ধর্ষণের পর অপবাদ দিয়ে এবার কিশোরীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

রাজবাড়ীতে চাচার বাড়িতে বেড়াতে এসে চাচীর প্ররোচণায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী। ধর্ষণের পর ওই কিশোরীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় চুল ধরে বেধড়ক মারধর করে গরু বাঁধার দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। রাজবাড়ী জেলা সদরের খানগঞ্জ ইউনিয়নের বেলগাছীর খোশবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে রবিবার সদর থানা পুলিশ কিশোরীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। রাতে মেয়েটি বাদী হয়ে চাচা, চাচী ও অজ্ঞাতপরিচয় ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পুলিশ মেয়েটির চাচা হোসেন আলী মোল্লা ও চাচী হাজেরা বেগমকে আটক করেছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলা সদরের খানগঞ্জ ইউনিয়নের বেলগাছীর খোশবাড়ি গ্রামে দরিদ্র রিকশাচালক চাচা হোসেন আলী মোল্লার বাড়িতে বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) পাবনা থেকে বেড়াতে আসে মেয়েটি। চাচা ঢাকায় রিকশা চালান। এ কারণে বাড়িতে থাকা চাচী হাজেরা বেগম এলাকার বখাটে যুবককে প্ররোচণা দিয়ে তাকে ধর্ষণ করায়— অভিযোগ ভাতিজীর। নির্যাতিতা মেয়েটি বলেন, ‘পাবনা জেলার দয়াল নগর থেকে আমি রাজবাড়ী জেলা সদরের খানগঞ্জ ইউনিয়নের বেলগাছীর খোশবাড়ী গ্রামে চাচা হোসেন আলীর বাড়িতে বেড়াতে আসি। চাচা ঢাকায় থাকার কারণে বাড়ি ফাঁকা ছিল। এই সুযোগে চাচী হাজেরা বেগম একজন লোককে বাড়িতে ডেকে আনে। চাচী লোকটিকে রেখে বাইরে চলে যায়। লোকটি আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ ঘটনাটি জানাজানি হলে চাচা হোসেন আলী ঢাকা থেকে রাজবাড়ীতে এসে ভাতিজীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গ্রামবাসীর সামনে চুলের মুঠি ধরে থাপ্পড়, কিল-ঘুষিসহ বেধড়ক মারপিট করে। এরপর মেয়েটিকে বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে একটি গাছের সঙ্গে গরুর দড়ি দিয়ে অভুক্ত অবস্থায় বেঁধে রাখে। চাচা হোসেন আলী মণ্ডল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গ্রামের মেম্বার বলেছে, ওকে দেশের বাড়িতে পাঠাও, ওকে বাড়িতে রাখবে না। এরপর আমি মেয়েটির বাবাকে ফোনে খবর দিলে সে বলে, ওকে বেঁধে রাখো যাতে সে কোথাও পালিয়ে না যায়। তাই মেয়েটিকে আমি বেঁধে রাখি।’ বিষয়টি জানাজানি হলে ফুঁসে ওঠেন এলাকাবাসী। স্থানীয় মো. মাসুদ শেখ বলেন, আমাদের এলাকায় এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। প্রকৃত দোষীদের সঠিক বিচার করতে হবে। মেয়েটিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা ঠিক হয়নি। তাকে অন্য কোথাও বসিয়ে পাহারা দিয়ে রাখা যেতো। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। মো. আব্দুল মজিদ বলেন, বেলগাছী যাওয়ার পথে দেখতে পাই, মেয়েটিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার দাবি করেন তিনি। স্থানীয় জাহানারা বেগম বলেন, মেয়েটিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে— এটা ঠিক কাজ না। যে ছেলেটি মেয়েটিকে অত্যাচার করেছে তারও বিচার হওয়া দরকার। ভ্যানচালক আব্দুল মালেক বলেন, সকালে বাড়ির উপরে হোসেন আলী মেয়েটির চুলের মুঠি ধরে থাপ্পড়, কিল-ঘুষিসহ বেধড়ক মারধর করে। পরে তকে গরু বাঁধার দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। মেয়েটির উপর এমন পাশবিক নির্যাতনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান খানগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাহার হোসেন তকদির। তিনি বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক, মধ্যযুগীয় বর্বরতার মতো। অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। গ্রামের মেম্বার ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শোনার পর মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। রবিবার রাতে মেয়েটি বাদী হয়ে তার চাচা-চাচী ও অজ্ঞাতপরিচয় ধর্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। তিনি আরও বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মেয়েটির চাচা হোসেন আলী মোল্লা ও চাচী হাজেরা বেগমকে আটক করেছে। তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন ওসি শহীদুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *