কুমিল্লায় ৮৭ খুনসহ সাড়ে তিন হাজার অপরাধের ঘটনায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ||

imageরাজনৈতিক, সামাজিক অস্থিরতা ও অবক্ষয়ের কারণে কুমিল্লায় অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সাত মাসে কুমিল্লায় ৮৭ খুনসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার অপরাধের ঘটনায় উদ্বিগ্ন আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, পারিবারিক কলহ, যৌতুক এবং মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার নিয়েও অহরহ ঘটছে খুনসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধের ঘটনা। এ বছরের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত কুমিল্লার ষোল উপজেলায় ৮৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জুনে বিভিন্ন ঘটনায় ১৮ জন খুন হয়েছেন। অপরদিকে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৮৫টি। এর মধ্যে জুনে নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনার শিকার হয়েছে ৬৪ জন। গত সাত মাসে উপজেলাভিত্তিক সবচেয়ে বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানাধীন সদর ও মুরাদনগর উপজেলায়। এ দু’টি উপজেলায় ৯টি করে খুনের ঘটনা ঘটেছে। খুনের ঘটনায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সদর দক্ষিণ, চৌদ্দগ্রাম ও দাউদকান্দি উপজেলা। এ তিনটিতে ৮টি করে খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত ১১ এপ্রিল দুপুরে একই দলের প্রতিপক্ষের হাতে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম খুনের ঘটনাটি ছিল লোমহর্ষক। যা গোটা জেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। কুমিল্লায় গত সাত মাসে খুন, নারী-শিশু নির্যাতন ছাড়াও অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, অস্ত্র, মাদক, বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন অপরাধের মোট ৩ হাজার ৪৩৫টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিও বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। কুমিল্লার বিশিষ্টজনরা তাদের অভিমত পোষণ করে বলেছেন, কুমিল্লায় সাম্প্রতিক সময়ে যেসব খুন হয়েছে তার অধিকাংশই ঘটেছে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার কারণে। এসব অস্থিরতা কমলে সব ধরনের অপরাধ প্রবণতাও কমে আসবে। আর এজন্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ও সমাজে বসবাসকারী একে অন্যের প্রতি সহনশীল হতে হবে এবং সম্পর্কের উত্তরণ ঘটাতে হবে। এদিকে কুমিল্লায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। কুমিল্লার ষোল উপজেলায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে গত সাত মাসে থানাগুলোতে পৌনে চারশ’র বেশি মামলা হয়েছে। নারী-শিশু নির্যাতনের সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা সদর উপজেলার কোতোয়ালি থানাধীন এলাকায়। গত সাত মাসে সদরে নারী-শিশু নির্যাতনের ৬২টি ঘটনা ঘটেছে। আর চৌদ্দগ্রামে ৪৪টি ও বুড়িচংয়ে ৪০টি ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও অন্যান্য উপজেলায় নারী-শিশু নির্যাতনের ১০ থেকে ৩০টিরও বেশি ঘটনা ঘটেছে। থানায় রেকর্ডকৃত ওইসব মামলা ছাড়াও গত সাত মাসে ব্লাস্ট কুমিল্লা ইউনিটে নারী-শিশু নির্যাতন, যৌতুক সংক্রান্ত আদালতে ৬৯টি মামলা হয়েছে। অপরদিকে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলা জটে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ট্রাইব্যুনালে চার সহ¯্রাধিক মামলার বিচার নিষ্পত্তিতে পার হচ্ছে বছরের পর বছর। সমাজবিজ্ঞানী, আইনজীবী ও আইনি সহায়তা সংস্থার কর্মীদের মতে, মামলার তদন্ত কাজের ধীরগতি, বিচারিক কাজের দীর্ঘসূত্রতা ও অপরাধীরা নানাভাবে মামলা থেকে পার পেয়ে যাওয়া বা তাদের কঠোর সাজা না হওয়ায় সমাজে খুন, নারী-শিশু নির্যাতন, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।

৩ thoughts on “কুমিল্লায় ৮৭ খুনসহ সাড়ে তিন হাজার অপরাধের ঘটনায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ||

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *