ঘর থেকে ধরে নিয়ে ২ নারীসহ তিনজনকে নির্যাতন

নিজেদের ‘সমাজপতি’ দাবি করে প্রবাসীর স্ত্রী, তার খালাতো বোন ও বোনের স্বামীকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। গত ২৯ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি ইউনিয়নের পাঁচপোতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

‘সমাজপতি’রা তিনজনকে প্রকাশ্যে গ্রামের সবার সামনে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়েছে। কানে ধরে উঠবস করিয়েছে।  প্রবাসীর স্ত্রী সুলতানা (ছদ্মনাম, বয়স ২৬) এ নির্যাতনের বিচার চেয়ে মামলা করেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুলিশ তাঁকে সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

১২ দিন আগে এ ঘটনা ঘটলেও সুলতানা ও তাঁর স্বজনরা বিষয়টি কাউকে জানায়নি। কিন্তু সম্প্রতি ওই নির্যাতনের ছবি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

সুলতানা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। প্রায় ১২ বছর আগে একই উপজেলার কেড়াগাছি ইউনিয়নের পাঁচপোতা গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহিমের (ছদ্মনাম) সঙ্গে সুলতানার বিয়ে হয়। রহিম তিন বছর ধরে মালয়েশিয়ায় চাকরি করছেন।

পাঁচপোতা গ্রামে মেয়ে টুনিকে (ছদ্মনাম, বয়স ৬) নিয়ে একাই থাকতেন সুলতানা। পাশে অন্য এক বাড়িতে থাকতেন সুলতানার বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি। সুলতানা বলেন, ‘স্বামী রহিমের অনুপস্থিতির সুযোগে রহিমের ভাগ্নে বিল্লাল হোসেন প্রায়ই আমাকে উত্ত্যক্ত করত। বিল্লাল একই গ্রামের বাসিন্দা।’ সুলতানা অভিযোগ করেন, বিল্লাল চোরাচালানের কাজ করে। সে তাঁর (সুলতানা) মুঠোফোনের নম্বর চেয়েও না পাওয়ায় আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়। বিল্লাল তাঁর (সুলতানা) বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অশোভন কথা বলে বেড়াত।

সুলতানা আরো জানান, কিছুদিন আগে মালয়েশিয়া থেকে বাড়ি ফিরে আসেন স্বামী রহিমের ভাই মোস্তফা মোড়ল। মোস্তফার সঙ্গে রহিমের জমির সীমানা নিয়ে বিরোধ ছিল। বিল্লাল এই সুযোগে মোস্তফার পক্ষ নিয়ে রহিমের অনুপস্থিতিতে সুলতানা সম্পর্কে আরো বেশি করে কটূক্তি করতে থাকে। এ ঘটনার পর গত চার মাস আগে সুলতানা তাঁর ভাই ওমর শরিফের সঙ্গে নিজ গ্রাম রামকৃষ্ণপুর চলে যান।

সুলতানা জানান, বাড়িঘর দেখার জন্য গত ২৭ আগস্ট মেয়ে টুনি ও নিজের খালাতো বোন পারভীন খাতুনকে (ছদ্মনাম) নিয়ে গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে যান তিনি। একদিন পর গত ২৯ আগস্ট পারভীনের স্বামী আরিফুর রহমানও (ছদ্মনাম) যান তাঁদের বাড়িতে। দুপুরে তাঁরা রান্না করার পাশাপাশি গল্প করছিলেন। তখনই ওই বাড়িতে ঢুকে পড়ে বিল্লাল ও মোস্তফা মোড়ল। সুলতানা জানান, ওই দুজনের সঙ্গে একই গ্রামের রুহুল কুদ্দুস, জিয়া, জোহর, লাল্টু, ভোলা, ইসমাইল, ইমান মুহুরি, আশরাফুল, কাওসারসহ আরো কয়েকজন ছিল। তারা নিজেদের সমাজপতি বলে পরিচয় দেয়।

সুলতানা জানান, বিল্লাল ও মোস্তফা তাঁর বোন রুমা ও জাহিদের পরিচয় জানতে চায়। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁদের পরিচয় করিয়ে দেই। এ সময় বিল্লাল ও তাঁর লোকজন পারভীন ও আরিফের বিয়ের কাগজপত্র দেখতে চায়। আমি বলি গত দেড় বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছে। আর বিয়ের কাগজপত্র তো সঙ্গে থাকে না। এরপরই তারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। বলে, নগদ দিন, তাহলে আমরা কোনো ক্ষতি করব না।’

সুলতানা বলেন, ‘আমি ওদের (বিল্লাল ও অন্যান্য) টাকা দিতে আপত্তি জানাই। এরপরই তারা ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করতে থাকে। এ সময় তারা নগদ টাকা, গলার চেইন, মুঠোফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। কুদ্দুস নামের লোকটি আমাকে চড় মারতে থাকে। এরপরই গরু বাঁধার রশি এনে আমাদের তিনজনকেই হাতে ও পিঠে বেঁধে টানতে টানতে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে। এরপর বাঁশের লাঠি ও কুড়ালের আছাড় খুলে মারধর করে আমাদের।’সুলতানা বলেন, ‘যন্ত্রণায় চিৎকার করলেও এলাকার ছেলে, মেয়ে ও বয়স্ক ব্যক্তিরা এতে উৎসাহ জুগিয়ে উল্লাস করতে থাকে। এভাবে বেশ কয়েক মিনিট ধরে মারধর করার পর আমাদের রশি দিয়ে টেনে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে প্রতিবেশী কমিউনিটি পুলিশ সদস্য  ইসমাইলের বাড়িতে নিয়ে যায়। ওখানে আবারও আমাদের মারধর করা হয়। এরপর একশবার কান ধরে ওঠবস করায়।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন কেড়াগাছি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ফারুক হোসেন ও তাঁর ছেলে সবুজ। ফারুক ‘সমাজপতি’দের কাছ থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে  রশির বাঁধন খুলে দেন। এরপরই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সুলতানা। পারভীন ও আরিফ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকেন। পরে তাঁরা অন্যদের সহযোগিতা নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন।

এ ব্যাপারে কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘এজাহারভুক্ত আসামিরা হচ্ছে রুহুল কুদ্দুস, বিল্লাল ও ইসমাইল। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি হিসেবে  আরো দু-তিনজন রয়েছে।’




৮ thoughts on “ঘর থেকে ধরে নিয়ে ২ নারীসহ তিনজনকে নির্যাতন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *