ঢাকা: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী আর নেই। আজ সোমবার ভোরে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান ৯টা ৫৫ মিনিটে জানান, ‘আপনাদের মতো আমিও শুনেছি যে, তিনি মারা গেছেন। সকালে উনি নাস্তা করছিলেন। এর পরেই তিনি মারা যান। আমি এখন মন্ত্রী মহোদয়ের বাসায় যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে বিস্তারিত জেনে আপনাদের জানাবো।’
নিউমোনিয়া, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন মন্ত্রী মহসিন আলী। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫ সেপ্টেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে মারা যান তিনি।
সৈয়দ মহসিন আলী ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সড়কের ‘দর্জি মহল’ এ এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আশরাফ আলী এবং মাতা আছকিরুন্নেছা খানম। ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ মহসিন আলী বিবাহিত এবং তিন কন্যা সন্তানের জনক।
সৈয়দ মহসিন আলী এমপি একজন খ্যাতিমান ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি একইসঙ্গে সশস্ত্র যোদ্ধা ও সংগঠক। তিনি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭-মৌলভীবাজার-৩ আসন হতে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১২ জানুয়ারি ২০১৪ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং একই দিন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনৈতিক অঙ্গণে পদচারণা শুরু করেন।
১৯৭১-এ ২৩ বছর বয়সে তিনি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি যুদ্ধকালীন সিলেট বিভাগ সি.এন.সি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে সম্মুখযুদ্ধে নিষ্ঠার সঙ্গে নেতৃত্ব প্রদান করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সম্মুখসমরে আহত হয়েও তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বাংলদেশকে শত্রুমুক্ত করতে সাহসী বীরের ভূমিকা রাখেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি সিলেট জেলা ও বিভাগীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও তিনি সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সৈয়দ মহসিন আলী এমপি মৌলভীবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে তিনবার নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মহকুমা/জেলা রেডক্রিসেন্ট এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি মৌলভীবাজার চেম্বারের সভাপতি এবং মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি তাকে ‘আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক-২০১৪’ প্রদান করে এবং ‘হ্যালো কলকাতা’ নামে কলকাতাভিত্তিক একটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান তাকে ‘নেহেরু সাম্য সম্মাননা-২০১৪’ পুরস্কারে ভূষিত করে। সৈয়দ মহসিন আলী এমপি ভারতের কলকাতা থেকে এমবিএ ডিগ্রিপ্রাপ্ত। তিনি মৌলভীবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন স্থানীয় সরকারের আওতায় দেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে পরিবার পরিকল্পনা ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি বাংলা, ইংরেজী, উর্দু ও হিন্দী ভাষায় বলা ও লেখায় সুদক্ষ ছিলেন।
সৈয়দ মহসিন আলী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজসেবক ও জনদরদী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। তিনি বিভিন্নভাবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।
Titu Bbl liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.
Moin Ahmed liked this on Facebook.
Azim Uddin Arafat liked this on Facebook.
MadZy Anik MoLlick liked this on Facebook.
Mohammed Shakur liked this on Facebook.