হৃদয়জুড়ে সালমান শাহ

ঢাকা: ১৯৯৩ সালে রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে সালমান শাহর। পর্দা থেকে বেরিয়ে কোটি তরুণের স্বপ্নের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। প্রত্যেকের ভেতর জাগিয়ে তুলেছিলেন স্ব স্ব অসাধারণত্ব।

স্বল্প সময়ের ক্যারিয়ারে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করে জয় করে নেন অসংখ্য ভক্তের হৃদয়। আজ থেকে ১৯ বছর আগে পৃথিবী ছেড়ে যান এই অভিনেতা।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহ বাংলাদেশের সিনেমা দর্শকদের ছেড়ে অনন্তলোকে চলে গিয়েছিলেন। তাকে নিয়ে অনেকেরই অনেক স্মৃতি ক্ষয়ে ক্ষয়ে ধূসর হয়ে গেছে। তবু বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক সময়ের রোমান্টিক সম্রাট আজও বেঁচে আছেন দর্শকের মনোজগতে। জেগে আছেন তরুণ-তরুণীর তর্কে, স্মৃতিচারণায়। এখনো চলচ্চিত্রপ্রেমীরা অবলীলায় বলেন, ‘সালমান শাহর মতো আর কেউ এল না।’

সেদিন বেলা ১১টার দিকে একটা ফোন আসে তার মা নীলা চৌধুরীর বাসায়। বলা হয় সালমানকে দেখতে চাইলে তখনি যেতে হবে। এ কথার পরেই তারা যান সালমানের বাসায়। সালমানের ইস্কাটনের বাসায় তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ময়নাতদন্তে বের হয়ে আসে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। সম্পূর্ণ আকস্মিক এ ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ে তার পরিবার এবং পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় সালমানকে হত্যা করা হয়েছে।

১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ মাত্র চার বছর ছিল তার অভিনয়জীবন। এ স্বল্প সময়ে সালমান শাহর প্রাপ্তি ছিল আকাশচুম্বী। এত সাফল্যের পরও তার জীবন কেমন ছিল, যা সালমান দীর্ঘায়িত করতে চাননি। নিজ যুক্তিতে স্বমুক্তি খুঁজেছেন? আনন্দ চুরি হওয়া জীবন থেকে বিদায় নিতে আত্মধ্বংসের পথ বেছে নিয়েছেন, যা আজও সবার কাছে অজানা সংবাদ হয়েই রইল।

সালমান শাহ (শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন) সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে। সোহানুর রহমান সোহানের পরিচালনায় কেয়ামত থেকে কেয়ামত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ দর্শকের সামনে আসেন।

চার বছরের অভিনয়জীবনে তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র কেয়ামত থেকে কেয়ামত, অন্তরে অন্তরে, বিক্ষোভ, স্বপ্নের ঠিকানা, দেনমোহর, তোমাকে চাই, সত্যের মৃত্যু নেই, মায়ের অধিকার, আনন্দ অশ্রু প্রভৃতি। সালমান শাহ অভিনীত সর্বাধিক চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন শিবলি সাদিক। মৌসুমীর সঙ্গে ছিল সালমান শাহর প্রথম জুটি বাঁধা। চরম সাফল্যের সম্ভাবনা থাকলেও এই জুটির চলচ্চিত্র মাত্র চারটি। শাবনূরের সঙ্গে সালমানের চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১৪।

অভিনয় এবং এই জুটি পরিচিত হলেও শাবনূরের সঙ্গে তার জুটিবদ্ধ সিনেমার সংখ্যা বেশি। এবং এই জুটিই বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বলা যায় সালমান শাহ শাবনূরকে লাইম লাইটে নিয়ে আসেন। এছাড়াও প্রয়াত এই নায়ক আটটি টিভি নাটকে অভিনয় করেন। এগুলো হলো- ‘আকাশছোঁয়া’, ‘দেয়াল’, ‘সব পাখি ঘরে ফিরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘পাথর সময়’, ‘ইতিকথা’, ‘নয়ন’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ (টেলিফিল্ম)।

জনপ্রিয় এ নায়কের জন্ম ও মৃত্যু দিনে বিভিন্ন সংগঠন এবং সংবাদপত্র ও টেলিভিশন বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে। আজও দেশের নানা জায়গায় থাকছে তেমন কিছু আয়োজন। এছাড়া টিভি চ্যানেলগুলোতেও প্রচার হবে সালমান শাহকে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান।

৯ thoughts on “হৃদয়জুড়ে সালমান শাহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *