সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) প্রধান প্রকৌশলী মো. ফিরোজ ইকবাল। অবৈধ উপায়ে অর্জিত নামে বেনামে দেশ-বিদেশে শত কোটি টাকারও বেশি সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। রাজধানীর ধানমন্ডি, বেইলী রোড, গুলশান ও বারিধারায় রয়েছে ফ্ল্যাট, রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে রয়েছে প্লট, নরসিংদীর শিবপুর এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিপুল বিত্ত-বৈভব।
এছাড়াও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে তার নগদ অর্থ। তার এই সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইত্যেমধ্যে তার অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে দুর্নীত বিরোধী এ প্রতিষ্ঠানটি । তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদকের উপ-পরিচালক হামিদুল হাসান। অনুসন্ধানের তদারকি করছেন দুদকের পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১) মোহাম্মদ বেলাল হোসেন। এক বৈঠকে তাদেরকে এই দায়িত্ব দেয় কমিশন। চলতি বছরের ২১ জুন কমিশনে এ অভিযোগ আসে। কমিশন তা প্রাথমিক সোর্সের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে মো. ফিরোজ ইকবালকে নথিপত্রসহ তলব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
দুদক সূত্র জানায়, সওজের প্রধান প্রকৌশলী ফিরোজ ইকবাল গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিপুল বিত্ত-বৈভব। রাজধানীর ধানমন্ডি পুরাতন ৩২ নম্বর সড়ক (নতুন-১১ নম্বর), বাড়ি নং-২২/এ, এএনজেড-সুগন্ধার দোতলায় রয়েছে বিশাল ফ্ল্যাট। ঢাকার বেইলী রোডেও রয়েছে ফ্ল্যাট। রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে রয়েছে প্লট। এক ছেলে ও এক মেয়েকে যথাক্রমে আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করাচ্ছেন।প্রকৌশলী ফিরোজ ইকবাল ১৯৮১ সালে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করার পর ১৯৮৩ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি নেন। ২০০৪ সালের ৫ জুলাই তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পান।
এ সময়ের মধ্যে তিনি মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, মাগুরা, ঝিনাইদহ, মানিকগঞ্জে বিভিন্ন পদে চাকরি করেন। সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি ঠিকাদার এবং অধীনস্থ প্রকৌশলীদের কাছ থেকে কমিশন, ঘুষ ও বিধি বহির্ভূতভাবে আর্থিক সুবিধাদি গ্রহণ করেন। এভাবে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থে তিনি দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। বর্তমানে তিনি নামে-বেনামে শত কোটি টাকারও বেশি মালিক। গত বছরের ২৪ আগস্ট প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে পড়েন। সম্পদের লোভের মোহ তার কাটছে না।
দুদক সূত্র আরো জানায়, মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতী (দাউদকান্দি) সেতু দুটির মেরামত ও সংস্কারের জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ১৪৯ কোটি টাকায় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। এ প্রকল্পেরও অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত ফিরোজ ইকবাল। দেশের ৬৪ জেলায় কালভার্ট নির্মাণ, প্রতিরক্ষাবাঁধ ও সড়ক সংস্কার-সংক্রান্ত ৭৬৮টি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে দুদকে। এই অভিযোগে ফিরোজ ইকবালের বিরুদ্ধে রয়েছে আর্থিক অনিয়ম। এর আগে দেশের ৬৪ জেলায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ বিভাগের ছয় শতাধিক প্রকল্প চিহ্নিত করে আর্থিক অনিয়ম তদন্তে নেমেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন।
ঢাকা বিভাগের ছয়টি জেলার কালভার্ট, প্রতিরক্ষা বাঁধ ও সড়ক সংস্কারের ৭২টি প্রকল্প তদন্ত করে ২৪টিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব প্রকল্পে ফিরোজ ইকবালসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় একশ ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। তবে তৎকালীন উপ-পরিচালক মো. বেলাল হোসেনসহ অনুসন্ধান টিম বিষয়টি ধামাচাপা দেয়।অনুসন্ধান সূত্র জানায়, বিষয়গুলো অভিযোগ আকারে দুদকে এলে বাছাই কমিটি অনুসন্ধানের পক্ষে মত দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন অনুসন্ধানের লক্ষ্যে কর্মকর্তা নিয়োগ করে।
সূত্র জানায়, সওজের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এরআগেও দুদকে এসেছিল। এ অভিযোগের অনুসন্ধান করে সত্যতাও পাওয়া গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুদকের ঊর্ধ্বতন হস্তক্ষেপে অনুসন্ধান বন্ধ হয়ে যায়। সওজের প্রধান প্রকৌশলী মো. ফিরোজ ইকবালের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার পর পরই অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে দুদকের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিডিয়ায় বিষয়টি না আসার জন্য সতর্ক করেছেন বলে জানা যায়। এই বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই সতর্ক করছেন বলে মনে করেন সংশ্লিস্ট সূত্র। সুত্র ইনকিলাব
এআর
Roman Sinjoy liked this on Facebook.
Showkat Hossain liked this on Facebook.
Moin Ahmed liked this on Facebook.