিনতে খালেদের পাসপোর্ট নম্বর- এএ ২৮৬১১০৬ ও সামসুন্নাহার মজুমদারের পাসপোর্ট নম্বর- বিই ০২৮৫৩২।

আব্দুস সাত্তার আরও জানান, তার ভাবীর ভাই সাজ্জাদ খালেদ মুরাদ (৩০) নিখোঁজদের সঙ্গে মক্কায় গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেই নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন তারা। তিনি বলেন, সাজ্জাদ খালেদ মুরাদ আমাদের জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে নিখোঁজদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এরপর শাহেদা কাওসারের ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে এক পর্যায়ে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

নিখোঁজ আব্দুল মজিদের বাড়ি নীলফামারীতে। তার ভাতিজা রায়হান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সৌদি আরবে যাওয়ার পর চাচা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার মিনায় এ ঘটনার পর থেকে ওনার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে চাচার ফোন নাম্বারটি এখনো খোলা রয়েছে। ফোন দিলে অনেক সময় আরবিরা রিসিভ করছেন। কিন্তু তারা কোনো তথ্য দিতে পারছেন না।

এছাড়া হাবিবুর রহমান ও হাজেরা খাতুনের নিখোঁজের বিষয়টি  জানান তাদের মেয়ে জামাতা ওয়াসিম। তারা রাজধানীর উত্তরায় থাকেন।

তিনি বলেন, হাজেরা খাতুনের পাসপোর্ট নম্বার বিএফ- ০২৩০৮৮। তারা দু’জন ইস্ট বাংলা নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে যান। তিনি আরও বলেন, আব্দুল মজিদের কাছে একটি মোবাইল ফোন +৯৬৬৫৯১৫০৩৬৭৩ রয়েছে। সৌদি আরবে যাওয়ার পর নম্বরটি খোলা থাকলেও এখন আর তা পাওয়া যাচ্ছে না।

১০ thoughts on “খোঁজ মিলেছে ৩ জনের, এখনও নিখোঁজ ১৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *