সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরবানি করতে হলে

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় ১০ জিলহজ ফজর হতে ১৩ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্ধারিত পশু নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জবেহ করাকে কোরবানি বলে। কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়। কোরবানির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি করা।

কোরবানির পশু ত্রুটিমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েয হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না অন্ধ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত; যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত; যার কোনো অঙ্গ ভেঙে গেছে। নাসায়ির বর্ণনায় ‘আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে। -তিরমিজি

কোরবানি নিজ হাতে কোরবানি দেওয়া উত্তম। হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, একটি দুম্বা আনা হলো। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে জবেহ করলেন এবং বললেন, ‘বিসমিল্লাহি ওয়াআল্লাহু আকবার’ হে আল্লাহ! এটা আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে।

ঈদের নামাজের পর পশু কোরবানি করা। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এ দিনটি আমরা শুরু করবো নামাজ দিয়ে। অতঃপর নামাজ থেকে ফিরে আমরা কোরবানি করবো। যে এমন আমল করবে, সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করলো। আর যে এর পূর্বে জবেহ করলো সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করলো। কোরবানির কিছু আদায় হলো না। -সহিহ বোখারি

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কোরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন, ‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ করো।’ সহিহ বোখারি

কোরবানির পর ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। সেজন্য সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে কোরবানিদাতা পরিবেশ সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর রাখতে অবশ্যই ভূমিকা পালন করবেন। কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা করবেন।

মূলত কোরবানি করা হয়ে থাকে আল্লাহর জন্য। এর প্রকৃত উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি। গোশত খওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে কোরবানি করা যাবে না। তাই গোশত নিয়ে কোরবানিদাতা কিংবা শরিকদের পরস্পর বাড়াবাড়ি করা গর্হিত ও কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য পরিপন্থী কাজ।

জবেহ করার সময় পশুকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, আর যখন জবেহ করবে তখনও তা সুন্দরভাবে করবে। তোমাদের একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং যা জবেহ করা হবে তাকে যেন প্রশান্তি দেয়। -সহিহ মুসলিম

লোক দেখানো কিংবা খ্যাতি অর্জনের জন্য কোরবানি করা যাবে না। কারণ, রিয়া হলো ছোট শিরক। কেননা হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি লোক দেখানো নামাজ আদায় করল, সে শিরক করল, যে ব্যক্তি লোক দেখানো রোজা পালন করল, সে শিরক করল। আর যে দান করল লোক দেখানোর জন্য সেও শিরক করল।’

কোরবানির তিনদিনের মধ্যে যে দু’টি রাত অন্তুর্ভুক্ত, সেই দুই রাতেও কোরবানি করা জায়েজ। কিন্তু রাতে জবাই করা ভালো নয়। যদি কোনো একটি রগ কাটা না হয় তবে কোরবানি জায়েজ হবে না।

বকরি, পাঠা, খাসি, ভেড়া, দুম্বা, গাভি, ষাঁড়, বলদ, মহিষ, উট এই ধরনের গৃহপালিত পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ। হরিণ ও অন্যান্য হালাল বন্যপশু দিয়ে কোরবানি আদায় হবে না।

গরু, মহিষ ও উট- এই তিন প্রকার পশুতে সাতজন পর্যন্ত অংশীদার হয়ে কোরবানি করতে পারে। তবে কোরবানি জায়েজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো- কারো অংশ যেন সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম না হয় ও কারো যেন শুধু গোশত খাওয়ার নিয়ত না থাকে, সবারই যেন কোরবানির নিয়ত থাকে। অবশ্য যদি কারো আকিকার নিয়ত থাকে, তবে সেটাও জায়েজ হবে। কিন্তু যদি একজনেরও শুধু গোশত খাওয়ার নিয়ত থাকে, কোরবানির বা আকিকার নিয়ত না থাকে, তবে কারো কোরবানিই জায়েজ হবে না। এমনিভাবে যদি মাত্র একজনের অংশ সাতভাগের এক ভাগের চেয়ে কম হয়, তবে অংশীদারদের সবার কোরবানি নষ্ট হয়ে যাবে।




৪ thoughts on “সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরবানি করতে হলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *