বগুড়ায় ৩০ গ্রাম প্লাবিত: খাবার পানি সংকট

imageবগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। যমুনা নদী সংলগ্ন সারিয়াকান্দি ও ধূনট উপজেলার তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।
১৬হাজার হেক্টরের বেশী ফসলি জমি পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি আর শুকনো খাবারের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাশাইশা ইউনিয়নের ঘুঘুমারি, শেখপাড়া, কুতুবপুর ইউনিয়নের বয়রাকান্দি, ধলাকান্দি, কামালপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়া, ইছামারি, রহদহ, গোদাখালী, ধূনট উপজেলার ভান্ডারবারি ইউনিয়নের উত্তর শহরাবাড়ি, দক্ষিণ শহরাবাড়ি, শিমুলবাড়ি, রাধানগর, বৈশাখী বথুয়াভিটা, বানিয়াজান, কৈয়াগাড়ি, রঘুনাথপুর, ভুততবাড়ি, পুকুরিয়া, মাধবডাঙ্গাসহ ৩০টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
এসব অঞ্চলের তিন হাজার পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন। অর্ধাহারে মানবেতর দিন কাটছে এখানকার মানুষদের। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকটও।
বন্যাকবলিত বাসিন্দা মরিয়ম বেগম (৪৪) জানান, বন্যার পানিতে সব কিছু ভেসে গেছে। তিনদিন ধরে পেট ভরে কিছুই খেতে পারেননি। এক মাত্র দুই বছরের শিশু সন্তানকেও কিছু খাওয়াতে পারছেন না।
আব্দুল হামিদ নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৫ দফা নদীর পানিতে সব হারালাম। এখন আমার পরিবার নিয়ে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। না খেয়ে নদী পারেই মরতে বসেছি।’
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম জানান, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পানিবন্দি মানুষদের জন্য ১০ মেট্রিক টন চালসহ শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পানিতে সারিয়াকান্দির ১৬৬০ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। কাজলা, কর্নিবাড়ি, বোহাইল, কামলপুর, চন্দনবাইশা, কুতুবপুর চালুয়াবাড়ি, হাটশেরপুর ও সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের ৬৫০ হেক্টর জমির আউশ ধান, ৪০ হেক্টর জমির মাশকালাই, ৮৭৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৬০ হেক্টর জমির বীজতলা, ৩৫ হেক্টর জমির শাক-শবজি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুজ্জামন জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যবহত থাকালে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।
সারিয়াকান্দি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল মোতালিব রাইজিংবিডিকে জানান, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণেই যমুনার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে বড় ধরনের বন্যার আশংকা করছেন তিনি।
এদিকে বন্যাকবলিত ৪৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *