সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, রসুনের মতো নিত্য পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তিন বছর মেয়াদি রপ্তানি উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করেছে সরকার। এসব নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বীজও রপ্তানি করা যাবে না। চাহিদা মেটাতে এসব পণ্যের অনেকটাই আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। এছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদের সঙ্গে পুরাতাত্ত্বিক দুর্লভ বস্তু রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা রাখা হয়েছে নতুন নীতিতে। আজ বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় রপ্তানী নীতি ২০১৫-২০১৮ অনুমোদন দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নতুন রপ্তানি নীতি চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকেই কার্যকর ধরা হবে। রপ্তানী নীতিতে ২০২১ সালের মধ্যে রপ্তানি ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীতের লক্ষ্যমাত্রা রেখে কার্যক্রম নিতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয় ছিল তিন হাজার ৭৬ কোটি ৮০ লাখ (৩০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলার।
রপ্তানি নীতিতে ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা’ ও চার দেশীয় (বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটান) উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানো, বাংলাদেশি পণ্যের ব্র্যান্ডিং, আমদানি বিকল্প শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে রপ্তানি বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এবং রপ্তানিনির্ভর বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এছাড়া রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানি পণ্যের গুণগতমান ও প্রতিযোগী দাম নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে নতুন এই নীতিতে।
নীতিতে বলা হয়েছে, পণ্য ও সেবাখাত ভিত্তিক ‘বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল’ গঠন এবং ই-কমার্স ও ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা করতে হবে।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে উৎপাদন বাড়ানো, বিভিন্ন পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন, বন্দরমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ রপ্তানি অবকাঠামোর উন্নয়ন, পণ্য খালাস পদ্ধতি সহজীকরণ এবং ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রবর্তন করে ব্যবসা ব্যয় কমিয়ে রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতামূলক শক্তি বাড়াতে সহায়ক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নতুন রপ্তানি নীতিতে।
নীতিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ১২টি খাত হলো অধিক মূল্য সংযোজিত তৈরি পোশাক ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, সফটওয়্যার ও আইটি এনাবল সার্ভিসেস ও আইসিটি পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, জাহাজ নির্মাণ, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য, আসবাবপত্র, হোম-টেক্সটাইল ও টেরিটাওয়েল, হোম ফার্নিশিং ও লাগেজ।
রপ্তানি নীতিতে বিশেষ উন্নয়মূলক হিসাবে চিহ্নিত খাতের মধ্যে রয়েছে পাটজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য, সিরামিক পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য (অটো পার্টস ও বাই-সাইকেলসহ), মূল্য সংযোজিত হিমায়িত মৎস্য, পাঁপড়, প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, অমসৃণ হীরা ও জুয়েলারি, পেপার ও পেপার প্রোডাক্টস, রাবার, রেশম সামগ্রী, হস্ত ও কারুপণ্য, লুঙ্গিসহ তাঁত শিল্পজাত পণ্য ও নারিকেলের ছোবড়া।
নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে তেজস্ক্রীয় পদার্থ, মনুষ্য কঙ্কাল ও রক্তের প্লাজমা কিংবা এগুলোর দ্বারা তৈরি সামগ্রী, চিল্ড, হিমায়িত ও প্রক্রিয়াজাত ব্যতীত অন্যান্য চিংড়ি, ছোট আকারের সামুদ্রিক চিংড়ি, বেত, কাঠ ও কাঠের গুঁড়ি, জীবিত বা মৃত সব প্রজাতির ব্যাঙ ও ব্যাঙের পা, কাঁচা ও ওয়েট ব্লু চামড়া ইত্যাদি।
এছাড়া বহিগর্মন শুল্ক বন্দর ছাড়া অন্য কোনো পথে (সাইটিস সার্টিফিকেট ও লাইন্সেস ব্যতীত) কোনো বন্য প্রাণী বা তার অংশ, ট্রফি, প্রাকৃতিক গ্যাস উদ্ভূত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য (যেমন- ন্যাপথা, ফরনেস অয়েল, লুব্রিক্যান্ট অয়েল, বিটুমিন, কনডেনসেট, এমটিটি, এমএস) রপ্তানি করা যাবে না।
পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা রাখা হলেও পিএসসির আওতায় বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান চুক্তি মোতাবেক তাদের অংশের পেট্রোলিয়াম ও এলএনজি রপ্তানি করতে পারবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের কেউ বিদেশে যাওয়ার সময় ব্যক্তিগত মালামালের বাইরে রপ্তানি নিষিদ্ধ ও শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানিযোগ্য পণ্য ছাড়া বাংলাদেশের তৈরি ২০০ ডলারের সমমূল্যের পণ্য সঙ্গে নিতে পারবেন।
কাফকো ছাড়া অন্য কারখানায় প্রস্তুতকৃত ইউরিয়া সার; বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, গান, নাটক, সিনেমা, অডিও-ভিডিও এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উদ্ভূত পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য শর্তসাপেক্ষে রপ্তানি করা যাবে। এছাড়া রাসায়নিক অস্ত্র, চিনি, ইলিশ মাছ, সুগন্ধি চাল, কুমিরের চামড়া ও মাংস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে রপ্তানির সুযোগ দিয়েছে সরকার।
Babu Macanic liked this on Facebook.
Abu Bakar Sohel liked this on Facebook.
Noman Hossain liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.
Ariful Islam Jony liked this on Facebook.
Abdul Kuddus Mizi liked this on Facebook.