কীভাবে মরবো: ৪৮ ঘণ্টা গবেষণার পর তরুণীর আত্মহত্যা

একটানা ৪৮ ঘন্টা, গুগলে সার্চের পর সার্চ! মৃত্যর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত আতিপাতি খুঁজে চলা, কীভাবে মৃত্যুকে বরণ করা যায় তাই নিয়ে বিনিদ্র ‘গবেষণা’। অতঃপর নিজের মন মতো করেই মৃত্যুর পরের ঠিকানা পৌছালেন ভারতের বেঙ্গালুরুর এক তরুণী।

২৬ বছর বয়সী ওই তরুণীর নাম ইশা হান্ডা। পেশায় তিনি ফ্যাশন ডিজাইনার কাম ওয়েলনেস কনসালট্যান্ট।তেরো তলার ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে জীবনে ইতি টেনেছেন ইশা। পুরো কাজটিই করেছেন তিনি সন্তর্পণে। এতটাই গোপনে খুঁজেছেন ‘মৃত্যুর সিঁড়ি’, স্বজন-বন্ধুরা কেউই টের পায়নি।

মৃত্যু নিয়ে ইশা হান্ডার ৪৮ ঘন্টা চিন্তাভাবনার নীরব স্বাক্ষী শুধু তার স্মার্টফোনটা। কোনও সুইসাইড নোট রেখে যাননি তিনি। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের সাহায্য করেছে করেছে স্মার্টফোনের সার্চ হিস্ট্রি। নয়তো এটা যে আত্মহত্যাই, রহস্যজনক কোনো মৃত্যু বা খুন নয়, তাই বুঝে ওঠা দুষ্কর ছিল পুলিশের পক্ষে।

আত্মহত্যার ঘটনা মোটেও নতুন নয়, কিন্তু ইশা হান্ডা মৃত্যুর আগে ৪৮ ঘণ্টা ধরে যে ভাবে একনাগাড়ে ‘কীভাবে মরবো’-এই নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন, অতীতেে এমন নজির নেই। তার স্মার্টফোনে পাওয়া গেছে- How to commit suicide, Best method to do so- এমন অজস্র সার্চ। শেষ পর্যন্ত, ইশার মনে হয়েছে বহুতলের উপর থেকে ঝাঁপই হতে পারে, নিশ্চিত মৃত্যুর সেরা উপায় এবং তিনি তাই করেছেন।

ইশা হান্ডার স্মার্টফোনটি হাতে পেয়ে তাজ্জব বনে যান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আগে হতে হয়নি কখনও। মৃত্যুরহস্যের কিনারা করে ফেললেও, এ ভাবে গবেষণা করে মৃত্যু, তাঁদের মনেও দাগ কেটেছে।

ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা জানান, জীবনের শেষের ৪৮ ঘণ্টায় ৮৯টা ওয়েবসাইট ঘেঁটেছেন ইশা। ২৯ অাগস্ট সকালে স্মার্টফোন হাত সেই যে বসেছিলেন ইশা, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটিবারের জন্যও ওঠেননি। একবার মনে হয়েছে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিলে কেমন হয়, মনঃপুত হয়নি। পরক্ষণেই দেখেছেন বিষপান। তার পর মনে হয়েছে, যদি ঘুমের ওষুধ হয় বা গলায় দড়ির ফাঁস? ঘাঁটতে ঘাঁটতে একের পর এক ওয়েব পেজ। শেষে এসে থামেন বহুতল থেকে ঝাঁপে।

তদন্তকারীরা বলছেন, আত্মহত্যার প্রতিটা পেজ খুঁটিয়ে পড়েছেন এই তরুণী। বাঁচার সম্ভাবনা কতটা, দেখেছেন তা-ও। যখন ঝাঁপ দেবেন বলে মনঃস্থির করেন, তখন আবার অঙ্ক কষতে বসেন, শরীরের যা ওজন, তাতে ঠিক কত তলার ওপর থেকে ঝাঁপ দিলে, নিশ্তিত মৃত্যুই হবে। তেমন বিল্ডিংয়ের হদিশ পেয়ে, এগোন গবেষণার পরবর্তী ধাপে। ঝাঁপ মারবেন কী ভাবে? বেঙ্গালুরুর এই ফ্যাশন ডিজাইনার দেখেন, ১০তলা বিল্ডিং হলেই হবে। ঝাঁপ মারতে হবে মাথা নিচু করে। এরপর গবেষণার পাট চুকিয়ে বেঙ্গালুরের হরালুর রোডের একটি ১৩ তলা ভবন বেছে নিয়ে নিচে ঝাঁপ দেন ইশা।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ওঠার আগে সাড়ে ৩টা ঘণ্টা আশপাশে এলোমলো ঘুরেছেন ইশা। কীভাবে সবার নজর এড়িয়ে উঠবেন, রক্ষীরা কোথায় আছে, কেউ আটকে দেবে কি না, এসবই ততক্ষণে দেখে নেন। তার আগে বিকেলে ৪টা নাগাদ যখন বা[ থেকে বেরিয়ে আসেন, বলে আসেন বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হবে। অপেক্ষা করেন, চারপাশের অন্ধকারের জন্য। এরপর রাত সাড়ে আটটায় সেই তেরো তলা থেকে মরণঝাঁপ দেন তরুণী।

ইশা হান্ডা মরদেহের সঙ্গে তার ব্যাগ থেকে ২৫০ গ্রাম মারিজুয়ানার প্যাকেট পেয়েছে পুলিশ। কিছু সাদা বড়িও পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের ধারণা, আত্মহত্যা করার আগে মাদক নিয়েছিলেন ইশা। কেন হঠাৎ এত ঘটান করে আত্মহত্যা করতে গেলেন ওই তরুণী, তা পুলিশের কাছে রহস্যই। তবে প্রাথমিক তদন্তে ধারণা, ব্যক্তিগত কারণেই এই আত্মহত্যা। হতে পারে তা প্রেম। হতে পারে পারিবারিকও। এ নিয়ে জোর তদন্ত চলছে।

৪ thoughts on “কীভাবে মরবো: ৪৮ ঘণ্টা গবেষণার পর তরুণীর আত্মহত্যা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *