ঈদ মোবারক

ঈদ মোবারক। পবিত্র ঈদ আল আযহা এসে গেল।

Eid-al-Adha عيد الأضحى‎ Feast of Sacrifice আল্লাহ্‌র নির্দেশে হজরত ইব্রাহীম আঃ তাঁর “ ছেলেকে কুরবানী দিতে ইচ্ছা প্রকাশের সন্মানে” – এই কোরবানী ঈদ পালন করা হয়।

ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায় —

হজরত ইব্রাহীম আঃ তার স্ত্রী বিবি হাজেরা আঃ ও শিশু ইসমাইল আঃ কে মক্কার মরুভুমিতে ফেলে রেখে চলে আসেন। বিবি হাজেরা প্রশ্ন করলে হজরত ইব্রাহীম আঃ বলেন যে আল্লাহ্‌র নির্দেশে তিনি তাদের এই মরুভুমিতে একাকী ফেলে চলে যাচ্ছেন। যাবার সময়ে যথেষ্ট পরিমানে পানি ও খাবার রেখে যান। কিছুদিনের ভেতরে তা ফুরিয়ে গেলে বিবি হাজেরা আঃ ও শিশু ইসমায়েল প্রচন্ড ক্ষুধার্ত ও তৃষিত হয়ে উঠেন। পানির জন্য বিবি হাজেরা আল-সাফা ও আল-মারওয়া পাহাড়ের উপরে ছুটাছুটি করেন। একসময় শিশু ইসমাইলের পাশে বিবি হাজেরা অজ্ঞান হয়ে যান । তখন শিশু ইসমাইলের পা দাপানীর ফলে পানির ফোয়ারা এসে মা ও শিশুর তৃষ্ণা মেটায়। এই অবিরত ধারা, ফোয়ারার নাম জম জম زمزم‎

হজ্ব পালন করার সময় তাই আল-সাফা ও আল-মারওয়া পাহাড়ের উপরে উঠানামা করা হয়।

ইহুদীদের গ্রন্থে একই কাহিনী অন্যভাবে লেখা আছে। সেখানে বলা আছে হজরত ইব্রাহিম আঃ এর স্ত্রীর নির্দেশে তার দাসী ও দাসীর গর্ভে তার সন্তানকে গভীর জংগলে ফেলে রেখে আসেন হজরত ইব্রাহিম আঃ। হজরত ইব্রাহিম আঃ এর স্ত্রীর গর্ভে নব্বই বছর বয়স পর্যন্ত কোন সন্তান আসেনি। শিশু ইসমাইল আঃ কে হজরত ইব্রাইম আঃ অনেক ভালবাসতেন। দাসী ও তার ছেলের প্রতি হজরত ইব্রাহিম আঃ এর স্ত্রী ইর্ষান্বিতা ছিলেন।

অন্য একটি ইতিহাস থেকে জানা যায় হজরত জিব্রাইল আঃ মাটিতে আঘাত করে জমজমের সৃষ্টি করেন এবং এই পানি মরুভুমিতে মানুষের তৃষ্ণা মেটায়। মক্কা একটি বাণিজ্য নগরী হয়ে উঠে এবং প্রতিবেশী দেশ থেকে মানুষ আসে এই জমজমের পবিত্র পানি পান করার জন্য।

বিবি হাজেরা যেখানে মাথা রেখে অজ্ঞান হয়ে গেছিলেন, পরবর্তীকালে আল্লাহ্‌র নির্দেশে সেখানেই কাবা শরীফ নির্মান করেন হজরত ইব্রাহীম আঃ । এই কাবা শরীফ নির্মাণকালে হজরত ইসমাইল আঃ পিতার কাজে সাহায্য করেন। হজরত ইব্রাহিম আঃ এর সন্তান ইসমাইল আঃ এর নাম কোরাআনের কোথাও উল্লেখ না থাকলেও তখনকার যুগের মানুষ মনে করেন এই সন্তানের নাম ইসমাইল ছিল। হজরত ইব্রাহীম আঃ যখন আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালন করতে যান তখন শয়তান উনাকে বাঁধা প্রদান করে সেসময় তিনি শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে মারেন।
হজ্ব পালন করার সময়ে তাই পাথর ছুঁড়ে মারা হয়।

হজরত ইব্রাহীম আঃ এর বয়স যখন ৯৯ বছর, আল্লাহ্‌র কাছে অনেক বছরের প্রার্থনার পরে উনি এই পুত্রসন্তান লাভ করেন। সন্তানকে আল্লাহ্‌র নামে কোরবানী দেবার জন্য তখন নির্দেশ আসে তখন তিনি তার সন্তানের সাথে কথা বলেন। আল্লাহ্‌র নামে কোরবানী হতে পুত্র রাজী হয়ে যায়। পিতা পুত্রকে জবাই করেন কিন্তু পুত্র অক্ষত রয়ে যায়। আল্লাহ্‌র পরীক্ষায় হজরত ইব্রাহীম আঃ উত্তীর্ণ হন ।
— Quran, sura 37 (As-Saaffat), ayat 100–112
সুরা ৩৭ – আস সাআফাত ঃ ১০০-১১২
পবিত্র কোরআনে বলা আছেঃ

100 “O my Lord! Grant me a righteous (son)!”
১০০ – আল্লাহ্‌ আমাকে একটি পুত্রসন্তান দিন
101 So We gave him the good news of a boy ready to suffer and forbear.
১০১ – আল্লাহ্‌র তরফ থেকে একটি পুত্রসন্তান লাভ করেন [যাকে আল্লাহ্‌র নামে কোরবানি দিতে বলা হয়, কোরবানি দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন, প্রস্তুন হন, এবং থেমে যান]
102 Then, when (the son) reached (the age of) (serious) work with him, he said: “O my son! I see in vision that I offer thee in sacrifice: Now see what is thy view!” (The son) said: “O my father! Do as thou art commanded: thou will find me, if Allah so wills one practising Patience and Constancy!”
১০২ – থেমে যান কারণ তিনি পুত্রকে অবগত করতে চান আল্লাহ্‌র নির্দেশের কথা; পুত্রকে জানান – পুত্র , তোমাকে কোরবানি দেবার জন্য আল্লাহ্‌র কাছ থেকে নির্দেশ পেয়েছি; পুত্র বলেনঃ “হে পিতা! আপনি আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালন করুন; আল্লাহ্‌ যদি ইচ্ছা করেন, ত্যাগ, ধৈর্য ও আনুগত্য প্রদর্শনের মাধ্যমেই আপনি আমাকে ফিরে পাবেন;
103 So when they had both submitted their wills (to Allah), and he had laid him prostrate on his forehead (for sacrifice),
১০৩—পিতা ও পুত্র দুইজনেই আল্লাহ্‌র নির্দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে, ছেলেকে কোরবানি করার জন্য প্রস্তুত হন
104 We called out to him “O Abraham!
১০৪— আল্লাহর ফেরেস্তা ডেকে উঠেন – “ও ইব্রাহীম!
105 “Thou hast already fulfilled the vision!” – thus indeed do We reward those who do right.
১০৫—আল্লাহ্‌ আপনার কোরবানি কবুল করে নিয়েছেন – আল্লাহ্‌ তাকেই পুরস্কৃত করেন যে সঠিক কাজ করে
106 For this was obviously a trial–
১০৬ – আল্লাহ্‌র এই নির্দেশ ছিল একটি পরীক্ষামাত্র
107 And We ransomed him with a momentous sacrifice:
১০৭— সেজন্য আমরা তাকে পুরস্কৃত করেছি তার প্রিয় সন্তানকে ফিরিয়ে দিয়ে
108 And We left (this blessing) for him among generations (to come) in later times:
১০৮ – এবং আল্লাহ্‌র রহমত যুগে যুগে মানুষের উপরে বর্ষিত হবে [হজরত ইব্রাহীম আঃ এর আনুগত্য ও তার ছেলের সন্মতি – এটি একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে যুগে যুগে]
109 “Peace and salutation to Abraham!”
১০৯ – আল্লাহ্‌র নির্দেশ মেনে চলার ইচ্ছার জন্য হজরত ইব্রাহীম আঃ উপর শান্তি বর্ষিত হোক
110 Thus indeed do We reward those who do right.
১১০ – যারা আল্লাহ্‌র নির্দেশ মেনে চলে আল্লাহ্‌ তাদের পুরস্কৃত করেন
111 For he was one of our believing Servants.
১১১ – হজরত ইব্রাহীম আঃ আল্লাহ্‌র বিশ্বস্ত সেবক
112 And We gave him the good news of Isaac – a prophet – one of the Righteous.
১১২ – আল্লাহ্‌র নির্দেশে হজরত ইব্রাহীম আঃ এর পুত্র নবী হলেন

এই সুরাতে কোথাও বলা নাই যে কোরবানি ঈদ এলেই সবাইকে গরু কিনতে দৌড়াতে হবে। কোথাও বলা নাই – এর পরের সব মুসলমানেরা সবাই কোরবানি ঈদ এলেই গরু কিনে গরু জবাই করে ফ্রিজ ভর্তি করে ফেলতে হবে।

একজন মুসলমান প্রথমে ফরজ পালন করে। ফরয পালন করার পরে সুন্নত পালন করতে হবে।
সুন্নত পালন করার পরে নফল পালন করে। তারপর ওয়াজিব পালন করে।
Imam Muslim reported on the authority of Umm Salamah that the Prophet (peace and blessings be upon him) said, “When the ten days of Dhul Hijjah enters, if anyone wishes to sacrifice, he must not remove his hair or nails (until the sacrifice is done).” Imam Ash-Shafi`i comments on this saying, “It is clear from the phrase, ‘if anyone wishes to sacrifice’ that sacrifice is only recommended and not obligatory on everyone.”

Imam Ahmad and Ibn Majah reported that the Prophet (peace and blessings be upon him) said when asked about the significance of sacrifice, “It is a Sunnah of your ancestor Ibrahim (upon whom be peace).”

মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন – কেউ যদি ইচ্ছা করে কোরবানি করতে, তাহলে সে করতে পারে কিন্তু কোরবানি করা “অবশ্য কর্তব্য নহে”

যার কোরবানি করার মত টাকা নাই তার কোরবানি করার দরকার নাই। একজন ঋনগ্রস্থ মানুষ কোরবানি করতে পারেনা। কোরবানি একটি পবিত্র শব্দ। আল্লাহ্‌র নির্দেশে আল্লাহ্‌র প্রতি অবিচল বিশ্বাস ও আনুগত্য প্রকাশ করে নিজের প্রানপ্রিয় সন্তানকে কোরবানি করতে রাজী হয়ে যাওয়ার সাথে বাজার থেকে হাজার হাজার টাকা মূল্যের গরু কিনে জবাই করে মাংস খাবার প্রবণতার সাথে কিভাবে তুলনীয় হতে পারে?

আপনি একজন আমলা – ঘুষ ছাড়া কিছুই খাননা। আপনার টাকাতে গরু কিনে আপনি কি ত্যাগ করলেন?? যারা আপনাকে ঘুষ দেয় তাদের কোরবানি তো আপনি করেই ফেলেছেন!

আপনি একজন উকিল – মিথ্যা ছাড়া কিছুই বলেন না। আপনি বিশাল গরু কিনলেন – কোন লাভ নেই তাতে।

আপনি একজন ব্যবসায়ী – পন্য বিক্রি করেন ৫০% মুনাফা রেখে । সেই টাকা দিয়ে গরু কিনে জবাই করলেন। কোন লাভ নাই। আপনারা যেভাবে মানুষের রক্ত চুষে টাকা উপার্জন করেন – আপনারা তো প্রতিদিন কোরবানি ঈদ পালন করতে পারেন।

আপনি একজন পুলিশ – টাকার দরকার হলেই রাস্তায় নিরীহ মানুষ পিটিয়ে জেলে ভরেন। ভুয়া মামলা দিয়া পাবলিকদের কাছ থেকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা উপার্জন করেন – আপনিও গরু কিনলেন – তাতেও কোন লাভ নেই। পিকনিক করতে চান বছরে একদিন। ভাল কথা করেন। কোরবানি ঈদের দিন কেন?

আপনি একজন রাজনীতিবিদ । খুনী, ধর্ষক, নিপীড়ক, সাড়া জীবন মিথ্যা বললেন আর টুপি পড়ে দাঁড়ি লাগায়ে প্রতিবছর বড় বড় গরু জবাই দিলেন । কোন লাভ নাই।

আপনি একজন প্রতারক । মিথ্যা কথা বলে একজনকে বিয়ে করে, তাকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলে ঋন করিয়ে সেই টাকা দিয়ে গরু কিনে প্রতিবেশীকে দেখালেন আপনি একজন ব্যাপক মুসলমান এক বিশাল গরু কোরবানি দিলেন – তাতে কোন লাভ নেই!!

আপনি একজন মানবপাচারকারী। মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের বিদেশে পাঠাবার নাম করে থাইল্যান্ডের গভীর জংগলে কবর দিয়ে কোরবানী করেছেন একবার আবার সেই টাকা দিয়ে গরু কিনে ফ্রিজ ভর্তি করে তো কোন লাভ নাই।

যারা প্রতিদিন নিরীহ মানুষ জবাই করে, বছরের মাঝেে এসে আরও একটি নিরীহ পশু জবাই করার তো তাদের কোন দরকার নাই।

বাংলাদেশে শুনেছি সব গরু ভারত থেকে আসে। বিদেশ থেকে আসা গরুর দাম বেশী হবে খুব স্বাভাবিক। অনেকে ভাগে কোরবানি দেয়। মাংসের লোভ সামলানো মুশকিল। বাংলাদেশের ধনী মানেই চোর ও দুর্নীতিবাজ। অনেকে মনে করে সব ধনী দুর্ণীতিবাজ না হতেও পারে। [অনেকে জন্মের সময় টাকা সাথে এনেছে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে] এইটা অনেকটা সেই চ্যালেঞ্জের মত —

“শুধু কি বড়লোকের ছেলেরাই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে নাকি? “ অনেক রিকশাওয়ালার ছেলেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে”
পড়তে পারে কিন্তু কোন রিকশাওয়ালার জন্য কোরবানি অবশ্য কর্তব্য নহে ।

বাংলাদেশের ৫% সম্পদশালী মানুষেরা বাকী ৯৫% মানুষের রক্ত চুষে ধনী হয়েছে।
রক্ত চোষার কারণে ৫% এর কোরবানি আল্লাহ্‌ গ্রহণ করবেন না। আর ৯৫% মানুষেরা যেহেতু রক্ত শুন্যতায় ভুগছে তাই তাদের জন্য “কোরবানি অবশ্য কর্তব্য নহে” ।

প্রথমে ফরজ কাজ করুন। প্রথমে মুসলমান হন, ১৬ কোটি মানুষের তিনবেলার আহারের ব্যবস্থা করুন। বারান্দায় লাগানো সব্জি ভাঁজি করে ঈদ আল আযহা পালন করুন। পবিত্র ঈদে দোয়া করি সবাই যেন মুসলমান হয় এবং ফরয পালন করে।

যিনি সঠিক কাজ করেন – আল্লাহ্‌ তাঁকেই শুধু পুরষ্কৃত করেন।