মা ও দুই মেয়েকে একসাথে ধর্ষণ, জড়িত আওয়ামীলীগ নেতা

গৃহবধূকে ধর্ষণ এবং এর ভিডিও ধারণ করে হাতিয়ে নেওয়া হয় সম্পত্তি। পরে ছোট মেয়ের সামনেই তাকেসহ বড় মেয়েকে ধর্ষণ করে ১৪ দুর্বৃত্ত। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সে ভিডিও।

২০১৩ সালে ফেনীর দাগনভূঞায় ঘটা এ ঘটনায় ধর্ষিত পরিবার আইনশৃংখলা বাহিনীসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যের দ্বারস্থ হয়েও প্রতিকার পায়নি। দুই বছরেও পায়নি বিচার।

এমনকি মূল অভিযুক্ত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন মামুনকে মামলার আসামিও করা হয়নি।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ছোট মিলনায়তনে শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ সব অভিযোগ করে ধর্ষিত পরিবার।

ধর্ষিত ওই গৃহবধূ জানান, ২০১২ সালে তার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর থেকেই উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান ও সরকার দলীয় নেতা জয়নাল আবেদিন মামুন তাকে উত্যক্ত করতে থাকেন।

পরে তিনি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে মামুন রাজি হননি। তিনি স্থানীয় জামাল উদ্দীনকে বিয়ে করলেও মামুনের হুমকিতে দুইমাস পর তাদের বিচ্ছেদ হয়।

তিনি জানান, ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তার বড় মেয়েকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় মামুনের লোকজন। তারা তাকে ফোন দিলে তিনি মেয়েকে আনতে মামুনের বাসায় যান। তখন মামুন তাকে ধর্ষণ করেন।

এ সময় ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে ছয়টি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে কয়েকটি দোকানসহ সম্পত্তি হাতিয়ে নেন মামুন। তবে পরবর্তীতে ভিডিওটি ফেসবুকের মাধ্যমে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

তিনি জানান, ধর্ষণের পর মামুনের ছোট ভাই লিটু তাকে নিয়ে একটি বাড়িতে যায়। সেখানে তার ১৩ বছরের ছোট মেয়ের সামনে তাকে ও তার বড় মেয়েকে ১৪ জনে ধর্ষণ করে। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে র‌্যাবের একটি টিম তাদের উদ্ধার করে।

তিনি বলেন, এলাকায় ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকাবাসী বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করে। আমরা থানায় মামলা করতে গেলে প্রথমে মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে ফুলগাজি থানা পুলিশ মামলা নিলেও (মামলা নং ২৭/১৫) প্রধান অভিযুক্ত মামুনকে আসামির নাম থেকে বাদ দেওয়া হয়।

এরপর পর্নোগ্রাফি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করি। ঘটনাটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং মহিলা আইনজীবী সমিতিকেও অবহিত করেছি।

তিনি বলেন, মামলাটি বর্তমানে চলমান। কিন্তু আসামি লিটুকে আটক করা হলেও মামুনকে এখনো আটক করা হয়নি। এ বিষয়ে পুলিশ কোনো সহযোগীতা না করায় আমরা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে হুমকিতে আছি।

তিনি বলেন, পুলিশ বলছে মামুনকে আটক করলে তাদের চাকরি চলে যাবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীকে জানালে তিনি বলেন, তাকে আমি দল করতে বলেছি, নির্যাতন করতে বলিনি।

তিনি আরও বলেন, মামুন আমার কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদাও আদায় করেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী যেখানে নারী, সেখানে মার সামনে মেয়েকে, মেয়ের সামনে মাকে নির্যাতন করা হয়। আর আমরা বিচার পাই না। আমি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।

জয়নাল আবেদিন মামুনের বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগ করে জানা যায়, তিনি হজ পালনের জন্য বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।

এ অভিযোগের বিষয়ে তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাছে গৃহবধূ ও তার মেয়েকে ধর্ষণে মামুনের জড়িত থাকার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার কামালউদ্দিন বলেন, ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মারধরের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *