সম্পর্ক ভাল হতে পারে। সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। সম্পর্ক না থাকতে পারে। সম্পর্ক খারাপ হলেই সম্পর্ক “নেই” হয়ে যায়। সম্পর্ক অনেক রকমের হতে পারে। মাবাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ক। সন্তানের সাথে মায়ের সম্পর্ক আর সন্তানের সাথে বাবার সম্পর্ক আলাদা হতে পারে। মায়ের সাথে সম্পর্ক “খাবার” সম্পর্কিত হয়ে থাকে যদি মা কর্মজীবি না হন। বাবার সাথে সম্পর্ক “টাকা” সম্পর্কিত হয়ে থাকে সংসারে বাবা যদি একাই কর্মজীবি হন। মাবাবা বুড়া হলেও যদি সন্তানের সাথে মধুর সম্পর্ক থাকে তাহলে বুঝতে হবে এই সম্পর্ক আসলেই ভালবাসার সম্পর্ক। আর যদি তা না হয় তাহলে বুঝতে হবে এই সম্পর্ক স্বার্থের সম্পর্ক। অনেক সময় মাবাবা ধনী থাকেন এবং সন্তানদের সম্পত্তি ভাগ করে দেন না। যতদিন না ভাগ করে দেন ততদিন সম্পর্ক ভাল থাকে। ভাইবোন বা ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পর্ক বা বোনের সাথে বোনের সম্পর্ক থাকে। একে অন্যকে অবলম্বন করে। ভাই ও বোনের সম্পর্কে বোন যদি বড় হয় তাহলে ভাই সে সম্পর্কের ফায়দা উঠায় বোনকে দিয়া নানা রকমের কাজ করিয়ে নিয়ে। সংসারে যদি দুইজন ভাই তাহলে সাধারণত দুই ভাইয়ের মধ্য বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকে। তেমনি দুইবোনের সম্পর্ক বন্ধুত্বের হয়ে থাকে।
“স্বার্থ”ই যেকোন সম্পর্ককে টিকে থাকতে সাহায্য করে।
স্বার্থ ছাড়া যদি কোন সম্পর্ক হয় বা স্বার্থ যদি কমবেশী হয় তাহলে সম্পর্ক টিকে থাকেনা। মাবাবা শিশুকে লালনপালন করেন প্রথমতঃ শিশু অসহায় থাকে আর একাকী বড় হতে পারেনা সেজন্য। বাবামায়ের স্বার্থ হলো, বাবামা আশা করেন, শিশুকে লালন পালন করার পরে শিশু যখন বড় হবে, উপার্জন করবে, বাবামা যখন বৃদ্ধ হবেন, শিশুর মত অসহায় হবেন তখন সন্তানেরা মাবাবার দেখাশোনা করবে। এটাই হলো স্বার্থ বা বিনিয়োগ। কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়াই অনেক শিশুর জন্ম হয় । বাবামায়ের কোন উপায় থাকেনা এই শিশুকে লালনপালন না করার। কারণ শিশুরা অসহায় এবং তাদের লালনপালন করা সামাজিক দায়িত্ব। সন্তানকে লালনপালন করা যদি সামাজিক দায়িত্ব হয়ে থাকে তাহলে মাবাবাকে দেখাশোনা করা সামাজিক দায়িত্ব হবেনা কেনো? মাবাবাকে দেখাশোনা করা সন্তানের দায়িত্ব।
ভালবাসা কি জোর করে আদায় করা যায়? যায়না। সন্তানেরা মাবাবাকে জন্ম দেয় না তাই মাবাবার প্রতি তারা এত তীব্র টান অনুভব করেনা যেমন মাবাবা সন্তানদের জন্য অনুভব করেন। যখন মাবাবা কোন একজন সন্তানের পক্ষ নেন তখন অন্য সন্তান বা সন্তানেরা ভাবে যেহেতু মাবাবা তাদের ঐ একজনকে শুধু আদোর করে লালন পালন করছেন, তাই মাবাবাকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব সেই আদোরের সন্তানের। এটা পক্ষপাতিত্ব করার জন্য মাশুল।
সন্তান বড় হয়ে যখন মাবাবাকে দেখাশোনা করতে চায়না তখন মাবাবার সব বিনিয়োগ, ভালবাসা ও স্বার্থ বিনষ্ট হয়। বড় হয়ে অনেক সন্তান মনে করে তারা তাদের নিজেদের সংসার, নিজেদের সন্তানের উপরে বিনিয়োগ করবে একইভাবে যেভাবে তাদের মাবাবা তাদের উপরে বিনিয়োগ করেছে।
“স্বার্থ” এর সংজ্ঞা হলো কোন কিছুর বিনিময়ে কোন কিছু পাবার অলিখিত অঙ্গীকার। “স্বার্থ” একটি লেনদেন। এই লেনদেন সবসময় যে অদৃশ্য থাকে বা অলিখিত থাকে তা নয়। স্বামীস্ত্রীর সম্পর্ক মোটামুটি লিখিত ও স্পষ্ট।
একারণে দেখা যায় একজন স্ত্রী যদি পঙ্গু হয়ে যায় তাহলে সে স্বামীর বোঝা হয়ে যায় এবং যত তারাতারি সম্ভব স্বামী এই বোঝা থেকে মুক্তি পেতে চায়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্য অনেক ধরনের স্বার্থ বিরাজমান। মূল স্বার্থ যৌন সম্পর্ক। জৈবিক ক্ষুধা নিবৃত করার জন্যই নারী-পুরুষের মধ্য সম্পর্ক হয়ে থাকে। অনেকেই বলে থাকে – আমরা কেবল বন্ধু। নারী পুরুষ বন্ধু হতে পারেনা। পুরুষ বা পুরুষে বন্ধু হয় সেখানেও স্বার্থ থাকে। সমাজে যার যত বন্ধু তার তত সামাজিক প্রাধান্য থাকে।
আমার অনেক বন্ধু – কথাটা বলতে অনেকেই গর্ব বোধ করে।
ওর কোন বন্ধু নেই – কথাটা লজ্বার বা এই “বন্ধু” না থাকা মানেই সে অসামাজিক হিসাবে সবার চোখে হেয় হয়ে থাকে। অর্থাৎ সামাজিক লেনদেনে তার কোন বিশেষ ভূমিকা নাই বা স্বার্থ উদ্ধারে লেনদেনের ভারসাম্য রেখে চলার সুযোগ সৃষ্টি হয় নাই।
একজন নারী অন্য একজন নারীর সাথে বন্ধুত্ব করে সেখানেও ব্যাপক স্বার্থ ও লেনদেন চলে। বাজারের লেনদেনের সাথে টাকার সম্পর্ক। সম্পর্কের লেনদেনে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই জিনিষের বিনিময়ে জিনিষ বা অনুভুতির বিনিময়ে অনুভূতি। অনেক সম্পর্কের স্বার্থই খালি চোখে দেখা যায়না। সম্পর্কে স্বার্থ আছে বলেই যারা কপর্দকশূন্য ফকির তাদের চারিপাশে বন্ধুর ভীর দেখা যায়না। অথবা যারা বৃদ্ধ তাদের চারিপাশে বিয়ের জন্য পাত্রের ভীর থাকেনা। যাদের টাকা আছে তারা বৃদ্ধ হোক বা যোয়ান, লুলা হোক বা অন্ধ, তাদের বন্ধু হবার জন্য অনেকেই আগ্রহ দেখায়। যারা বেশী ধুর্ত তারা অসমবয়সী সম্পর্ক করার চেস্টা করে। একজন অন্যজনের উপরে ক্ষমতায়ন করা এবং একজন অন্যজনকে মানসিকভাবে নির্ভরশীল করে রাখার জন্য বেশীর ভাগ অসমবয়সী সম্পর্কগুলো গড়ে উঠে।
অনেকেই কম বয়সি মেয়ে বিয়ে করে। দশ থেকে বারো বছরের ছোট মেয়েকে বিয়ে করার কারণ হলো – অনেকেই মনে করে কম বয়সি মেয়েদের সহজে অনুগত করা সম্ভব। পুরুষেরা নারীদের চেয়ে শারীরিকভাবে শক্তিশালী। কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করে মানসিকভাবে ক্ষমতায়ন করা সহজ হয়। সমস্যা দেখা দেয় অন্যখানে – পুরুষেরা যত বৃদ্ধ হয় তাদের যৌনক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। যখন কিশোরী স্ত্রী তরুন হয় এবং স্ত্রীর চাহিদা পূরণে স্বামী ব্যর্থ হয় ফলে সংসারে নানারকমের জটিলতা দেখা দেয়। অনেক স্বামী চায় স্ত্রীর সন্তান হোক এবং সে বুড়া হতে হতে আর কমবয়সী স্ত্রী যোয়ান হতে হতে অন্যভাবে ব্যস্ত হয়ে যাক। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্ত্রীদেরকে বুড়া করে ফেলার জন্য স্বামীরা ও সন্তানেরা মরিয়া হয়ে যায়। দুই তিনটি ছেলেমেয়ে হবার পরে স্ত্রী মোটা হবে, শরীরের যত্ন নেবার সময় ও সুযোগ কম হতে থাকবে তখন নানা রকমের রোগ ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে যাবে । স্ত্রীর বয়স যখন ৩৫ তখন তাকে মনে হবে ৫৫। তাতে স্ত্রীকে নিজের কারণে নিজেকে দোষারোপ করে মানসিকভাবে অবনত রাখতে সহজ হয় । আমাদের সমাজে স্বামীর জৈবিক চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, স্বীকৃতি দেওয়া হয় । স্বামীর নিজের জৈবিক চাহিদা পূরণ করার স্বার্থে সুধুমাত্র যখন ও যেটুকু দরকার তখন এবং ততটুকুই স্ত্রীর জৈবিক চাহিদাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
অর্থনৈতিকভাবে স্ত্রী যদি স্বামীর উপরে নির্ভরশীল হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। স্ত্রী যাবতজীবন পেয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অনেক স্বামী স্ত্রীকে তাদের স্পার্ম ফেলার গর্ত হিসাবে ব্যবহার করে। অনেক স্বামীস্ত্রীর সম্পর্কের ভেতরে লেনদেনের ভারসাম্য বা চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য না থাকার ফলে খুব সহজেই একজন অন্যজনের উপরে ক্ষমতায়ন করে। Sperm disposal kit অথবা স্পার্ম ফেলার ট্যিসু হিসাবে অনেকেই স্ত্রীকে ব্যবহার করে । জৈবিক চাহিদা ছাড়া আর কোন টান না থাকার ফলে স্বামীস্ত্রীর মধ্য সম্পর্ক শুধুমাত্র স্পার্ম এসে ভরে যাওয়া ও স্পার্ম খালি করার সময়ে আটকে থাকে।
ফেসবুকে বিবাহিত পুরুষেরা যখন সাড়ারাত জেগে অন্যান্যদের সাথে কথা বলে অথবা খুব সাধারণ একজন মহিলার ছবিতে ১৫০০ লাইক দেখা যায় তখন ধরে নিতে হবে ১৫০০ মানুষের কোন কাজ নেই। এই ১৫০০ মানুষের মধ্য অনেকেই বিবাহিত। অনেকের স্ত্রী ঘুমাচ্ছে। কিন্তু স্বামী জেগে আছে।
একজন স্বামী যখন স্পার্ম ফেলার ট্যিসু হিসাবে একজন স্ত্রীকে ব্যবহার করে আর এই ব্যবহারের ফলে যখন সন্তানের জন্ম হয় আর এই সন্তান যদি বাবার আদল পায় তখন অনেক বাবাই এই সন্তানের জন্মদানে স্ত্রীর বিশাল ত্যাগ সম্পর্নভাবে অস্বীকার করে এবং স্ত্রীর প্রতি প্রেম প্রদর্শন করেনা। অন্যদিকে স্ত্রী এই সন্তান জন্ম দেবার ফলে দুই ধরনের শূন্যতা অনুভব করে। এক – নয় মাস পেটে বাচ্চা রেখে বাচ্চার সাথে তার বন্ধন গড়ে উঠে যা সন্তান প্রসবের সাথে সাথে ছিন্ন হয় বলে মা এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করে তাকে বলে পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন postpartum depression or postpartum anxiety … স্বামী যখন এই সন্তানের প্রতি অধিক আগ্রহ দেখায় এবং স্ত্রীকে অবহেলা করে তখনও স্ত্রী শূন্যতা অনুভব করে। স্বামীস্ত্রী যেহেতু তাদের যৌন সম্পর্ক উপভোগ করেনা তাই এই সন্তান জন্মের কোন পরিকল্পনা তাদের ছিলনা তাই ব্যাপারটা অনেকটা এমন হয়ে যায় যেন স্বামী একটি গর্তে তার স্পার্ম ফেলেছিল নয় মাস আগে, নয় মাস ধরে ধীরে ধীরে সেখানে সন্তান বড় হয় এবং এক সময় বের হয়ে আসে।
কারু কোন সম্পর্কেই “ভালবাসা” শব্দটা পুরাপুরি অকেজো এবং অপ্রয়োজনীয়। এই “ভালবাসা” শব্দটি স্বার্থ উদ্ধার করার জন্যই অপব্যবহার করা হয়।
যদি কোথাও কোন স্বার্থ না থাকতো তাহলে কারু সাথে কারু সম্পর্ক হতোনা।
সমাজের এক কোনে একদল পন্য বা গর্ত সেজেগুজে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদেরকে বলা হয় যৌনকর্মী। সেদিন ফেসবুকের এক হুজুর বলেছে – যখন পুরুষের যৌন চাহিদা সৃষ্টি হয় আর যখন এই যৌন চাহিদা বা স্পার্ম ফেলার জন্য গর্তকে সামাজিকভাবে অনেক মানুষকে সাক্ষী রেখে শরীরে গহনাগাটি লাগিয়ে মাবাবা বাসাতে নিয়া আসতে রাজী হয়না (হয়তো মাবাবা এত তারাতারি সন্তানের দ্বারা অবহেলিত হতে চায়না বা নিরাপদ হতে পারেনা) তখন ছেলেরা তাদের স্পার্ম ফেলার গর্তের অন্বেষণে সমাজের এই কোনে যায় এইসব পন্য গর্তে ফেলার জন্য। অবশ্য একজন যৌনকর্মীকে সমাজে “ঘৃনা” করা হয় কারণ এই গর্তে স্পার্ম ফেলার জন্য সামান্য কিছু টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়ে এই যৌন কর্মী তার দালালকে ভাড়া দেয়। গর্তে স্পার্ম ফেলার জন্য এই দালাল স্পার্ম হোল্ডারদের খুঁজে নিয়ে আসে। তারপর যৌন কর্মী যেখানে থাকে সেখানে ভাড়া দেয় তারপর বাকী টাকা দিয়ে যৌনকর্মী পেটের ক্ষুধা নিবৃত করে সমাজের আর দশজন মানুষের মত। গর্তে ফেলার আগে বউ সাজগোজ করে স্বামীকে খুশী করার জন্য ঠিক তেমনি সমাজের কোনে যৌনকর্মী সম্ভবত লাল লিপস্টিক লাগায় গর্তে ফেলার মানুষ যোগার করার জন্য।
বউ আর বেশ্যার ভেতরে পবিত্রতার পার্থক্য হলো একটি গর্তে একজনই স্পার্ম ফেলে অন্য গর্তে অনেকেই স্পার্ম ফ্যালে। একজন বউ অনেক সময় অদৃশ্য বা অকথিত যৌনকর্মীর ভূমিকা পালন করে। সমাজে যার শক্তি আছে, সম্পদ আছে, সে যেকোন জিনিষকে নিমেষে একটি গর্ত হিসাবে ব্যবহার করতে পারে।
সম্পর্কের ভেতরে অনেকেই প্রেম ও পবিত্রতা নিয়ে আসে। এদের সমস্যা হইল এরা তাদের গন্তব্যে পৌছাবার আগে একটু বেশী সময় নিতে চায়। ঘোরাঘুরি করতে চায়। নিজেদের ভেতরে যে বিভ্রান্তির কুয়াশা ঘনীভূত হয়ে আছে তা নেড়েচেড়ে ঝেড়েঝুড়ে ফেলে রেখে সাফ করে ফিরে আসে সেই গর্তে যেখানে শুধু দরকার আর স্বার্থে ঢালা হয় যখন ভরে যায়।