রানা মুহম্মদ মাসুদ : ঢাকার চারপাশে নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ৩০ ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ২২টি মসজিদ, তিনটি স্কুল ও কলেজ, দুটি মাজার, একটি মাদ্রাসা, একটি এতিমখানা ও একটি স্নানঘাট রয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এ প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করেছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও তারা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে দিয়েছে। ঢাকার চারপাশ দিয়ে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদী বয়ে গেছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা এ স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করেছি। এগুলোর কোনো অনুমোদন নেই। সবগুলো অবৈধ, নদীর মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। আরও এমন প্রতিষ্ঠান আছে কিনা তা নতুন গঠিত কমিটি দেখবে। যদি থাকে তবে এ তালিকার সঙ্গে যুক্ত হবে।’
নদীর তীর থেকে অবৈধ ধর্মীয় স্থাপনা স্থানান্তর ও উচ্ছেদের জন্য সুপারিশ দিতে বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাসির আরিফ মাহমুদকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।
নদীর মধ্যে স্থাপন করা ২২টি মসজিদের মধ্যে রয়েছে বুড়িগঙ্গার বাদামতলী স্টিমার ঘাটে বায়তুল আমান জামে মসজিদ। বেড়িবাঁধের ভেতর নদীর দিকে একতলা বিল্ডিংয়ের মসজিদটিতে একটি সেমিপাকা টিনশেড ছাড়াও সেমিপাকা বাথরুম রয়েছে।
বাদামতলীর নবাববাড়ী ঘাটে রয়েছে চারতলা বায়তুল সালাম জামে মসজিদ। বাকল্যান্ড বাঁধ রোডে সদর ঘাটে রয়েছে বায়তুন নাজাত জামে মসজিদ ও সদরঘাট ছিন্নমূল এতিমখানা। চারতলা বিশিষ্ট এ মসজিদটি নদীর মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে।
শ্যামবাজারে নদীর মধ্যে গড়ে উঠেছে শ্যামবাজার জামে মসজিদ। দোতলা এ মসজিদটির তৃতীয় তলায় টিনের ছাপড়া রয়েছে। সূত্রাপুরে বুড়িগঙ্গার তীরে আরও রয়েছে উল্টিনগঞ্জ জামে মসজিদ।
সূত্রাপুরে নদীর তীরে গড়ে উঠেছে দোতলা ভবনের মসজিদে নূর মোহাম্মাদীয়া। কেরাণীগঞ্জের জিনজিরায় টিনের ছাপড়া দেওয়া আপানগর ডকঘাট মসজিদ। যদিও গত ১২ আগস্ট মসজিদটি উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এ ছাড়া নদীর মধ্যে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে কেরাণীগঞ্জে তিনতলা পাকা বিল্ডিংয়ের জিনজিরা ফেরিঘাট জামে মসজিদ, কেরাণীগঞ্জের খোলামোড়া লঞ্চঘাটে একতলা খোলামোড়া ঘাট জামে মসজিদ, কেরাণীগঞ্জের ফয়েজনগর শাহী জামে মসজিদ।
কেরাণীগঞ্জের মান্ডাইল জামে মসজিদ, কেরাণীগঞ্জের জিনজিরার টিকাজোর জামে মসজিদ, লালবাগের মুসলিমবাদ টাওয়ার জামে মসজিদ, লালবাগের রসুলবাগে বাইতুর রহমান জামে মসজিদ, লালবাগ কয়লাঘাটের তারা মসজিদ ও লালবাগ কামরাঙ্গীরচর সরকার বাড়ীর আল-আকসা জামে মসজিদও নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে।
হাজারীবাগের খাজা বাবা ফরিদপুরী জামে মসজিদ, হাজারীবাগের চরকামরাঙ্গীর জান্নাতুল মাওয়া জামে মসজিদ, কামরাঙ্গীরচরের পাকাপুল আশ্রাফাবাদের বাইতুর নুর জামে মসজিদ ও বাইতুল হোসনা জামে সমজিদ, দারুসসালামের গাবতলী বালুঘাট জামে মসজিদ ও উত্তরা পশ্চিম পাড়া আব্দুল্লাহপুরের বায়তুন নূর জামে মসজিদও নির্মিত হয়েছে নদীর জায়গায়।
নদীর পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বিদ্যালয় রয়েছে তিনটি। দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের চরমিরেরবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালবাগের চররঘুনাথপুরে রয়েছে জিনজিরা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজারীবাগের আর এন রোডে লালবাগ স্কুল এ্যান্ড কলেজ।
হাজারীবাগ ইসলামবাগের চন্দ্রপাড়া খানকা শরীফ ও হাজারীবাগের এন ডি রোডের আ. রহিম চিশতী দরবার শরীফও অবৈধভাবে নদীর জায়গায় স্থাপিত হয়েছে।
কামরাঙ্গীরচরের নিজামবাগের জামিয়া তালাবিয়া আশ্রাফুল উলুম মাদ্রাসা ও কামরাঙ্গীরচরের আশ্রাফাবাদ মাদ্রাসা পাড়ার নূর এতিমখানারও কোনো অনুমোদন নেই।
বুড়িগঙ্গায় অনুমোদনহীন স্নানঘাট রয়েছে একটি। এটি হচ্ছে বিনাস্মৃতি স্নান ঘাট।
নদীর তীর থেকে বুধবার ধর্মীয় স্থাপনা সরাতে কমিটি গঠনের সভা শেষে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি যে কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে মসজিদ করার জন্য জমি ওয়াকফ করতে হবে। এ ছাড়া ওই মসজিদের নামাজ সহীহ (শুদ্ধ) হবে না। এটাই ধর্মীয় অনুশাসন।
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, পর্যালোচনায় বেরিয়ে এসেছে কেউ কেউ ইনোসেন্টলি (না বুঝে) ধর্মীয় স্থাপনা করেছেন, কেউ কেউ সম্পত্তি রক্ষায় অসৎ উদ্দেশ্যে এগুলো নির্মাণ করেছেন। যারা না বুঝে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করেছেন সেগুলো স্থানান্তর ও অসৎ উদ্দেশ্যে করা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
Mizanur Rahman liked this on Facebook.
MG Azam liked this on Facebook.
Moin Ahmed liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.
Ariful Islam Jony liked this on Facebook.