একই পুরুষের ঔরশজাত মা-মেয়ে

ঢাকা : অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে এক নারী সম্প্রতি এক লোমহর্ষক পারিবারিক কলঙ্কের ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, তিনি তার বাবার ঔরশজাত নন, বরং নানার ঔরশজাত! তার মাকে বন্দুকের নলের মুখে ধর্ষণ করেছিল তারই নানা আর তিনি সেই পাপেরই ফসল। এই বিষয়টি জানা পর তিনি নিজেকে তিলেতিলে শেষ করে দেয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু অবশেষে তা আর হয়নি।

জোডি কাহিল (৩৮), এই ঘৃণিত ঘটনার ফসল। বিষয়টি জানতে পেরেছেন চার বছর আগে মায়ের লেখা একটি চিঠি থেকে। যেখানে তার বহুবছর আগে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসিত মা বলেন অস্ত্রের মুখে তার প্রতি কি অন্যায় করা হয়েছিল! সেই নিন্দিত ঘটনা তিনি সহ্য করতে না পেরে নির্বাসন বরণ করেছিলেন আর গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে এই সত্যকে নিজের মধ্যে ধারণ করেছিলেন। ৩৮ বছর বয়সী এই নারী তার মায়ের সেই চিঠির মাধ্যমে জানতে পারেন কীভাবে মা নিজের বাবার পাশবিকতা আর লালসার শিকার হয়েছিলেন। ব্রিটিশ দৈনিক ‘ডেইলি মেইল’ এর কাছে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এই নগ্ন সত্য তার কাছে প্রকাশিত হওয়ার পর তিনিও আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।

জোডি বলেন, যখন তিনি ডাকযোগে মায়ের কাছ থেকে সেই প্রথম চিঠিটি পান তখন মারাত্মক মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে পড়েন। তারপর থেকে চিঠির বাক্স খুলতেও সাহস পেতেন না। কারণ, মা তাকে একটার পর একটা চিঠি লিখতে থাকেন। আর সেই সব চিঠিতে তিনি তার জীবনের সমস্ত অতীতকে নিজের সন্তানের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তার মা বলেন, সেই রাতে আমি এতটাই ক্ষুব্ধ আর কষ্ট পেয়েছিলাম যে ব্রিজ থেকে লাফিয়ে মরতে চেয়েছিলাম। আমি জানতাম না আমার কী করা উচিৎ ছিল।

জোডি চিঠিতে জানতে পারেন, মা সেই লালসার শিকার হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। তিনি যখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তখন তিন মাস কেটে গেছে। আর চিকিৎসকের কাছেই জানতে পারেন তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার সেই মুহূর্তে কিছুই অনুকূলে ছিল না। চরম হতাশা আর মানসিক যন্ত্রণায় কেটেছে প্রতিটি মুহূর্ত। নিজের জীবন শেষ করতে গিয়েও পারেননি কারণ তিনি জানতেন তখন তার জীবন মানে শুধুই তার জীবন নয়। তার শরীরের ভেতরে তিল তিল করে বেড়ে উঠছে আরেকটি নিষ্পাপ জীবন। সেটাকে নষ্ট করার অধিকার তার নেই। তাই তিনি গর্ভপাত ঘটাতে গিয়েও পারেননি। আবার এর সাথে সহাবস্থান করাও তার পক্ষে কঠিন ছিল।

পুরো চিঠিতেই জোডির প্রতি তার মায়ের একটা কষ্টমিশ্রিত ভালোবাসার ছাপ ছিল। কিন্তু সে জন্মের পর তীব্র মনোকষ্টের কারণে একটা সময়ে গিয়ে তিনি মেয়ের দিকে তাকাতেও পারতেন না। যখন তাকাতেন তখনই মনে একটা বিষয়ই ভেসে উঠতো- সমাজের কাছে আর তার নিজের কাছে জোডি দুটি ভিন্ন সত্তা। এভাবে একটা সময় জোডির প্রতি তার ভালোবাসা ঘৃণায় রূপান্তরিত হয়। মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে তিনি জোডিকে ছেড়ে চলে যান। ছোট্ট জোডি তার নানীর কাছে বড় হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কিছুটা সুস্থ হন এবং সত্যকে প্রকাশ করার দায়িত্ববোধ থেকেই প্রায় তিন দশক পর মেয়েকে সবকিছু বলার সিদ্ধান্ত নেন। তাকে বলতেই হবে। তা সত্য যত নির্মমই হোক না কেন।

জোডি এই ভয়াবহ সত্যকে আড়াল করতে গিয়ে নিজের জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াতে চাইতেন। ভুলে থাকার জন্য দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেন। কিন্তু কোথাও শান্তি খুঁজে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন- নিজেকে মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দেবেন। আর এভাবেই একটা সময় মারাত্মকভাবে ক্ষুধামন্দা রোগে আক্রান্ত হন। আর এতে তার শরীরের ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমতে থাকে। প্রায় ৩৪ কেজির মতো ওজন হারিয়েছিলেন তিনি। মারাত্নক অসুস্থতার শিকার জোডি রয়্যাল মেলবোর্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর তাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।

আর জোডি এভাবেই মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ‘আমার মা আমাকে কঠিন একটা সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু আমার প্রতি মায়ের ভালোবাসা ছিল সীমাহীন। তাই তিনি আমাকে তার গর্ভে সেদিন হত্যা করেননি।’

জোডি এখন সুস্থ আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তার জীবনে যতটুকু সম্ভব মানুষের জন্য কাজ করা। সমস্যায় জর্জরিত মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া। তার জীবনের বাস্তব সত্যকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান জোডি যাতে সবাই জীবনের যেকোনো নগ্ন সত্যের মুখোমুখি হয়ে জীবন থেকে পালিয়ে না বেড়ায়। কারণ জোডি মনে করেন প্রতিটি জীবনই মহা মূল্যবান আর সীমাহীন সম্ভাবনাময়। সেই জীবনকে নষ্ট করে দেয়ার মধ্যে কোনো সার্থকতা নেই। সার্থকতা হলো ব্যক্তিসত্তার ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্বমানবতার কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করা। জোডি বলেন, ‘তোমার কোনো কঠিন সমস্যা থাকতে পারে। পাশাপাশি সেগুলো সমাধানের জন্য চিকিৎসক এবং ভালো বন্ধুও থাকতে পারে। কিন্তু তুমি যতদিন পর্যন্ত এটাকে ঘৃণা করতে না শিখবে ততদিন পর্যন্ত তুমি এটাকে পরাজিত করতে পারবে না।’

৮ thoughts on “একই পুরুষের ঔরশজাত মা-মেয়ে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *