২০ দলীয় জোটের গুরুত্বপূর্ণ প্রেস ব্রিফিং

বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয়, ১৩ আগষ্ট ২০১৫ বৃহস্পতিবার, সকাল ১১.০০ টায় ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ১ প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়… তার হুবহু পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হল

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সংবাদপত্র, সংবাদমাধ্যম ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী ভাই ও বোনেরা আসসালামু আলাইকুম। ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আয়োজিত এই প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
গতরাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে ২০ দলীয় জোটের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সকল শরিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় অনুষ্ঠিত আলোচনার প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক কিছু বিষয়ে ২০ দলের অবস্থান ও বক্তব্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।
সভার শুরুতেই গণতন্ত্র পূণ:প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ২০ দলীয় জোটের যে সব নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ শহীদ হয়েছেন তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানানো হয়। যারা সরকারি বিভিন্ন বাহিনী কিম্বা সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে আহত ও পঙ্গু হয়েছেন তাঁদের সুচিকিৎসা এবং মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ ও হয়রানীর শিকার সহকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়।
সভায় মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্র পুণ:রুদ্ধার আন্দোলনের এই সব বীর সেনানীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

প্রিয় সাংবদিক বন্ধুগণ,
আপনাদেরই সবার চেয়ে বেশী জানার কথা যে দেশ আজ কি ভয়াবহ সংকটে পড়েছে।
গুম, খুন, সন্ত্রাস, দখল, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ জনগণকে হয়রানী, গ্রেফতার বাণিজ্য ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
শিশু হত্যা ও নারী নির্যাতন এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে মনেই হয় না যে আমরা কোন সভ্য দেশে বাস করছি এবং দেশে কোন সরকার আছে। একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটছে। দেশের কোন নাগরিকই আজ নিরাপদ নয়। এমন কি মায়ের পেটে শিশুও নয়। অথচ সরকারের দাবী দেশের মানুষ নাকি শান্তিতে আছে।
২০ দল নারী নির্যাতন ও শিশু হত্যাসহ সব হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছে।
সর্বগ্রাসী দুর্নীতি আজ দেশকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিয়েছে। সম্প্রতি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু কর্তৃক সরকারি বেসিক ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা পত্রিকায় পড়ে জনগণ বিষ্মিত ও ক্ষুব্ধ। তারা জানতে চায় কে এই শেখ আব্দুল হাই এবং কার প্রশ্রয়ে তিনি নির্বিবাদে দীর্ঘ দিন ধরে লুটপাট চালাতে পারলেন। এর আগে শেয়ার বাজার এবং রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংক গুলো যারা লুট করেছেন তাদেরও বিচার হয়নি এজন্যই যে তারাও সরকারি দল- জোটের নেতা-কর্মী এবং সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই এসব লুট পাটের ঘটনা ঘটেছে। ২০ দল সব লুটপাটের বিচার চায়। দোষীদের শাস্তি চায়।
সরকারি দলের লোকেরা সব কিছু দখল করে নিচ্ছে। খাল, বিল, নদী-নালা, হাট-বাজার, নৌ বন্দর, বাস টার্মিনাল এবং ব্যবসা বাণিজ্য দখলের পর এবার তারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর, জমি ও ব্যবসা দখল করা শুরু করেছে। এই অপকর্মের মাত্রা এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে সরকারি দলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ব্যক্তিরাও আজ প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রাণগোপাল দত্ত এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নেতা বাবু রানা দাসগুপ্ত তাদের অন্যতম। হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন এই সর্বগ্রাসী দখল প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার। ২০ দল সরকারি দলের সব কিছু গিলে খাওয়ার রাজনীতি বন্ধের দাবী জানাচ্ছে।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলে থাকতেও এদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসাবে প্রমাণ ও প্রচারের অপচেষ্টা চালিয়ে ছিল। এখনও সেই জুজুর ভয় দেখিয়ে তারা মুক্ত বিশ্বের সহানুভ‚তি আকৃষ্টের লক্ষ্যে কাজ করছে। আর সে জন্যই গুম, খুন, শিশু হত্যা, নারী নির্যাতন, ব্লগার খুনের মত ঘটনা নির্বিঘেœ বেড়ে চলেছে। দায়ীরা গ্রেফতার হচ্ছে না। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীসহ কোন হত্যারই বিচার হচ্ছে না। সরকারি বাহিনী কতৃক পেট্রোল বোমায় নীরিহ মানুষ মারার খবরও ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশকে জঙ্গী কিম্বা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানানোর সরকারি চক্রান্ত সম্পর্কে সজাগ থাকার এবং তা প্রতিহত করার জন্য ২০ দল দেশবাসীর প্রতি আআহবান জানাচ্ছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
দেশে চলমান গুম, খুন, মামলা, হামলা, দখলের রাজনীতি বন্ধ, জনগণের মৌলিক মানবাধিকার ও অর্থনৈতিক সংকট মুক্তি আজ সময়ের দাবী। ২০ দল মনে করে যে, জনগণের নির্বাচিত এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকারই শুধু তা নিশ্চিত করতে পারে। আর সে কারণেই ২০ দল নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও সকালের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দিতামূলক নির্বাচন চায়। দেশের জনগণ এই দাবীতে ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু সরকার সীমাহীন দমন-নিপীড়ন চালিয়ে জনগণের আকাক্সখাকে ব্যর্থ করে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। সারা বিশ্বে এমন কি আমাদের দেশের ইতিহাসও সাক্ষ্য দেয়, নির্যাতন-নিপীড়ন করে জনগণের ন্যয়সঙ্গত আকাক্সখা পূরনের আন্দোলন ব্যর্থ করা যায় না। সত্যিকারের গণতন্ত্র ও নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সফলতা তই শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
২০ দলীয় জোট হত্যা, বিদ্বেষ, প্রতিশোধ কিম্বা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করেনা। লাখো শহীদের রক্তার্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ শান্তি, সম্প্রীতি ও সুশৃংখল জীবন এবং অব্যহত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি চায়। ২০ দল দল-মত নির্বিশেষে সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগীতায় জনগণের সেই আকাক্সখা সফল করতে চায়। সেই লক্ষ্যেই ২০ দল শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যহত রাখবে ইনশাআল্লাহ।

সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
দেশের বিরাট অংশ আজ বন্যা দূর্গত। অসহায় এই বন্যা দুর্গত জনগণ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রীর অভাবে বিপন্ন জীবন যাপন করছে। এ ব্যাপারে সরকারী উদ্যোগ ও সহায়তা একেবারেই অপ্রতুল। ২০ দল অবিলম্বে বন্যা দুর্গত জনগণকে পর্যাপ্ত সাহায্য প্রদান এবং তাদের যথাযথ পুনর্বাসনের দাবী জানাচ্ছে। একই সাথে ২০ দল জোটের নেতা-কর্মীদের এবং দেশের সম্পন্ন জনগণকে বন্যাদুর্গত জনগণকে সহায়তা করার আহ্বান জানাচ্ছে।

আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

২০ দলের পক্ষে নজরুল ইসলাম খান সদস্য, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, বিএনপি। উপস্থিত ছিলেন: ২০ দলীয় জোটের শরিক দল সমূহের মহাসচিব/ সাধারন সম্পাদকগণ।

 

 

এ আর

১৪ thoughts on “২০ দলীয় জোটের গুরুত্বপূর্ণ প্রেস ব্রিফিং

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *