টাঙ্গাইলে বিক্ষুব্ধ লোকজনের উপর পুলিশের গুলি করা কতটা যৌক্তিক ছিল?

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে পুলিশ যে পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ লোকজনের ওপর গুলি চালিয়েছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় গুলি করা জরুরি ছিল না। গুলি না চালিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো। পুলিশ মাথা ও বুকে গুলি চালিয়েছে। পুলিশ প্রবিধানে ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের বিধান রয়েছে। ‘নাশকতাকারী’দের অনেকবার সতর্কবাণী প্রদান করার পরও ছত্রভঙ্গ না হলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করতে পারে। তবে সাধারণ রীতি অনুযায়ী অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ কোমরের নিচে গুলি করে।

টাঙ্গাইলের ঘটনায় সংবাদকর্মীদের তোলা ছবিতে দেখা যায়, যে তিনজন মারা গেছেন, তারা বুক ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহতদের শোকাতুর স্বজনরা বলছেন, বিনা কারণে তাদের গুলি করা হলো। তারা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন। টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে মা ও ছেলেকে নির্যাতনের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ মিছিলে শুক্রবার বিকেলে গুলি চালায় পুলিশ। এতে তিনজন নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৫ জন।

এদিকে টাঙ্গাইলের ঘটনায় কালিহাতী থানার সাত পুলিশ সদস্যকে গতকাল প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজন উপপরিদর্শক (এসআই) ও চারজন কনস্টেবল। ঘটনাটি তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তর, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। টাঙ্গাইলের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আটশ’জনকে আসামি করে গতকাল দুটি মামলা করেছে। অনেকে এখন ভয়ে গ্রামছাড়া। আতঙ্কে কালিহাতী ও ঘাটাইলে অনেক ব্যবসায়ী দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন।

এ ব্যাপারে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে। তার প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ মানুষের যে কোনো ধরনের যৌক্তিক প্রতিবাদ রাষ্ট্রকে মেনে নিতে হয়। তবে নিরস্ত্র মানুষের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে অযৌক্তিক শক্তি প্রয়োগ ক্ষমতার অপব্যবহার। এমন ঘটনায় জড়িতদের প্রত্যাহার করে নেওয়া সাজা হিসেবে যথেষ্ট নয়। তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, দলবদ্ধভাবে যখন কোনো গ্রুপ রাস্তা অবরোধ ও জনগণের জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তা মোকাবেলা করতে কৌশলী হওয়া জরুরি। কারণ তারা অনেক উন্মত্ত থাকে। একটি ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আবার রাস্তায় নেমে ভাংচুর করা কোনোভাবে কাম্য নয়।

বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে গুলি চালানো চূড়ান্ত পদক্ষেপ। গুলি চালানোর আগে পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা উপায়ে পদক্ষেপ নিতে হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ সেটা করেই গুলি ছোড়ে।

পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, কেন-কী কারণে এ ঘটনা ঘটল, কেনই বা গুলি করার প্রয়োজন হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সাতজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানুষের জানমাল রক্ষার্থে যা যা করণীয়, তা আমরা করব। আমার ফোর্স যদি কোনো অন্যায় করে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরাসরি যারা গুলি ছোড়ার সঙ্গে জড়িত তাদের পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হচ্ছে।

স্থানীয় থানার ওসি ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে কেন প্রত্যাহার করা হয়নি- এমন প্রশ্নে ডিআইজি বলেন, কালিহাতীতে উপনির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন ওসিসহ তাদের প্রত্যাহার করতে হলে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি লাগবে। তদন্তে তাদের দোষ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গোপালপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারের সামনেই গুলি হয়েছে জানানো হলে নূরুজ্জামান বলেন, ‘তিনি কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন, সেটা জানব।’

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান বলেন, গুলি করার যৌক্তিকতা ছিল কি-না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। নিহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
টাঙ্গাইলের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার জানান, এসআই আবুল বাশার, সালাম উদ্দিন ও মোনছেব আলীসহ সাত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কালিহাতীর ঘটনায় অন্য কোনো ইন্ধন রয়েছে কি-না, তাও তদন্ত করে দেখা হবে।

নিহত শামীমের মা আমেনা খাতুন বলেন, জুমার নামাজ পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় শামীম। আর ফিরে আসেনি। ঈদের পর শামীমের সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে তো মিটিং-মিছিলে যায়নি। তবে কেন তাকে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলল। আমি বিচার চাই।’

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে পুলিশ-গ্রামবাসী সংঘর্ষে তিনজন নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ (আসক) বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে।

প্রেক্ষাপট: কালিহাতী উপজেলা সদরের সাতুটিয়া গ্রামে মোজাফফর হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম রোমার স্ত্রীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল উপজেলার রাজমিস্ত্রি আল-আমিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কয়েক মাস আগে রোমার স্ত্রী ওই যুবকের সঙ্গে চলে যান। পরে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। কয়েক দিন আগে রোমার স্ত্রী আবার ওই যুবকের কাছে চলে যান। ১৫ সেপ্টেম্বর রোমা ও তাদের পরিবারের লোকজন মীমাংসার বিষয়ে আলোচনার কথা বলে ওই যুবক ও তার মাকে তাদের বাড়িতে ডেকে আনে। পরে ওই যুবক ও তার মাকে বিবস্ত্র করা হয়। মায়ের সঙ্গে ছেলেকে অশ্লীল আচরণে বাধ্য করে তারা।

এ ঘটনা এলাকাবাসী পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে দু’জনকে উদ্ধার এবং রফিকুল ইসলাম রোমাকে আটক করে। তবে আটকের পর পুলিশ রহস্যজনক কারণে রোমার রিমান্ড আবেদন না করে তাকে আদালতে পাঠায়।

আদালত রোমাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মা-ছেলেকে নির্যাতনের প্রতিবাদে এলাকাবাসী শুক্রবার রাস্তা অবরোধ করে গাড়ি ভাংচুর করলে পুলিশ গুলি ছোড়ে। স্থানীয়রা জানান, রোমাকে রিমান্ডে না নেওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হন। গত শুক্রবার ঘাটাইলের বিভিন্ন গ্রামে মসজিদ থেকে মাইকিং করে কালিহাতী বাসস্ট্যান্ডে সবাইকে জড়ো হতে বলা হয়। এর মধ্যে কেউ গুজবও ছড়ায়, নির্যাতনের শিকার আল-আমিনের মা আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ সুপার হজে থাকায় ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার হিসেবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার দায়িত্ব পালন করছেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ের পুলিশের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল।

তদন্ত কমিটি: এ ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ডিসিপ্লিন) আলমগীর আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- ঢাকা রেঞ্জের এডিশনাল এসপি আখতারুজ্জামান ও টাঙ্গাইল জেলার এডিশনাল এসপি আসলাম খান। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজিকে প্রধান করে শুক্রবারের ঘটনায় টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেও পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

যেখানে গুলি করা হয়: কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মকর্তা মাহফুজা ইয়াছমিন বলেন, গত শুক্রবার গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাঁচজনকে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে শামীমের পিঠে গুলি লেগে বুক দিয়ে বের হয়ে গেছে। ফারুক ও রুবেলের পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়েছে। শ্যামলের মাথায় গুলি লেগে মগজ বেরিয়ে যায়। শফিকুলের পায়ে গুলি লাগে। শামীম হাসপাতালেই মারা যান। গুলিবিদ্ধ মো. রুবেল (১৯) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার মাথা ও পিঠে গুলি লাগে।

রুবেলের খালাতো ভাই মাসুদ জানান, টাঙ্গাইলে একটি কারিগরি কলেজে সে পড়াশোনা করে, পাশাপাশি মোবাইল দোকানের কর্মচারী। ঘটনার পর পরই দোকান বন্ধ করে বাসায় রওনা হলে হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয় সে। টাঙ্গাইলের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বাদশা মিয়া নামে আরেক যুবক। তার চোয়ালে গুলি লাগে। কালিহাতীতে শ্বশুরবাড়ি থেকে মধুপুরে নিজ বাড়িতে ফেরার সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন: ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন এবং ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য স্থানীয় পুলিশকে পরামর্শ দেন।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নূরুজ্জামানও কালিহাতী থানায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় করেন।

নিহতদের বাড়িতে শোক: ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের মরদেহ কালিহাতীতে আনা হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বাদ আসর কালিহাতী মাঠে জানাজা শেষে তাদের লাশ নিজ নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। জানাজায় বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান ও জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন অংশ নেন। ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার হাজার হাজার মানুষ জানাজায় শরিক হন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা জনতা ব্যাংকের পরিচালক ও এফবিসিসিআইর পরিচালক আবু নাসের নিহত তিনজনের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে দেন।

হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার দুপুরে কালিয়া গ্রামের শামীম, কুষ্টিয়া গ্রামের ফারুক ও সালেঙ্কা গ্রামের শ্যামল দাসের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহতদের পরিবারে চলছে আহাজারি। প্রতিবেশীরাও এসে সমবেদনা জানান। স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর শামীমের স্ত্রী বীথি। দুই সন্তান বাঁধন (৮) ও সিনকে (৩) নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তিনি। ফারুকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী ছেলে আসিফকে (৮) নিয়ে কান্নাকাটি করছেন আসিয়া বেগম। পাশেই বসে আছে তাদের মেয়ে ফাতেমা (৩)। প্রতিবেশীরা জানান, মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়েই ভ্যানচালক ফারুকের সংসার। একই অবস্থা নিহত শ্যামল দাসের (১৫) সালেঙ্কা গ্রামের বাড়িতেও। একটি সেলুনে কাজ করত সে। তিন ভাইয়ের মধ্যে শ্যামল ছিল সবার বড়। সন্তান হারিয়ে কাঠমিস্ত্রি বাবা রবি চন্দ্র দাস পাগলপ্রায় এবং মা ভারতী রানী বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি আসকের: টাঙ্গাইলে তিনজন নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ মোকাবেলায় বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সতর্ক হতে হবে। এটি পরিষ্কার নয় যে, ফাঁকা গুলি ছোড়ার কারণে এত মানুষ কীভাবে গুলিবিদ্ধ হতে পারে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে।

বিদেশে যাওয়া হলো না শামীমের: বিদেশে যাওয়া হলো না শামীমের। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর তার সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। প্রতিবাদ মিছিলে গিয়ে গুলি খেয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হলো তাকে। লাশের পাশে দাঁড়িয়ে তার বৃদ্ধ মা আমেনা খাতুন হাউমাউ করে কাঁদছেন। লাশ দেখে স্ত্রী বীথি আক্তার বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। শামীমের আট বছরের সন্তান বাঁধন বাবার লাশের পাশে করুণদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সবার কান্না দেখে কিছু না বুঝলেও করুণ চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছে শামীমের তিন বছরের আরেক সন্তান মীম।

শামীম ছিলেন চার ভাই দুই বোনের মধ্যে তৃতীয়। তিনি ধানের তুষের ব্যবসা করতেন। বীথি আক্তার বলেন, কখনও কল্পনা করতে পারিনি, এত অল্প বয়সে বিধবা হবো। একজন মাকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা তার বিচার চাইতে পারব না। শামীমের তো কোনো দোষ ছিল না। তাহলে ওকে গুলি করে মারা হলো কেন?

বিকেলে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত শামীম ও শ্যামলের লাশ কালিহাতী গ্রামের বাড়ি সালেঙ্কা এসে পেঁৗছলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এদিকে কালিহাতী উপজেলা পরিষদের পেছনেই বাড়ি শ্যামল চন্দ্র দাসের। তিন ভাইয়ের মধ্যে শ্যামল সবার বড়। সে কালিহাতী বাসস্ট্যান্ডে স্বপন হেয়ার কাটিংয়ে কাজ করত। প্রতিবাদ মিছিলে শ্যামলও যোগ দেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তার শরীরে গুলি লাগে।

তার বাবা রবি চন্দ্র দাস বলেন, সে ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সে নিহত হওয়ায় আমরা এখন চোখেমুখে অন্ধকার দেখছি।

এ আর

৮ thoughts on “টাঙ্গাইলে বিক্ষুব্ধ লোকজনের উপর পুলিশের গুলি করা কতটা যৌক্তিক ছিল?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *