জাহিদ হাসান
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং তার পরিবারের রাজনীতিতে আসা কোনো মসৃণ পথ ধরে হয়নি; একটি রূঢ় বন্ধুর পথ ধরে তারা রাজনীতিতে এসেছিলেন। যে কথাটি বেগম খালেদা জিয়ার বেলায় যেমন প্রযোজ্য তেমনি প্রযোজ্য তারেক রহমানের বেলায়। শহীদ জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর যখন জেনারেল এরশাদ তত্কালীন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করেন, ঠিক তখনই জাতির একটি সঙ্কটময় মুহূর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৮২-এর ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন। তেমনি ১৯৯৬-এর ৩০ মার্চ এমনই জাতির এক সঙ্কটময় মুহূর্তে দেশের ক্রান্তিলগ্নে তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে তারেক রহমানের রাজনীতিতে আগমন।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয় বগুড়ায় বিএনপির একজন সাধারণ সদস্যপদে যোগদানের ভেতর দিয়ে। সেই সময় থেকে তিনি রাজনীতিতে দীক্ষা নিতে শুরু করেন। দীর্ঘ ৫ বছর বাংলাদেশের রাজনীতির গতি এবং প্রকৃতি সঠিকভাবে উপলব্ধি করে নিজস্ব বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নে ২০০১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রচারণা কার্যক্রমের সমান্তরালে অভিনব পন্থায় পরিকল্পিত উপায়ে গণসংযোগ স্থাপন করে নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রজ্ঞার পরিচয় দেন।
২০০৫ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে টানা তিন মাস দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘ইউনিয়ন প্রতিনিধি সভা’ করে তিনি দলে নতুনভাবে আলোড়ন ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে সম হন। তিনি ভাবতেন, দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দলের শত সহস্র নেতাকর্মী সরাসরি ভূমিকা রাখবে দল ও দেশ পরিচালনায়। তবেই দলীয় রাজনীতিতে ফিরে আসবে গতিশীলতা, সৃজনশীলতা, দেশ এগিয়ে যাবে স্বনির্ভরতার দিকে, তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম বিশ্বের দিকে। তার এই অভিনব রাজনৈতিক ভাবনা ও তা বাস্তবায়নের প্রারম্ভিক কর্মসূচিগুলো ছিল নন্দিত, যথাযোগ্য ও সময়ের চেয়ে অগ্রসরমান . বিরামহীন শ্রম, মেধা, প্রজ্ঞা, কর্মনিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণতা ও অমায়িক আচার-আচরণের সম্মিলিত প্রয়াসের সামষ্টিক প্রতিফলনের মাধ্যমে তারুণ্যেদীপ্ত নেতার মধ্যে মূর্ত হয়ে উঠেছে .
তারেক রহমান জনপ্রিয়তায় এবং সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতায় দেশী – বেদেশি একটি চক্র বেসামাল হয়ে উঠে । দেশ ও গণতন্ত্র বিরোধী অপশক্তির চক্রান্তের ধারাবাহিকতায় ১/১১’ র পর সেনাসমর্থিত ফখরউদ্দীন-মঈনউদ্দীন সরকার কর্তৃক ২০০৭ সালের ৭ মার্চ বিনা ওয়ারেন্ট ও বিনা মামলায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমান গ্রেফতার হয়ে কারারুদ্ধ হন। রিমাণ্ডের নামে তার ওপর চালানো হয় নির্মম, পৈশাচিক ও বর্বর নির্যাতন। তরতাজা যু্বককে করা হলো পঙ্গু। দায়ের করা হলো ডজনখানেক রাজনৈতিক মামলা। ধারণা করা হচ্ছে তারেক রহমানের ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তাই তাঁর প্রতি তথ্যসন্ত্রাস ও হিংসাত্মক আক্রমণের মূল কারণ।
১২ টি মামলায় জামিন পাওয়া পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি মুক্তিপান। প্যা রোল বা বিশেষ ব্যবস্থায় মুক্ত নয়, আইনী লড়াই শেষে মুক্ত হলেন জামিনে। ৩রা আগষ্ট বিকেলে ডিআইজি¬ প্রিজন মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী হাসপাতালে তারেক রহমানের কেবিনে যান। বিকেল পৌনে ৫টায় ডিআইজি¬ প্রিজন নিচে নেমে তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তারেক রহমানের ৪র্থ তলার ৪৩২ নং কক্ষ থেকে কারারক্ষী ও পুলিশ সরিয়ে নেয়া হয়।
হাজার হাজার নেতা-কর্মী ডি ব্লকের বাইরে অবস্থান করছে। হাসপাতাল চত্বর জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। মুহুর্মুহু স্লোগানে পিজি হাসপাতাল এলাকা তখন মুখরিত। আনন্দের বন্যায় ভাসছে সবাই। সবার চোখ ডি-ব্লকের চারতলায় সেই জানালাটির দিকে। সেখানে শুয়ে ছিলেন তারেক রহমান। শ্লোগানে শ্লোগানে কম্পিত শাহবাগ এলাকা । বজ্র ধ্বনিতে উচ্চারিত হচ্ছে কোটি মানুষ জেনে গেল, তারেক রহমান মুক্ত হল । এই মাত্র খবর এলো তারেক রহমান মুক্ত হল ।।
বিকেল ৫টায় তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ফুল ও পায়রা নিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছা জানান। আর হাসপাতালের বাইরে দিনভর অবস্থান করা নেতাকর্মীরা উল্লাস প্রকাশ করে শ্লোগান দেন। এ সময় মাথায় ও হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা তারেক রহমান জানালা দিয়ে নেতাকর্মীদের অভিনন্দনের জবাব দেন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা আকাশে উড়িয়ে দেন।
বিকেল সাড়ে ৫টায় বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী তারেক রহমানকে অভিনন্দন জানানোর জন্য হাসপাতালে যান। মুক্তি পেয়েও হাসপাতাল ত্যাগ করতে পারছেন না বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান। অসুস্থতার কারণে তাকে প্রায় ১৭ মাস কারাভোগের পর হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছা বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি শেষ হলেই তারেক রহমানকে হাসপাতাল থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হোক। এখনই বাসভবনে গেলে আরও অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। ১১ সেপ্টেম্বর অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে চলে যান লণ্ডনে চিকিৎসার জন্য ।
এখনও তিনি লণ্ডনে চিকিৎসাধীন। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন। মেরুদণ্ডের ভেঙে যাওয়া হাড়টা জোড়া লেগেছে বাঁকা হয়ে। তারেক রহমান সুদূর বিদেশ চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি আত্মসমালোচনা , আত্মবিশ্লেষণ ও সর্বোপরি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করছেন। যা একদিকে তার ব্যক্তিজীবনের সাফল্যের জন্য যেমন অপরিহার্য, তেমনী দলীয় নেতৃত্ব এবং দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার যোগ্য উত্তরসূরি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভবিষ্যত কান্ডারী হিসেবে এবং তাকে দলে সর্বোচ্চ পদে এগিয়ে নেয়ার ভাবনাকে দেশের ১৬ কোটি আমজনতা স্বাগত জানিয়েছে। সেই কারণেই তারেক জিয়া দল তথা জনগণের অর্পিত ও প্রত্যাশিত গুরু দায়িত্ব মাথায় নিয়ে মাতৃভূমির তরুণ ও তৃণমূল জনগোষ্ঠীকে রাজনীতি এবং অধিকার সচেতন করে তৃণমূল জনগণের ক্ষমতায়নের মধ্যে দিয়ে সৃজনশীল, সহনশীল ও রাজনৈতিক ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রনীতি পরিচালনার ভিত্তিতে দারিদ্রতা ও নিরক্ষরতা মুক্ত করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে এক যুগান্তরকারী সাংগঠনিক কর্মসূচী নিয়ে ইতিপূর্বে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়িয়েছেন।
তার অনুপস্থিতি আমাদের উপলব্ধিসহ সকল চেতনাকে আন্দোলিত করছে। আপনি যেখানে থাকুন না কেন বাংলার আকাশ বাতাস প্রকৃতি লক্ষকোটি আমজনতা কাঁদছে আর কাঁদছে বাংলাদেশ আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বের প্রতীক্ষায়। এই মুহুর্তে দেশের ১৬ কোটি মানুষ তাকিয়ে আছে তারেক রহমান কবে আসবে। দেশ প্রেমিক জনতা তারেক রহমানের জন্য সময় প্রহর গুনছে দিনের পর দিন।
পরম করুণাময় আল্লাহ তা’আলা জনাব তারেক রহমানকে বাংলাদেশের মানুষের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করতে তৌফিক দিন।
Rajib Khan liked this on Facebook.
Raju Ahmed liked this on Facebook.
Moin Ahmed liked this on Facebook.
Abdull Zabbar liked this on Facebook.
Israt Julia liked this on Facebook.
Shafiul Alam Rayhan liked this on Facebook.
Ibrahim Khalil liked this on Facebook.
Shahidul Alam liked this on Facebook.
Md Robiulislamsa liked this on Facebook.
Obujh Bhalobasha Alif liked this on Facebook.
Ahmed Mosud liked this on Facebook.
MD Suman Mollah liked this on Facebook.
Imam Uddin liked this on Facebook.
Md Salim liked this on Facebook.
Johirul Mollah liked this on Facebook.
Wasim Mollah liked this on Facebook.
Sabbir Ahamed liked this on Facebook.
MD Tareq liked this on Facebook.
Johorul Islam liked this on Facebook.
MadZy Anik MoLlick liked this on Facebook.
Abdur Rahman liked this on Facebook.
Toriquzzaman Khan liked this on Facebook.
Shahadat H Bhuiyan liked this on Facebook.
শামছুল হক liked this on Facebook.
Md Jamal liked this on Facebook.
Barking