লাব্বায়েক আল্লাহুমা লাব্বায়েক

একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে সৌদী আরবে। আজ মক্কাতে ৭১৭ জন হাজী পদদলিত হয়ে ইন্তেকাল করেন, আহত হন ৮৫০ জন হাজী । ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। হাজীরা যখন তাদের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত তাবু থেকে বের হয়ে হজ্ব পালন করার জন্য মক্কা শরীফের উদ্দেশে রওনা হন তখন পথের মাঝে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

মক্কাহঠাৎ করেই কি যেন হয়, সবাই ভয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে, সেদিনের সেই ক্রেন দুর্ঘটনার ফলে হাজীদের মনের ভেতরে ভয় ঢূকে গেছিল ফলে সামান্য কিছুতেই হয়তো সবাই ছুটাছুটি শুরু করে। সংকীর্ণ পথের মাঝে পদদলিত হয়ে সাদা কাপড় পড়া হাজীদের লাশের স্তুপের চারিপাশে পিচে আটকে থাকা স্যান্ডেল, হুইল চেয়ারের চাকা, দেখা যায়। এই ঈদ মুসলিম জাহানের জন্য শোকের ঈদ। ক্রেণ দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করলেন ১০০ হাজী। হোটেলে আগুন লেগে অনেক হাজি আহত হলেন।

অনেক হাজী আছেন যারা মক্কা শরীফে যেয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সৌভাগ্য অর্জন করতে চান। আল্লাহ্‌র উপরে যদি অবিচল বিশ্বাস থাকে তাহলে ক্রেন দুর্ঘটনায় শত মানুষের মৃত্যু হবার পরেও হাজীদের মনোবল ভেঙ্গে যাবার কথা নয়। যেহেতু মৃত্যু অবধারিত, যেহেতু মৃত্যু কোথায়, কিভাবে, কখন হবে সেটা কেউ জানেনা,যেহেতু প্রতিটি মুসলমান বিশ্বাস করেন জন্ম, মৃত্যু, আল্লাহ লিখে রেখেছেন তাহলে হয়তো তাবু থেকে বের হয়ে শান্তভাবেই সবাই সেই সংকীর্ণ পথ অতিক্রম করে হজ্বের জন্য এগুচ্ছিলেন। যারা মৃত তারাও হয়তো জানেননা সেখানে কি হয়েছিল। যারা আহত তারাও হয়তো জানেননা সেখানে কি হয়েছিল। যারা জীবিত তারাও হয়তো জানেননা সেখানে কি হয়েছিল। কেন এমন হলো? শুধু আল্লাহ্‌ জানেন। আল্লাহ্‌ হাজীদের মৃত্যু এভাবেই লিখে রেখেছিলেন।

ক্রেণের নীচে মৃত্যু, পদদলিত হয়ে মৃত্যু আর হোটেলে আগুন, এই তিনটি দুর্ঘটনা হয়তো বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা নয়। হয়তো একটি ঘটনা অন্যটির সাথে সম্পর্ক জড়িত। তবে ক্রেণের নিচে হাজীদের মৃত্যুকে বলা যায় লাদেন পরিবারের অবহেলার কারণে ঘটা দুর্ঘটনা। Gross negligence বা হাজীদের জন্য সেই এলাকা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়নি, যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন না করার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সৌদী সরকার মৃতদের জন্য ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা করেছেন। জীবন তো অমূল্য। জীবন হারাবার ক্ষতি টাকা দিয়ে পূরণ হতে পারেনা। সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও এই একশত জন হাজীর মৃত্যু হতে পারতো। উনাদের যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হতো তাহলে হয়তো পদদলিত হবার দুর্ঘটনাটি আজকে ঘটতোনা। ক্রেনের নিচে মৃত্যুর খবর হাজীদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল তাই হয়তো একটু ভয় পেয়ে অনেক সাবধান হতে যেয়ে সবাই ছুটাছুটি শুরু করেন । যার যার জীবন বাঁচাবার জন্য পালাতে যেয়ে অনেক মানুষ পদদলিত হয়ে নিহত ও আহত হয়।

যারা ক্রেনের নিচে মারা গেছে তাঁদের পরিবারের জীবিত সদস্যরা ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন। কিন্তু যারা পদদলিত হয়ে মারা গেছেন তাদের পরিবারের জীবিত সদস্যরা কি ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন? যদি কারু ব্যক্তিগত জীবনবীমা না থাকে তাহলে হয়তো পাবেন না। এখন অনুসন্ধানের পালা – কি কারণে আজ এতগুলো মানুষ পদদলিত হয়ে মারা গেলেন?

আগামী বছরে যারা হজ্ব পালনের জন্য বৃদ্ধ বাবামাকে হাজীদের গ্রুপের সাথে সৌদী পাঠাবেন তাদের জন্য এই মৃত্যুগুলো কিছু বার্তা পাঠিয়েছে। সবাইকে আমি সেই বার্তা জানিয়ে দিচ্ছি।

যাদের পরিবারে সন্তান আছে তাদের উচিৎ মাবাবার সাথে হজ্বে যাওয়া। তাদের উচিৎ মাবাবাকে আগলে রাখা। তাহলে এই রকম ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া যাবে। একবার চীনের এক ভুমিকম্পে একজন মা তার শিশুকে বুকের নিচে রেখে নিজের পিঠের উপরে মৃত্যু নিয়ে শিশুর জীবন বাঁচিয়েছিলেন। অনেক ভালবাসা, অনেক সতর্কতার সাথে মাবাবা সন্তানদের লালন পালন করেন। সন্তান বড় হলে বৃদ্ধ মাবাবাকে একইভাবে ভালবাসবে ও সতর্কতার সাথে আগলে রাখবে সেটাই কাম্য।

টাকা ছুঁড়ে দিয়ে হজ্ব কেনা যায়না। ভালবাসা কেনা যায়না। টাকা দিয়ে গরু কেনা যায়। গরু খেয়ে উচ্চরক্তচাপ ও ক্যানসার হয়। টাকা দিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা হয় কিন্তু জীবন বাঁচানো হয়তো যায়না। লাদেন পরিবারের অনেক টাকা । এই টাকা দিয়ে লাদেন পরিবারের ক্রেনের নিচে মৃত হাজীদের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেনি। কোন ক্ষতিপূরণ জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেনা।

বাংলাদেশে প্রতিদিন পুলিশ গুলি করে জীবন নেয় কিন্তু কোন পুলিশ কি জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে? যাদের নির্দেশে পুলিশ গুলি করে তারা ক্ষমতা চায়, তারা সম্পদ চায়, তাদের মৃত্যু হলে কোন সম্পদের বিনিময়ে কি তাদের জীবন ফিরে আসবে?

ভালবাসা একটি মুহূর্ত।
ভালবাসা এমন এক অনুভূতি যা একমাত্র সে অনুভব করে যে ভালবাসে।
সবাই ভালবাসেনা।
টাকা দিয়ে সবাই হলমার্কের কার্ড কিনতে পারে । ইন্টারনেট কিনতে পারে। ফেসবুকে “ভালবাসি” লিখতে পারে কিন্তু ভালবাসেনা।

মা, তোমাকে আমি অনেক ভালবাসি কিন্তু স্বামী ও সন্তান ফেলে তোমার অসুখ হলে ছুটে যাইনে তবে ফেসবুকে স্টাটাস দিয়ে পাঁচ হাজারা অপরিচিত মানুষের কাছে তোমার জন্য দোয়া ভিক্ষা করি। সেটার জন্য কোন মাবাবা ছেলেমেয়েদের কস্ট করে মানুষ করেনি।

বৃদ্ধ মাবাবাকে স্বাভাবিকভাবে মরতে দিন। সব রকমের চেস্টা করুন যাতে তারা দেশে বা বিদেশে সুস্থ থাকে, নিরাপদ থাকে, এবং স্বাভাবিকভাবে সন্তান পরিবেষ্টিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

লাব্বায়েক আল্লাহুমা লাব্বায়েক। লাব্বায়েক লা শরিক লাকা, লাব্বায়েক। ইন্নাল হামদা, ওয়া নিইয়ামাতাহ, লাকা অয়াল মূলক, লা শরিক লাকা।
আমি এসেছি আল্লাহ্‌ ! তোমার সেবার জন্য আমি এসেছি! আল্লাহ্‌র কোন শরিক নেই। সকল প্রসংশা আল্লাহ্‌র। আল্লাহ্‌ সাড়া জাহানের মালিক, আল্লাহ্‌র কোন শরিক নেই।




১৫ thoughts on “লাব্বায়েক আল্লাহুমা লাব্বায়েক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *