ইতিহাসের অনেক পুরনো লড়াই এটি। সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা সময়সাপেক্ষ। বিস্তর শব্দ খরচের বিষয়। তবে নতুন মোড়কে শুরু হওয়া পুরনো লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ এখন নারী যোদ্ধা। আলোকপাত থাকবে সে দিকে। রোজাভা করিডর। দেখিয়ে দিয়েছে অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে নারীর কথিত কোমল রূপের কেমন রূপান্তর হতে পারে।
কালাশনিকভে সজ্জিত নারীরা পুরুষের সহযোদ্ধা নয় বরং আলাদা নারী বাহিনী গঠন করে আলাদা ফ্রন্টে লড়ে ঠেকিয়ে দিয়েছে নৃশংস ইসলামি জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসকে। চমকে উঠেছে পুরো বিশ্ব কঠোরে কোমলে মেশানো নারী সাহসিকার রুপে। সেই সাথে তারা চালিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ। আগস্ট ২০১৪। সিরিয়া-ইরাক সীমান্তবর্তী হাজার বছরের পুরনো জনগোষ্ঠী ইয়াজিদির আবাসভূমি শেঙ্গল পাহাড়ে হামলা চালায় সন্ত্রাসী আইএস। হাজারো মানুষকে জবাই করে খুন করে তারা। ধর্ষণের শিকার হয় নারী। অসংখ্য নারীকে তুলে নিয়ে যায় তারা যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। দশ হাজার অবরুদ্ধ ইয়াজিদি সম্প্রদায় প্রাণ বাঁচাতে পালানোর পথ খোঁজে। এগিয়ে যায়। কিন্তু পথ আগলে রয়েছে সাক্ষাৎ যমদূত হয়ে আইএস। আবার ফিরে আসে তারা আগের জায়গায়।
ক্ষুধা, তৃষ্ণা এবং শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুর মুখে পড়ে অনেক নারী এবং শিশু। সেখান থেকে তাদের বাঁচার পথ দেখায় একটি রোজাভা করিডর। যার মূখ্য নির্মাতা নারী যোদ্ধারা। ‘আমাদের কোনো বন্ধু নেই। তবে পাহাড় আছে। একটা রোজাভা করিডর আছে’। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে কান পাতলেই এখন এই কথা শোনা যায়। বিপ্লবী নারী পরিষদের সদস্য বৃদ্ধা কুর্দিশ নারী জেন্স যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার আগে তার নাতিকে চুমু খেয়ে বলছিলেন, আমরা নারীরা যুদ্ধে নেমেছি প্রশিক্ষিত হয়ে। সময়ের প্রয়োজনে। আদর্শিক অবস্থান সচেতন হয়েই। কিছুদিন আগেও আমরা বুঝিনি কেন যুদ্ধ, কিসের যুদ্ধ। এখন আমরা অন্তত জানি আমাদের বাঁচার জন্য এক হয়ে লড়তে হচ্ছে। তখন বুঝিনি বলেই প্রতিরোধহীন বধ্যভূমি নিরন্তর তৈরী হয়েছে। আরেক নারী সোজদার আবেস্তা। কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টির কমান্ডার। কালাশনিকভময় জীবন। চোয়ালবদ্ধ করে ইস্পাতসম দৃঢ়তায় বলেন, এক বছর আগের সেই সময় আর কখনো আসবে না। শেঙ্গল আর কখনও আগের প্রতিরোধহীন পর্ব দেখবে না। কাঁধে কালাশনিকভ। কোমর বন্ধনীতে ভয়ংকর গ্রেনেড। পরণে কুর্দি ঐতিহ্যবাহী পুরুষদের পোশাক। পুরোপুরি যোদ্ধা কুর্দি নারী তোকশিন। উত্তর ইরাকের পাহাড়ি অঞ্চলে লড়ছেন ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। তার ভাষায়, নারীদের স্বাধীন করার জন্য লড়ছেন তিনি। এরকম অসংখ্য তোকশিন এখন রাইফেল নিয়ে লড়ছে আইএস বর্বরতার বিরুদ্ধে। লড়ছে তুরস্কের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে। হেদার রেসিত, পিকেকে যোদ্ধা নারী। গত বছর শেঙ্গল গণহত্যার আগে এবং পরের সামাজিক বাস্তবতা জানিয়ে বলেন, সেই ঘটনার পর নারী যোদ্ধার ভূমিকা কুর্দিস্তানের (ইরান, ইরাক, সিরিয়া এবং তুরস্কর সীমান্ত এবং মধ্যবর্তী অংশ) চার অংশেই পড়েছে। হেদার সেই সাতজনের একজন যারা রোজাভা করিডোর খুলতে গিয়ে শত্রুর ছোঁড়া বুলেটে আহত হয়েছেন। কিন্তু ঠিক এক বছর আগেও পরিস্থিতি ছিলো ভয়াবহ। শেঙ্গল পাহাড়ে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের ওপর ৭৩ তম গণহত্যা চালিয়েছিলো আইএস বাহিনী। অন্যদিকে তুরস্ক চালাচ্ছিল স্বাধীন অথবা স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত কুর্দিদের ওপর দমন পীড়ন। গত বছর গ্রীষ্মে ইরাকি কুর্দি পেশমার্গারা শেঙ্গল নিরাপদ রাখবে জানালেও আইএস আক্রমনের মুখে পালিয়ে যায়। এমনকি আত্মরক্ষার জন্য কোনো অস্ত্রও রেখে যায়নি তারা। সে সময় অসম সাহসিকতায় পাশে দাঁড়ায় কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টির রোজাভা নারী গেরিলারা।
শেঙ্গল পাহাড় থেকে রোজাভা পর্যন্ত করিডোর তৈরি করে ১০০০০ অবরুদ্ধ নারী-পুরুষ-শিশুকে উদ্ধারে মূল ভূমিকা রাখে তারা। অবরুদ্ধ নারীদের একটি বড় অংশ এখন যোদ্ধা নারী। আইএস নির্যাতন শিবির থেকে পালিয়ে আসা নারীরা তো আছেই। প্রত্যেকের চোখে মুখে প্রতিশোধের আগুন। স্বজন হারানোর যন্ত্রণা লাঘবের প্রতিজ্ঞা চোখেমুখে। শত্রুর রক্তে নিজেকে রাঙানোর শপথ প্রতি পদেক্ষপে। যারা এক বছর আগেও ছিলো বিষন্নতা-হতাশায় ম্রিয়মাণ। যাদেরকে বিশ্বগণমাধমে প্রায়শই দেখানো হতো কান্নারত, অসহায়, নির্যাতিত, তারাই এখন বিশ্বমাধ্যমে বলিষ্ঠতার প্রতিরুপ, আইএস বিরোধী মধ্যপ্রাচ্যের লড়াইয়ের অন্যতম প্রধান শক্তি। মূলত এই নারী শক্তির বড় অংশ সমাজতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ। সব ধর্মের সব গোত্রের সব জাতের নারীর অংশগ্রহণ এই যোদ্ধা ফ্রন্টে। নারী যোদ্ধাদের দলে প্রতিদিনই বাড়ছে নারীর সংখ্যা। তারা এখন বিবাহিত গৃহকোণ না দেখে স্বাধীন কুর্দিস্তানের স্বপ্ন দেখে। যেখানে একই সাথে থাকবে না ইসলামের অপব্যবহার করা আইএসের বর্বরতা, থাকবে না তুরস্কের অযাচিত নিষ্ঠুরতার গল্প। সে স্বাধীন অংশে মিলেমিশে থাকবে মুসলিম, খ্রীস্টান, কুর্দি কিংবা ইয়াজিদিসহ সবাই।
Md Abdullah All Fahad liked this on Facebook.
Mohammad Shahid liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.
Hma Hasan Zawad liked this on Facebook.
Moin Ahmed liked this on Facebook.