“মরণের পথ দিয়ে যাচ্ছি মা দোয়া করিও” বউ-বাচ্চা নিয়ে যাতে ইতালি পৌঁছাতে পারি

‘মা, মরণের পথ দিয়ে যাচ্ছি। দোয়া করিও। বউ-বাচ্চা নিয়ে যাতে ভালোমতো ইতালি পৌঁছাতে পারি’। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে মা আয়েশা বেগমের (৬০) সঙ্গে এভাবেই দোয়া চেয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলেছিলেন লিবিয়া প্রবাসী আব্দুল আজিম। ছোটভাই সালাউদ্দিনকে ফোনে বলেন, ‘ভাই, সব জেনে-শুনেই স্ত্রী ও তিন মেয়ে নিয়ে ট্রলারে ইতালি পাড়ি দিলাম। আল্লাহকে রহম করতে বল।’ কিন্তু স্বপ্নের ইতালি আর পৌঁছাতে পারেননি আজিম। ওই নৌকা সাগরে ভাসার কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।

২৭ আগস্ট লিবিয়া উপকূলে চার শতাধিক অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে দুটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আরো অনেকের সঙ্গে মারা গেছে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার বাসিন্দা লিবিয়া প্রবাসী আব্দুল আজিমের শিশুকন্যা রিমাজ আজিম (৩ বছর) ও রাইসা আজিম (৯ মাস)। গত রবিবার সন্ধ্যায় দীঘিনালার বড়মেরুং আনসার হেডকোয়ার্টার এলাকায় আজিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে স্বজনদের কান্না থামছেই না। চলছে শোকের মাতম। আব্দুল আজিম নোয়াখালীর বাসিন্দা হিসেবে লিবিয়া গিয়েছিলেন।

ছয় বছর আগে তাঁরা জায়গা-জমি কিনে সপরিবারে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বসতি স্থাপন করেন। আব্দুল আজিমের ছোটভাই মো. সালাউদ্দিন জানান, তাঁর ভাই আজিম ১৯৯৯ সালে সরকারি ভিসায় লিবিয়া গিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে দেশে ফিরে বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে আবার লিবিয়া পাড়ি জমান। সেখানে তিনি একটি হোটেলে কাজ করতেন। সম্প্রতি আইএস জঙ্গিরা হোটেলটি বন্ধ করে দিলে অভাবের মুখে ইতালি পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেন।

গত ২৭ আগস্ট রাতে আরো কয়েকটি পরিবার মিলে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন তাঁরা। প্রবাসী ভাইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ১১ ঘণ্টা পর ভাইয়ের জ্ঞান ফিরলে ওই হাসপাতালে বড় মেয়ে রিতাশ আজিম ও স্ত্রী নারগিস আক্তারকে অসুস্থ অবস্থায় খুঁজে পান। আর মেজ মেয়ে রিমাজের লাশ খুঁজে পেলেও সবচেয়ে ছোট রাইসা আজিমের লাশ পাননি। সেখানে রিমাজের লাশ দাফন করা হয়েছে।

এআর

১০ thoughts on ““মরণের পথ দিয়ে যাচ্ছি মা দোয়া করিও” বউ-বাচ্চা নিয়ে যাতে ইতালি পৌঁছাতে পারি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.