ঢাকা: অবৈধ পথে মিথ্যা ঘোষণায় কোকেনের মতো ভয়াবহ মাদক দেশে এনে তা দিয়ে মাদক জাতীয় ক্ষতিকর ঔষধ তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। আর এই অভিযোগের আঙুল নির্দেশ করা হচ্ছে দেশের ঔষধ কোম্পানিগুলোর দিকে।
দেশের বড় বড় ঔষধ কোম্পানিগুলো এ কাজে জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
অনুসন্ধানেও মিলেছে এই অভিযোগের সঙ্গে বাস্তবতার কিছু যোগসাজশ।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, আসক্তি তৈরি হয় বলে বাংলাদেশে উৎপাদিত বিশেষ একটি ঔষধ সম্প্রতি মেক্সিকোতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এক পর্যায়ে ঔষধটির যথেচ্ছ ব্যবহার শুরু হলে একটি রিট হয় সে দেশের উচ্চ আদালতে।
পরে মেক্সিকোর বিচার বিভাগের নির্দেশে সে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি বাংলাদেশের দূতাবাস কে জানায়।
মেক্সিকান সরকার সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের একটি ঔষধ কোম্পানির, তাদের উৎপাদিত ঔষধ ও জড়িতদের নাম জানায়। তারা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে সরাসরি মাদক পাচারের অভিযোগ আনে।
আমাদের টীম জানতে পেরেছে ওই কোম্পানিটির নাম জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যাল, ঔষধটি মাল্টি অ্যামাইনোসিভ জাতের আর অভিযুক্তদের একজন জনৈক ফখরুল আলম।
মেক্সিকো সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফখরুল আলমসহ কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির উৎপাদিত মাল্টি অ্যামাইনোসিভ জাতের মাদক পাচারের মাধ্যমে সে দেশের জনস্বাস্থ্য ধ্বংস করছে।
এনিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকান অঞ্চল ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মেক্সিকোর এ চিঠি সম্পর্কে তথ্য দিতে রাজী হননি। দূতাবাসের মাধ্যমে আসা এ ধরনের অভিযোগের কোন তথ্য মন্ত্রণালয় সংরক্ষণ করে না বলেই তিনি জানান।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, যখনই কোনো চিঠি বা অভিযোগ অন্য রাষ্ট্র থেকে আসে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এদিকে সূত্র জানিয়েছে, মেক্সিকান সরকারের অভিযোগটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে।
অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট উপপরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদার এ বিষয়ে বলেন, মেক্সিকান সরকারের পাঠানো তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে- ফখরুল আলম নামের এক ব্যক্তির পাঠানো কুরিয়ার পার্সেলের মাধ্যমে জেনারেল ফার্মার মাল্টি অ্যামাইনোসিভ মেক্সিকোতে যেতো।
ইমপেক্স কুরিয়ারের মাধ্যমে এ পার্সেল প্রথমে যেতো সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকে ফেডেক্স কুরিয়ার সেই পার্সেল পৌঁছে দিতো মেক্সিকোতে।
কুরিয়ারের স্লিপ অনুযায়ী ফখরুল আলমের মোবাইল নাম্বার-০১৭১৫৩১২২৯৭।
সূত্র জানায় ওই নম্বর ধরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ফখরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তিনি এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে অনিহা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে তিনি পুলিশকে সহায়তা করছেন জানিয়ে বলেন, সে কারণেই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাথে কথা বলবেন না বলে জানান।
এদিকে, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তদন্তে দেখা যায়, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালের ঔষধ উৎপাদনের অনুমোদিত তালিকায় মাল্টি অ্যামাইনোসিভ নামের ঔষধের উল্লেখ নেই। এমনকি কোম্পানিটি এ ঔষধ উৎপাদনের অনুমোদনও নেয়নি। তবে পাওয়ারসল নামে এর কাছাকাছি একটি ওষুধ উৎপাদন করে জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যাল।
মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা প্রধান নজরুল ইসলাম শিকদার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা আমাদের তদন্তের রিপোর্ট মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি। অভিযুক্ত কোম্পানি এ নামে কোন ওষুধ উৎপাদন করে এমন প্রমাণ আমরা পাইনি। কিন্তু দেশে বিপুল পরিমাণে কোকেন আটক হওয়ায় ওষুধ কোম্পানিগুলো সন্দেহের উর্ধে নয়। আমরা তাদের ওপর নজর রাখছি।
নজরুল ইসলাম বলেন, কোকেন কিন্তু আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে ব্যবহার করা হয় না। তাই প্রাথমিক ভাবে বলা যায়, বাংলাদেশ থেকে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের উদ্দেশেই কোকেন জাতীয় দ্রব্য পাচারকারীরা আনছে। আর এই মাদক ব্যবহার করে নেশাজাতীয় ঔষধ বানানোও অবাস্তব নয়।
অন্যদিকে অন্য একটি দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করেছে, দেশের ওষুধ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক কোম্পানি সিউডোফ্রিডিন নামক একটি কাঁচামাল বৈধ ভাবেই আমদানি করছে বিভিন্ন ব্যাথানাশক তৈরির জন্য। এই কাচাঁমাল বিভিন্ন ভয়ঙ্কর মাদক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। অসাধু কিছু কোম্পানির বিরুদ্ধে এই কাঁচামাল মাদক উৎপাদনবারীদের কাছে সরবরাহের অভিযোগ আছে। এমন কয়েকটি কোম্পোনির ওপর নজরদারীও রয়েছে।
এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজেদের দায়িত্বেই বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানি করে। কিন্তু মেক্সিকো থেকে যে ধরনের অভিযোগ এসেছে তাতে ওষুধ কোম্পানিগুলোর সুনাম এবং বাজার হুমকির মুখে পড়েছে। পাচারকারীরা হয়তো কোনও না কোনও কোম্পানির নাম ব্যবহার করে বিদেশে মাদক পাঠাচ্ছে। এটা আশঙ্কার কথা।