মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পুরো আমিরাত জুড়ে একটাই আলোচনা ছিলো, ‘আসছেন চট্টগ্রামের সিটি মেয়র, হবে জমকালো সংবর্ধনা।’ আয়োজক কমিটির পোস্টার ও স্ব-শরীরের প্রচারণায় প্রবাসীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় ভিন্ন রকম আগ্রহ ও মেয়রকে এক নজর দেখার কৌতুহল। তারচেয়েও বেশি আকর্ষণ তৈরী করে সংবর্ধনাকে ঘিরে মেগা কনসার্ট নামের মিউজিক্যাল অনুষ্ঠানের প্রচার। এতে গান পরিবেশনের কথা ছিলো সংগীত শিল্পী মমতাজ ও ফকির সাহাবুদ্দিনের। টানা তিনমাসের প্রচার প্রচারণা ও প্রস্তুতি শেষে গত বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনা কমিটি কর্তৃক রাজকীয় সংবর্ধনা গ্রহণ করতে মধ্যরাতে দুবাইয়ে পা রাখেন চট্টগ্রামের সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। বিমান বন্দর থেকে ব্যয় বহুল গাড়িতে করে তাকে নিয়েও যাওয়া হয় দুবাইয়ের হায়াত রিজেন্সি হোটেলে। অপেক্ষা শুক্রবারের। কথা ছিলো, শুক্রবার আমিরাতের স্থানীয় সময় রাত নয়টায় শারজাহ মদিনা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা গ্রহণ করবেন মেয়র। এ বিশাল আয়োজনে ১০ হাজার লোকের সমাগম করতে আয়োজক কমিটি আমিরাতের বিভিন্ন শহর ঘুরে শ্রমিকদের প্রতিটি ক্যাম্পে ক্যাম্পে যেমন প্রচার করেছেন তেমনি প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়েও আয়োজক কমিটির প্রায় শতাধিক সদস্যরা প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন। সে অনুযায়ী শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ প্রবাসীরা ধীরে ধীরে ভিড় করতে থাকে শারজাহ মদিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। হাজারও প্রবাসীর উপস্থিতিতে যখন অনুষ্ঠান স্থল মিলন মেলায় পরিণত হলো তখনই খবর এলো জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ থেকে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হয়নি। ভেস্তে গেছে শত আয়োজন। মুহুর্ত্বে হাজারও প্রবাসীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। হাজারো ব্যস্ততা রেখেও মেয়রের জন্য একদিনের সময় বের করে স্টেডিয়াম এসে সংবর্ধনা হবে না শুনে কার আর ভাল লাগে! শুরু হয় চারদিকে সমালোচনার ঝড়।
উপস্থিত অনেক প্রবাসী বলছেন, ‘অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ভাসছে যখন চট্টগ্রামের আগ্রবাদসহ শহরের বেশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তারপরও মেয়র এসেছে সংবর্ধনা নিতে। কিন্তু এভাবে মেয়রের মানহানী করা কি ঠিক হলো ?’ হালের এ প্রশ্নের জবাব তাৎক্ষণিক না মিললেও সংবর্ধনা বাতিল হবার জবাব দিচ্ছিলেন আয়োজকদের কেউ কেউ । তারা বলছেন, শেষ পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি না পাওয়ায় সংবর্ধনার আয়োজন স্থগিত করে দিতে বাধ্য হলো আয়োজক কমিটি। অনুষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্য্যক্রমের দায়িত্বে ছিলেন ইভেন্ট টেইলর নামে একটি প্রতিষ্ঠান। অনুমতি না পাওয়ার বিষয়ে আয়োজক কমিটি ওই প্রতিষ্ঠানটির অপেশাদারিত্ব ও গাফেলতিকে দায়ী করেছেন।
জানা গেছে, আ জ ম নাছিরের সংবর্ধনাকে ঘিরে গত তিনমাস যাবত সংযুক্ত আরব আমিরাত জুড়ে দলীয় নেতাকর্মী ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে ছিলো উৎসবের আমেজ। শুক্রবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান। এরও তিনদিন পুর্বে কনসার্টের জন্য শিল্পী মমতাজ, ফকির শাহাবুদ্দিনসহ আরো ৫ জনের মিউজিশিয়ান দল শারজাহতে উপস্থিত হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুবাই আসেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। সংবর্ধনাকে ঘিরে দুবাই পৌঁছেন চট্টগ্রামের ১২ আসনের এম.পি শামসুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম.পি এম.এ. লতিফ, ফেনীর এম.পি নিজাম হাজারী, চট্টগ্রাম আবহানী ফুটবল লিঃ চেয়ারম্যান তরফদার মোঃ রুহুল আমিন সহ প্রায় ৩০ সদস্যের একটি দল। কিন্তু আমিরাতের নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি না দেয়ায় সবাই হতাশ। এদিকে দলীয় নেতা কর্মীরাও শেষ পর্যন্ত অনুমতি না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন।
বিভিন্ন সুত্র জানায় সাম্প্রতিক সময়ে শারজাহস্থ একটি অনুষ্ঠানকে ঘিরে দলীয় কোন্দল মাথা ছড়া দিয়ে উঠেছিল। তাছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের নানা অপরাধ মুলক কর্মকান্ড সহ সাম্প্রতিক লেবাননে মমতাজের কনসার্টে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি না পাওয়ার বিষয় হতে পারে বলে মনে করেন সচেতন মহল । তবে আয়োজক কমিটির সদস্যরা দাবী করছেন, আমিরাত ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল থেকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা ইভেন্ট টেইলরকে তাদের কার্য্যালয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি চুড়ান্ত করার জন্য ডাকা হলেও সে তাদের আহবানে সাড়া দেননি। যার ফলে সিকিউরিটি কাউন্সিল এ অনুষ্ঠানটি স্থগিত করে দিয়েছে। অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ায় স্টেডিয়ামে জমায়েত হওয়া জনতার মধ্য থেকে অনেকেই পরে মেয়রের অবস্থানস্থল দুবাইর হায়াত রিজেন্সি হোটেলে গিয়ে ভীড় জমান। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান মেয়রের সাথে দাঁড়িয়ে ফটোসেশন করে।
আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য বেলায়েত হিরুর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে গেছে। তবে মেয়র আরো কদিন দুবাই অবস্থান করবেন। কিন্তু এ ধরণের আয়োজন আর হচ্ছে না। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. জমির চৌধুরীর সেলফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আর দুবাইয়ের সদস্য সচিব কাজী মোহাম্মদ আলীকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
Rezina Akhter liked this on Facebook.
MD Tareq liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.
Rajib Khan liked this on Facebook.
Rasuler Soinik liked this on Facebook.